ফিচার্ড লেখালেখি

রাণী এলিজাবেথ দ্য গ্রেট  || সৈয়দ মাসুম 

রাণী এলিজাবেথ দ্য গ্রেট  || সৈয়দ মাসুম 
১৪টি দেশের রাণী তিনি।আনঅফিসিয়ালি কমনওয়েলথভুক্ত ৫৬টি দেশেরই প্রধান।৭০ বছর মায়ের মতো ভালোবাসা দিয়ে আঁকড়ে রেখেছিলেন তাঁর দেশকে। আইন ও প্রথাগত ভাবে ব্রিটিশ রাজ পরিবারের কেউ প্রকাশ্যে হাসতে কিংবা কাঁদতে না পারলেও জন্মদিনের কেক যখন রাণী কেটে একটু মুচকি হাসতেন মনে হতো সারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য যেন হাসছে। 
৫/১০ বছর ক্ষমতায় থাকলে যে কোন শাসককেই সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় কিন্তু এই মহিয়সী ছিলেন শাসন ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে দীর্ঘ ৭০বছর অনেকটা বিনা সমালোচনায়। 
 উত্থান পতন যুদ্ধ বিগ্রহ গেছে ক্ষমতাকালে দেড় ডজনের মতো প্রধানমন্ত্রী দেশ চালিয়েছেন কারো সাথেই তাঁর কোনদিন মনোমালিন্য হয়নি। 
বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন যে তিনি ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী বিনা পাসপোর্টে দেশে বিদেশে ঘুরতেন ,কেউ কোনদিন এ নিয়ে প্রশ্নও তুলেনি। 
এটি অবশ্যই ঠিক যে উপমহাদেশীয় হিসাবে আমরা কখনও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আর ব্রিটিশ শাসনের ক্ষত ভুলতে পারবো না তবে এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটিশরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলো। ব্রিটিশ মিডিয়ার মাধ্যমেই পৃথিবীর মানুষ পাকিস্তানিদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কথা জানতে পারে। গ্রেট ব্রিটেন আর গ্রেট ব্রিটেনের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে এতটাই সম্পৃক্ত ছিলো যে ইতিহাসবেত্তাদের অনেকেই যুদ্ধকালীন সময়ে দেশের এগার সেক্টরের পাশাপাশি ব্রিটেনকে বলেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বার নম্বর সেক্টর। 
এলিজাবেথ ১৯৫৩সালে ক্ষমতায় আরোহন করেন। ১৯৪৭ সাল থেকেই আমরা ব্রিটিশ শাসনমুক্ত। 
দাদা পৌঢ় দাদার অপরাধ উনার উপর চাপিয়ে দেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত তা আমার বোধগম্য নয়। 
তিনি রাজনীতিতে বড় কোন পরিবর্তন নিয়ে আসতে না পারলেও দেশকে করেছিলেন স্থিতিশীল। ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচের গণতন্ত্রকে অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে করেছেন শক্তিশালী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উত্তাপ কমতে না কমতে তার ক্ষমতা আরোহন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকাটা আশংকা জনক মনে করেছিলেন অনেকেই। সব আশংকার যবনিকাপাত তিনি করেনইনি  দীর্ঘ সত্তর বছর ক্ষমতায় থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন নারী শাসক হওয়ার অর্জন করেছেন গৌরব।  
স্বাধীন হওয়া ব্রিটিশ ঔপোনিবেশিক দেশগুলোর সাথে তৈরী করেছেন এক সুদৃঢ় সম্প্রীতির বন্ধন। পূর্ব পুরুষদের অত্যাচার আর অবিচারে নিষ্পেষিত কওয়েলথভূক্ত দেশগুলো যেখানে তাঁকে ঘৃণা করার কথা সেখানে নিজ কর্মদক্ষতা আর গুণাবলী দ্বারা তাঁদের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছেন সর্বোচ্চ সম্মান। 
সমালোচনা আলোচনা যাই করেন না কেন এই মহিয়সী নারী নিজ কর্মগুণে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। পৃথিবীর ইতিহাসে হাতেগোনা যে ক’জন শাসকের নামের সাথে গ্রেট শব্দটি ব্যবহৃত হয় সেইরূপ রাণী এলিজাবেথ দ্য গ্রেট বলবে আগামীর মানুষ এটি আমার বিশ্বাস।

লেখক :গবেষক ও প্রাবন্ধিক ,যুক্তরাজ্য প্রবাসী কবি। 



সংবাদটি শেয়ার করুন
সংবাদটি শেয়ার করুন