সাইক্লিং ও রানিং নিয়ে যেতে চাই বহুদূর!
মভি সূত্রধর অনু
বদলে যাওয়া সময়ের স্রোতধারায় সাফল্যের পাল তুলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েরা। অন্ধ’ সমাজের বেড়াজাল ভেঙে আপন আলোয় মুক্ত ডানা মেলেছে মেয়েরা অনেক আগেই। অফিস-আদালত, শিল্প-সাহিত্য কিংবা ক্রীড়াঙ্গন- সবখানেই এখন নারীর জয়গান। নারী সবখানেই নিজের জায়গা করে নিচ্ছেন নিজ নিজ যোগ্যতা, মেধা, বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে।
আমাদের দেশের নারীদের সরব অবস্থান এখন কেবল পরিবারেই সীমাবদ্ধ নেই, সমাজের বিভিন্ন স্তর-প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, আনসার, ভিডিপি, বিজিবি, বিমান পরিচালনা, ট্রেন পরিচালনা, চিকিৎসা, প্রযুক্তি, শিক্ষকতা, নার্সিং, রাজনীতি- সর্বত্র নারীর বিচরণ রয়েছে।
ঠিক তেমন’নি আমিও শত শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি।
সেই ছোটবেলা থেকেই সাইক্লিং নিয়ে একটা স্বপ্ন ছিলো, কিন্তু তখন শেখার মত কোনো পরিবেশ না থাকায় হয়ে উঠেনি। এই বছরখানিক হবে সাইক্লিং জগতে আসা। তবে এক্ষেত্রে আমাদের সাইক্লিস্ট অব শ্রীমঙ্গলের সদস্য দ্বীপ চক্রবর্তী’র ভূমিকা অপরিহার্য। উনিই প্রথম শ্রীমঙ্গলে মেয়েদের সাইক্লিং শিখানোর উদ্যোগ নেন। যার ফলে শ্রীমঙ্গলের অনেক মেয়েরাই সাইকেল শিখতে পেরেছে। এছাড়াও যুদ্ধের ময়দানে যারা সহযোদ্ধা হিসেবে মাঠে সময় দিয়েছেন ও সহযোগিতা করেছেন তাঁরা হলেন মনসুর, উৎস, সৌম্য, সৌরভ, অনিবার্ণ প্রমুখ।
নিয়মিত শুক্রবারে রাইড ছাড়াও অন্যান্য দিনে গ্রুপ রাইড দেওয়া হয়। বন্ধুবান্ধবের সাথে ও রাইড দেওয়া হয়।
যেহেতু একটি মফস্বল শহরে আমার বেড়ে উঠা তাই প্রথমে যখন একজন মেয়ে হিসেবে সাইক্লিং জগৎতে আসি। তখন অনেকের কুদৃষ্টি ও কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা শুনেছি। তবে তাদের এই রকম কুদৃষ্টি ও কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা আমাকে মোটেও আঘাত করতে পারতো না। কারণ আমি বিশ্বাস করি একজন মানুষ যখন তার মত করে বাঁচতে চায়, নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষে অদম্য ছুটে যেতে চায়। সেখানে নানা রকম বাঁধা ও অহেতুক কথাবার্তা হজম করতে হয়। আর সেখানে আমি একজন মেয়ে তাই নিজেকে আরো বেশি প্রস্তুত রেখেই এগিয়ে চলছি। বলাই বাহুল্য সাইক্লিং-এ আসার পর অনেক শিক্ষিত লোকজনও যখন আমার সাইক্লিং করা নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলতো তখন সত্যি খুব অবাক হতাম। আর মনে মনে ভাবতাম শিক্ষিত মানেই সু-শিক্ষিত নয়। এগুলোই বোধহয় তার উদাহরণ! যারা কম শিক্ষিত তাদের কথা আর নাই বললাম।
তবে একটা বিষয় লক্ষনীয়, যেহেতু আমি একটি মফস্বল শহরের মেয়ে সেখানে আমার সাইক্লিং ও রানিং নিয়ে নানা ধরণের কথা শুনতে হয়েছে আমাকে। তবে মজার ব্যাপার হলো আমার ছুটে চলা দেখে আমাদের এলাকায় আরো দুটি মেয়ে সাইক্লিং করতে বের হবার সাহস অর্জন করতে পেরেছে। যারা এক সময় সাইক্লিং করতে বের হওয়ার সাহস পেত না যা দেখে আমি খুব আনন্দিত হই। এবং এটুকু বোধ কাজ করে আমাকে আরো এগিয়ে যেতে হবে। যাতে তাঁরাও এগিয়ে যায়। একজন’কে আলোকবর্তিকা হিসেবে সাহস করে সামনে আগাতেই হবে। তবেই না পিছনের উৎসুক সামনে আগাবার সাহস ও অনুপ্রেরণা পাবে।
ব্যক্তিগত জীবনে পরিবারের সবকিছু নিজেকেই সামলাতে হয়। নিজের পড়াশুনা, টিউশন, ঘরের কাজ, ঠিক রেখে বাইরের জগতে পা রাখতে হয়।
আমার মা প্যারালাইজড-এ আক্রান্ত হন যখন আমি প্রথম শ্রেণীতে পড়ি। তখন থেকে দিদি আমাদের নিজের মায়ের মতো আদর যত্ন করে বড় করে তুলেন। অষ্টম শ্রেণীতে পা রাখার পর দিদির বিয়ে হয়ে যায়। তারপর থেকেই পরিবারের সবকিছু দেখভাল আমার উপর।
ছোট্ট এই জীবনে সীমিত কিছু স্বপ্ন আমার পরিবার’কে হাসিখুশি রাখা, আমার স্বপ্ন লক্ষে ছুটে চলা, নারী পুরুষ বৈষম্য’কে ভেদ করে নিজেকে একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলা।
উল্লেখ্য, ২০১৯, ১২ এবং ১৩ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে “CoS বিজয় দিবস Endomondo চ্যালেঞ্জ” প্রতিযোগিতা হয়।সেখানে অংশগ্রহণ করি অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও কারণ আমার কাছে প্রতিটা প্রতিযোগিতাই নিজের সাথে লড়াই করে নিজেকে ভালো কিছু উপহার দেয়ার মতো একটা বিষয়।
প্রথম দিনে ৭৬.৩৪ কিলোমিটার সাইক্লিং করি শ্রীমঙ্গলের ভিতরে। সাথে সাইকেল আরোহী হিসেবে ছিলো সৌরভ, মৃদুল ও প্রান্ত।
দ্বিতীয় দিন, শ্রীমঙ্গল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১০৭ কিলো সাইক্লিং করি। সাথে ছিলো অয়ন, ও শ্রীমঙ্গলের ভালো বেডমিন্টন প্লেয়ার তানিম। পরিশেষে সেখানে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করি।
সাইক্লিং এবং রানিং নিয়ে অনেক দূর যাওয়ার ইচ্ছে আছে।
অনুষ্ঠান আয়োজকদের প্রতি অনুরোধ ও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি,আপনারা যদি অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে একটু নজর দেন তাহলে আমাদের মতো ক্ষুদ্র এথলেটরা নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগ পাবে।