শেষ বয়সে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করেই চলছে বৃদ্ধের সংসার
নরী শব্দকর। শরীরের দিকে তাকালেই বয়সের ছাপ দেখা যায়। ষাট বছর পার করেছেন অনেক আগেই। বয়সের ভারে লাঠি ভর দিয়েই তাঁকে হাঁটতে হয়। লাঠি ভর দিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করছেন তিনি। অনেক চেষ্টা করেছেন একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেতে। কিন্তু ভোটার আইডি কার্ডে একটি ভূলের জন্য নরী শব্দকরের ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড। বয়স্ক ভাতার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছে কয়েকবার অনুরোধ করলেও বয়স হয়নি বলে বার বার ফিরিয়ে দিয়েছেন খালি হাতে। কিন্তু কেউই কার্ডের বয়স সংশোধনের কোন প্রদক্ষেপ নেন নি।
নরী শব্দকর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী শব্দকর সম্প্রদায় লোক। তার বাড়ি সদর ইউনিয়নের উত্তর তিলকপুর গ্রামে। এ গ্রামের মৃত ধনাই শব্দকর ও মৃত সৈয়খ শব্দকরের সন্তান তিনি। ছোট কুঁড়ে ঘরে স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ, নাতি, নাতনি সহ ৬ জনের সংসার। তার আপন কাকাতো ছোট ভাইয়ের বয়স ৭৪বছর। অথচ জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মসাল (১৯৬২) অনুযায়ী নরী শব্দকরের বর্তমান বয়স ৬০ বছর।
স্থানীয় কয়েকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, নরী শব্দকরের বয়স আরও বেশি হবে। ভোটার আইডি কার্ডে বয়স ভূল করেছে। তাঁর ছোট ভাই বয়স্ক ভাতা উপকারভোগী। কিন্তু তিনি বড় হয়েও এখনও ভাতার আওতায় আসেন নি। খুব কষ্টে তিনি দিনযাপন করছেন। কমলগঞ্জকে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা ঘোষনা করা হলেও সংসার চালানোর দায়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করেন তিনি। আর ভিক্ষা করে যা পান তাই দিয়ে তাঁর সংসার চলে। নরী শব্দকরের দাবি, তাঁর বয়স ৮৫ বছর। এই বৃদ্ধ বয়সে তাঁর আক্ষেপ, এখনো তিনি বয়স্ক ভাতার কার্ড পাননি।
দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মিলেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড,শেষ বয়সে ভিক্ষা করেই চলছে বৃদ্ধের সংসার
আলাপকালে অশ্রুসিক্ত নয়নে নরী শব্দকর ‘সিবিএনএ’ কে বলেন, তিনি কয়েকবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের কাছে বয়স্ক ভাতার জন্য গিয়েছেন। ইউপি সদস্যের কাছে নিজের ভোটার আইডি কার্ডের কপি ও ছবিও দিয়েছেন একাধিকবার। তাঁকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেননি কেউই। বয়স হয়নি বলে ফিরিয়ে দিয়েছেন বার বার। এত ঘুরেও ভাতার কার্ড না পেয়ে শেষ বয়সে তিনি হতাশ। তাই এখন আর তাদের (ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার) কাছে যান না, গ্রামে হাটতে হাটতে ভিক্ষা করে যা চাল, টাকা যা পান তা দিয়ে সংসার চালান। নরী শব্দকরের ভিক্ষাবৃত্তি ও ছেলে দিনমজুর নিপেন্দ্র শব্দকরের আয় দিয়ে কোনরকম দুঃখে কষ্টে সংসার চলতো। কিন্তু এখন করোনা ভাইরাসের জন্য কঠোর লকডাউন থাকায় ছেলে নিয়মিত কাজকর্ম করতে পারে না, বিধায় ভিক্ষাবৃত্তির আয়ের উপর ৬ জনের পেটের ক্ষুধা মেটাতে হয়। তিনি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভাতার কার্ডের দাবি জানান।
এ বিষয়ে আলাপ করলে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রুপেন্দ্র সিংহ ‘সিবিএনএ’ কে বলেন, নরী শব্দকরের জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়সে ভূল থাকায় বয়স্ক ভাতার জন্য তাঁর নাম দেওয়া যায় নি। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ইউনিয়নের ভিক্ষাবৃত্তি পেশার মানুষদের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুমোধন হয়ে আসলে হয়ত তাঁর ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হান্নান জানান, নরী শব্দকরের জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়সে সমস্যা ছিল। এ জন্য তাঁর ভাতার কার্ডে নাম দেওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে আলাপকালে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক ‘সিবিএনএ’ কে জানান, পরিচয়পত্রে বয়স কম থাকায় ভাতার জন্য অনলাইনে এন্টি করা যাবে না। যেহেতু প্রকৃত বয়স বেশি সেটি যদি পরিচয়পত্রে সংশোধন করে আনা যায় তাহলে ভাতার ব্যবস্থা করে দিবেন। তাছাড়া নরী শব্দকরের নাম যদি ভিক্ষুক ভাতার তালিকায় থাকে তাহলে লকডাউন খোলার পরপরই তাকে ভাতা প্রদান করা হবে।
এসডি/বিডি
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান