ফিচার্ড মত-মতান্তর

সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধটা আমেরিকা সন্ত্রাসীদের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে 

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

আমেরিকা আফগানিস্তানে হারেনি, হেরেছে আফগান জনগণ

সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধটা আমেরিকা সন্ত্রাসীদের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে 

শিতাংশু গুহ, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, নিউইয়র্ক।। আমেরিকা নাকি আফগানিস্তানে হেরেছে? এ প্রোপাগান্ডা আছে এবং এটি করছে তালেবান সমর্থকরা। তালেবানরা একথা বলছে না, কারণ তারা জানে যে, তারা যা করছে তা সবই পূর্বাহ্নে আমেরিকা অনুমোদিত। কেউ হয়তো কাবুল বিমানবন্দরে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ তুলতে পারেন; ওটা আল-কায়দা’র কাজ। যদিও তালেবান, আল-কায়দা ইত্যাকার জঙ্গী ইসলামী সংগঠনগুলো ভাই-ভাই, একই আদর্শে লড়ছে, তবু ক্ষমতার দ্ধন্ধে এরা একে অপরের শত্রু। যেমন এ মূহুর্তে কাবুলে তালেবান ও হাক্কানী গ্রূপের মধ্যে দ্ধন্ধ স্পষ্ট, এটি সংঘাতে রূপ নিলে আশ্চর্যের কিছু হবেনা।

যুদ্ধে আমেরিকাকে হারানো সম্ভব নয়। তবু কেন প্রচারণা? কারণ ইসলামী জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদ চাঙ্গা রাখতে বা উৎসাহিত করতে এর প্রয়োজন আছে। চীন ও কম্যুনিষ্টরা এই প্রচারণার অংশীদার, কারণ ভেঙ্গে পড়া সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা, বা চিন্তাধারাকে বাঁচিয়ে রাখতে এর বিকল্প নেই! কম্যুনিষ্ট ও ইসলামিষ্টরা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ এবং এ সময়ে বড় শত্রু আমেরিকার বিরুদ্ধে একে অপরের সম্পূরক। এজন্যে চীনের সাথে তালেবানদের সম্পর্ক ভালো। আমেরিকা ও ভারতকে চাপে রাখতে চীন ইসলামী জঙ্গীবাদের পৃষ্টপোষক। কমিউনিষ্টরা ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে, কিন্তু ধর্মীয় মৌলবাদ যদি ইসলামী মৌলবাদ হয়, তাতে তাদের আপত্তি নেই?

কাবুল বিমান বন্দরে সৈন্য প্রত্যাহারকালে অরাজকতা হয়েছে, এজন্যে দায়ী বা ব্যর্থ বাইডেন প্রশাসন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৈন্য প্রত্যাহারের সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ৬ মাসের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন, এবং পরে ৯/১১, ২০২১ মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সকল সৈন্য ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তালেবানদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ৩১শে আগষ্ট ২০২১-র সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা দেন্ এবং তাই করেছেন। এতে পরাজয় আসলো কোত্থেকে? সদ্য মার্কিন ড্রোন আঘাতে আফগানিস্তানে নিরীহ মানুষ মারা গেছে, তালেনাবানরা প্রতিশোধের কথা বলছে না, ‘মিউ মিউ’ করে ক্ষতিপূরণ চাইছে।

বাংলাদেশের মিডিয়ার একাংশ তালেবানদের ‘যোদ্ধা’ বলতে পছন্দ করছেন, তালেবান যোদ্ধা নয়, বরং  জঙ্গী-সন্ত্রাসী? বিন লাদেন-কে যারা ‘হিরো’ ভাবতে পছন্দ করেন, তাঁরা মোটামুটিভাবে তালেবান/মৌলবাদ সমর্থক। মুসলিম বিশ্ব আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য বিদায়ে ‘তৃপ্তির হাসি’ হাসছেন, তাদের এই হাসি মিলিয়ে যেতে খুব বেশি সময় নেবেনা। বাইডেন বলেছেন, আফগান জনগণ কোন পথে যাবেন সেটি তাদের দায়িত্ব, আমাদের নয়। কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে, প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন প্রাণহানির পর এই উপলব্ধি কষ্টার্জিত সত্য, এবং সঠিক, আরো আগে বুঝলে ভালো হতো।  আফগানদের ‘মানুষ’ বানানোর মার্কিন প্রচেষ্টা ব্যর্থ!

এই তো সেদিন আফগান রমণীরা তালেবানদের বরন করে নিয়েছিলো, এবার বিনা যুদ্ধে তালেবানদের কাবুল দখল কি প্রমান করে না যে, আফগানরা প্রায় সবাই ‘তালেবান’? পুরো জনগোষ্ঠী যখন জঙ্গীবাদের সমর্থক, আমেরিকার তখন সেখানে সময় ও অর্থ অপচয়ের দরকার কি? কথায় বলে, ‘জাতি যেমন তাদের শাসকও তেমন’। আফগানরা ১৪শ’ বছর আগের যুগে ফিরে যেতে যায়, তাঁদের যেতে দেয়া হোক। তবে তাদের জানিয়ে দেয়া ভালো যে, আফগান মাটি যদি আবারো সন্ত্রাস রফতানিতে ব্যবহৃত হয়, তবে ভবিষ্যতে পৃথিবীর মানচিত্রে ‘আফগানিস্তান’ বলে কোন দেশ থাকবে না।

দুই জার্মানী তাঁদের মধ্যেকার দেয়াল ভেঙ্গে ফেলেছে, এজন্যে তাদের ‘সন্ত্রাসী’ হতে হয়নি, জঙ্গী হয়ে নিরপরাধ মানুষের গলা কাটতে হয়নি। কারণ, ওরা সভ্য। অনেকে বলেন, তালেবান বা আল-কায়দা আমেরিকার সৃষ্টি? তারা নিজেদের প্রশ্ন করুন, আমেরিকা কেন হিন্দু-বৌদ্ধ বা খৃষ্টানদের দিয়ে জঙ্গী গ্রূপ তৈরী করতে পারেনা? তালেবানরা কোন দেশের যোদ্ধা? তারা কোন দেশ স্বাধীন করেছে? ওদের কৃতিত্ব তো শুধু কাপুরুষের মত ‘আত্মঘাতী’ বোমা মেরে মানুষ মারা এবং নারীর ওপর জবরদস্তী প্রতিষ্ঠা? মানুষে-মানুষে বিভেদ, নারী-পুরুষের বৈষম্য, ধর্মে-ধর্মে ঘৃণা ও বৈরিতা সৃষ্টি, হত্যা, ধর্ষণ এবং গোষ্ঠীতে-গোষ্ঠীতে হানাহানি তালেবানদের একমাত্র কৃতিত্ব।

মোল্লা ওমরের কথা মনে আছে? তিনি ছিলেন আফগান প্রতিনিধি। নাজিবুল্লাহ’র করুন ও বর্বর মৃত্যুই আফগান সভ্যতা। ‘বাহিমিয়ান’ ধ্বংসে বেশিরভাগ আফগান জনগনের সমর্থন ছিলো, অনেকে অংশ নিয়েছিলো, এটিই তাঁদের ‘ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি’। সুতারং, দুই দশক সময় নষ্ট করে হলেও চলে আসা সঠিক সিদ্ধান্ত। অনেকে বলেন, আমেরিকার উচিত হয়নি ইরাক ও আফগানিস্তানে যাওয়া? কথাটা ঠিক নয়, যাওয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত, ইরানও যাওয়া উচিত ছিলো, হয়তো ভবিষ্যতে যেতে হবে? কেন সঠিক? ৯/১১’র পর আমেরিকা এর নিজের ও মুক্ত বিশ্বের নিরাপত্তার স্বার্থে রক্ত দিয়ে, অর্থ খরচ এবং সময় নষ্ট করে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধটা সন্ত্রাসীদের ঘরে পৌঁছে দিয়েছে ! মোদ্দা কথা হচ্ছে, আমেরিকা বা রাশিয়া কেউই আফগানিস্তানে হারেনি, হেরেছে আফগান জনগণ। [email protected];

 

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

 

{এই বিভাগে প্রকাশিত লেখা লেখকের একান্তই নিজস্ব মতামত}

সংবাদটি শেয়ার করুন