প্রবাসের সংবাদ

মৃত্যু ৬০, বেকার ২০ হাজারের উপরে, বিপর্যস্ত বাংলাদেশি ক্যাবিদের জীবন


করোনাকালের নিউইয়র্ক

মৃত্যু ৬০, বেকার ২০ হাজারের উপরে, বিপর্যস্ত বাংলাদেশি ক্যাবিদের জীবন

হেলাল উদ্দীন রানা, যুক্তরাষ্ট্র থেকে || যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর। পৃথিবীর ব্যস্ততম মহানগরী।  নিউইয়র্ককে বলা হয় বিশ্বের রাজধানী। এখানে রাতদিন সমান। একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে-নিউইয়র্ক নেভার স্লিপ। এই শহরকে যারা ২৪ ঘণ্টা জাগিয়ে রাখেন, সচল রাখেন গতিশীলতার চাকা তারা আর কেউ নয়-ক্যাবি। অথাৎ ট্যাক্সিচালক। কোভিডের ভয়াল থাবা কেড়ে নিয়েছে এই পেশায় থাকা ৬০ জন অভিবাসী বাংলাদেশির প্রাণ।

এইসব অবহেলিত মানুষই একমাত্র পেশাজীবী গোষ্ঠী যারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখে আসছেন। গড়ে জন প্রতি ১শ’ ডলার হিসেবে প্রতিদিন তিন মিলিয়ন মার্কিন ডলার আসতো বাংলাদেশিদের ঘরে।

এই অর্থের সিংহভাগ বাংলাদেশের জিডিপিতে যোগ হতো।

লকডাউনের কঠিন সময়ে জীবন বাজি রেখে ট্যাক্সি চালকরা সচল রেখেছেন নগরীকে। যখন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সাবওয়ে(আন্ডার গ্রাউন্ড ট্রেন) বাসসহ সকল সার্ভিস বন্ধ ছিল, তারাই পরিবহন করেছেন ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিকসহ ফ্রন্ট লাইনের সব কর্মীকে। করোনার সংকটকালের মধ্যেই ক্যাবিরা মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন । পেয়েছেন ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কার কাজের স্বীকৃতি।

এই শিল্পে জড়িত প্রায় ৩০ হাজার বংলাদেশির মধ্যে  ২০ হাজার ড্রাইভার বেকার হয়ে পড়েছেন কোভিডের কারণে। মরণব্যাধি করোনার ভয়াল থাবা এদের সাজানো জীবন তছনছ করে দিয়েছে। যেখানে একজন ট্যাক্সিচালক গড়ে প্রতিদিন ৩শ’ ডলার আয় করেছেন, তাদের সংসারে চলছে এখন আর্থিক অনটন। অথচ ট্যাক্সিচালকদের অর্থে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির মসজিদ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সকল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। এরাই ছিলেন এইসব কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি।

কোভিড অতিমারি শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ক্যাবিরা। নিউইয়র্কে ট্যাক্সির যাত্রী পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটে মানুষজনের চলাচল সীমিত। ব্যবসা বাণিজ্য অচল, দোকানপাটে  ঝুলছে তালা। লোকের ভিড়ে গিজগিজ করা নিউইয়র্কে নেই আগের মতো পর্যটকদের আনাগোনা। এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইটও বন্ধ রয়েছে। যেখানে জেএফকে এবং লার্গোডিয়া এই দুটি বিমান বন্দরে ওঠানামা করতো হাজার খানেক ফ্লাইট প্রতিদিন। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এয়ারপোর্ট জন এফ কেনেডি থেকে প্রতিদিন আট শতাধিক ফ্লাইট পরিচালিত হতো। এরাইভ্যাল ডিপার্চার মিলিয়ে শতাধিক গেট রয়েছে জেএফকেতে। লার্গোডিয়ায় চলাচল করতো  প্রায়  দু’ শ ফ্লাইট। ৪১ টি গন্তব্যে যাতায়াত করতো বিমান। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নিউইয়র্কের এই দুই বিমান বন্দর দিয়ে কেবল ২০১৭ সালে প্রায় নয় কোটির ওপরে যাত্রী চলাচল করেছেন।

এরমধ্যে জনএফ কেনেডি দিয়ে ছয় কোটির  বেশি  এবং লার্গোডিয়ার যাত্রী আসা-যাওয়ার সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। লার্গোডিয়া হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বিমান বন্দর। এখানে কোনো আন্তর্জাতিক রুটের উড়ান ওঠানামা করে না।

ফলে যাত্রী সংখ্যা এখন তলানীতে ঠেকেছে। অথচ প্রায় ৯ লক্ষ যাত্রী প্রতিদিন পরিবহন করতেন ক্যাবিরা করোনার আগে। এই সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশই হ্রাস পেয়েছে এই সময়ে। এখন ট্যাক্সির লিজ দেয়া মুশকিল হয়ে পড়ে ড্রাইভারদের জন্য । নিউইয়র্কের গ্যারেজগুলোতে পড়ে আছে সারি দিয়ে হাজার-হাজার ক্যাব। আগে ইয়েলো ক্যাব দুইজনে দুই শিফট ভাগ করে চালাতেন। সপ্তাহে লিজ ছিল ১৫শ’ ডলার। এখন ৪শ’ ডলার লিজেও কেউ গাড়ি নিতে রাজি নয়। বর্তমানে ১৫ ঘণ্টা কাজ করেও ১শ’ ডলার রোজগার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নিউইয়র্ক মহানগরীতে প্রায় দুই লক্ষ লোক এই শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি অভিবাসী চালক আছেন ৩০ হাজারের  বেশি।

নিউইয়র্কে ঢাকা শহরের রিকশার চেয়ে ট্যাক্সির সংখ্যা কম নয়। এই মহানগরীতে এক লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি ট্যাক্সি চলাচল করে থাকে। এখানে যে কত ধরনের এবং কত কোম্পানির ট্যাক্সি রয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে,  ইয়েলো ক্যাব, গ্রীন ক্যাব, ব্ল্যাক ক্যাব, লিভারী, লিমোজিন সার্ভিস ইত্যাদি। এর বাইরে রয়েছে আ্যপ ভিত্তিক ক্যাব উবার, লিফটও ভিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রে ট্যাক্সি চালকদের  প্যারেন্ট সংগঠন ট্যাক্সি ইউনিয়ন নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওায়ার্কার আ্যলায়েন্সের লেবার অর্গানাইজার মোঃ  টিপু সুলতান দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, করোনাকালে এই  দুঃসময়ে ট্যাক্সি চালকরা কী কষ্টে আছেন তা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তারা যা কামাই করেছেন সবকিছু পাঠিয়ে দিয়েছেন দেশে। জায়গা-জমি, বাসা-বাড়ি, সহায় সম্পত্তি যা কিছু করেছেন সবই স্বদেশে, দেশের জন্য। এই বিপদের সময়ে এসবের কোনো কিছুই কাজে আসছে না। হাতে সামান্য সঞ্চয় যেটুকু ছিল তাও ফুরিয়ে আসছে।

পরিবার, পরিজন নিয়ে দুঃসহ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। মাসের শেষে ঘর ভাড়া পরিশোধ করতে  পারছেন না অনেকে। তাদের দুঃখ, দুর্দশা চোখে না দেখলে উপলব্ধি করা যাবে না, যোগ করেন টিপু সুলতান।  দীর্ঘ চার বছর আন্দোলন সংগ্রাম করে ২০১৮ সালে ট্যাক্সি অ্যালায়েন্স সিটিতে উবারের নতুন গাড়ি নামানো বন্ধ করতে সক্ষম হয়। নগর কর্তৃপক্ষ

এ নিয়ে একটি আইন প্রণয়ন করে। ফলে উবারের নতুন গাড়ির অনুমোদন দেয়া বন্ধ হয়ে  যায় ।

মোঃ টিপু সুলতান জানান, মহনগরে উবার, লিফট এদের গাড়ি রয়েছে লক্ষাধিক। ইয়েলো ক্যাব প্রায় ১৪ হাজার। গ্রীন ক্যাব, ব্ল্যাক ক্যাব, লিভারী ও লিমোজিন মিলিয়ে হবে আরো ১৫ হাজারের উপরে। চালকদের একমাত্র ইউনিয়ন ন্যাশনাল ট্যাক্সি ওায়ার্কার অ্যালায়েন্স নিরলসভাবে কাজ করছে ড্রাইভারদের স্বার্থে। ফাইট করে যাচ্ছে তাদের ন্যায্য দাবী দাওয়া আদায়ের জন্য। ফেডারেল, রাজ্য সরকার ও নিউইয়র্কের ট্যাক্সি ক্যাবের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ট্যাক্সি লিমোজিন

কমিশনের সাথে নানা দেন-দরবার করছে প্রতিনিয়ত। প্রয়োজনে কোর্টে মামলা মোকদ্দমা ও লড়ে চলেছে এই প্রতিষ্ঠান।

-মানবজমিন


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন