মুখোমুখি

রাজনীতি হচ্ছে মানুষের মনের কাছে যাওয়ার চেষ্টা


সাক্ষাৎকার: মো. আবদুল হামিদ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি

বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে শিখেছি, রাজনীতি হচ্ছে মানুষের মনের কাছে যাওয়ার চেষ্টা


সাক্ষাৎকার গ্রহণ মুস্তাফিজ শফি


প্রশ্ন : যতদূর জানি, বাঙালির প্রাণের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আপনার প্রথম দেখা হয়েছিল কিশোরগঞ্জে। তিনি তখনও বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি আর আপনিও ছাত্র। বেশ চমকপ্রদই ছিল সেদিনের ঘটনা।

উত্তর : ঠিকই বলেছেন, এটা ছিল আমার জীবনে একটা বড় চমকপ্রদ ঘটনা। মনে পড়লে এখনও পুলকিত হই। ১৯৬২-৬৩ সালে আমি যখন কলেজে পড়ি, তখন থেকে বঙ্গবন্ধুকে চিনতে শুরু করি। দিন-তারিখ মনে না থাকলেও ঘটনাটি স্পষ্ট মনে আছে। সেটা ১৯৬৪ সালের কথা। আমি তখন কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র এবং কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মুজিব ভাই ওই সময় কিশোরগঞ্জ আসেন আওয়ামী লীগের সমাবেশে। প্রিয় নেতাকে কাছে থেকে দেখব, তার সঙ্গে কথা বলব- এই ইচ্ছা থেকেই ছাত্রলীগের দু-তিনশ’ কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে গেলাম রঙমহল সিনেমা হলের সামনে। ভেতরে জায়গা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের ঢুকতে দিলেন না। তাদের বক্তব্য, এটা ছাত্রলীগের অনুষ্ঠান নয়। তার পরও আমরা বাইরে অপেক্ষা করতে থাকলাম। নেতা বের হলে প্রয়োজনে রাস্তার মধ্যেই তার সঙ্গে দেখা করব, কথা বলব।

মনে পড়ছে, সন্ধ্যার আগেই সমাবেশ শেষ হলো। সবাই বেরিয়ে আসছেন। খুব সহজেই আমাদের দৃষ্টি কাড়লেন দীর্ঘদেহী মানুষটি। তাৎক্ষণিক স্লোগান ধরলাম, ‘মুজিব ভাই যেখানে, আমরা আছি সেখানে।’ বুঝতে পারলাম, দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি। নেতা এসে জড়িয়ে ধরতেই পরিচয় দিয়ে অভিযোগ জানালাম, ‘আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসেছিলাম আপনার বক্তৃতা শুনতে; কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের হলের ভেতরে ঢুকতে দেননি।’ মুজিব ভাই তখন সবার সামনেই বললেন, ‘আরে আওয়ামী লীগ বাদ দে, তোরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই আমার আসল শক্তি।’ নেতার এ বক্তব্যে আমাদের উজ্জীবন তখন আর ঠেকায় কে।

প্রশ্ন : দ্বিতীয়বার দেখা হতে বেশ দেরিই হলো। আপনার কাছ থেকেই আগে জেনেছি, শেখ মুজিবুর রহমানকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করে ট্রেনে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ময়মনসিংহ- আপনারা ট্রেনটি আটকালেন কিশোরগঞ্জে।

উত্তর : ঘটনাটি আমি লিখেছিলাম। সমকালে আপনারা সেটা কয়েক বছর আগে ছেপেও ছিলেন। সম্ভবত ‘৬৭ সালের প্রথম দিকে সিলেটে গিয়ে গ্রেপ্তার হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে ‘৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষিত হলো। আমরাও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। খবর পেলাম, পুলিশ মুজিব ভাইকে বাহাদুরাবাদ মেইল ট্রেনে করে সিলেট থেকে ময়মনসিংহ নিয়ে যাবে। আমরা চার-পাঁচ হাজার ছাত্র জড়ো হয়ে কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন অবরুদ্ধ করে ফেললাম। রাত ১২টায় ট্রেন এলো। আমরা তো নেতাকে না দেখে, তার বক্তৃতা না শুনে ট্রেন যেতে দেব না। তাকে রাখা হয়েছিল ফার্স্ট ক্লাসের একটি কামরায়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সেখানে গেলাম। ‘হামিদ’ বলেই তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বুঝলাম, একবারের দেখাতেই নেতা আমার নামটি মনে রেখেছেন। আমরা একটি হ্যান্ড মাইকেরও ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। সেই মাইক হাতে ট্রেনের বগির দরজায় দাঁড়িয়ে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে তিনি ১০-১২ মিনিট বক্তৃতা করলেন। সবশেষে আমার পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘আন্দোলন চালিয়ে যা, জয় আমাদের হবেই।’ আর বললেন, ‘সাংগঠনিক কাজের সঙ্গে সঙ্গে লেখাপড়াও কিন্তু চালিয়ে যেতে হবে।’

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু তো আপনাকে কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের হালও ধরতে বলেছিলেন?

উত্তর : সেটা তৃতীয়বার দেখা হওয়ার সময়। ১৯৬৯ সালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে তার ঐতিহাসিক বাড়িতে। মুজিব ভাই তখন বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছেন। কিশোরগঞ্জ থেকেই তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। প্রথমেই বললেন, ‘শুধু ছাত্রলীগ নয়, কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতেও তোকে কাজ করতে হবে।’ কিন্তু আমার তখন আসল আগ্রহ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া। সেই লক্ষ্য নিয়ে বিএ পাস করে এক বছর লস দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ল-তে ভর্তিও হয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে পুরো বিষয়টি জানানোর পরও তিনি বললেন, ‘না, ঢাকায় আসা চলবে না। তুই সেন্ট্রাল ল কলেজে ভর্তি হয়ে কিশোরগঞ্জ চলে যা। সেখানে গিয়ে সংগঠন আর আন্দোলনে মন দে।’ আমার তখনও মন পড়ে আছে ঢাকায়। যাতে সেন্ট্রাল ল কলেজে ভর্তি হতে না হয়, সে জন্য একটু চালাকি করেই বলি- যে টাকা নিয়ে এসেছিলাম, সেটা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। এখন আবার অন্য জায়গায় ভর্তির টাকা পাব কোথায়? বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক তার পকেট থেকে তিনশ’ টাকা বের করে আমার হাতে দিলেন। ইতোমধ্যে তোফায়েল আহমেদ এসে ঢুকেছেন; তাকে বললেন, ‘হামিদকে সেন্ট্রাল ল কলেজে ভর্তি করে বই কিনে দিয়ে কিশোরগঞ্জ পাঠানোর ব্যবস্থা কর।’ কী আর করা, কিশোরগঞ্জে ফিরে এবার পুরো আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার কাজে মনোনিবেশ করলাম। ‘৭০ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধুকে কিশোরগঞ্জে সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তারকে আহ্বায়ক আর আমাকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠিত হলো। সংবর্ধনা নিতে এসে বঙ্গবন্ধু ৪৫ মিনিট দীর্ঘ বক্তৃতা করলেন। তার সান্নিধ্যে তখন একটা বড় সময় কাটল আমার।

প্রশ্ন : আপনি তো সর্বকনিষ্ঠ এমএনএ হিসেবে সত্তরের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্তির সেই ঘটনা একটু খুলে বলুন। আমরা জানি, প্রতিটি ঘটনার পেছনেই চমকপ্রদ কিছু কাহিনি লুকিয়ে ছিল।

উত্তর : ‘৭০ সালে কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সংবর্ধনার পর ওই জানুয়ারি মাসেই আবার ঢাকায় এসে নেতার সঙ্গে দেখা করি। তখনই তিনি আমাকে বললেন, ‘তোকে ইলেকশন করতে হবে। তুই এমপিএ (মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল অ্যাসেমব্লি) ইলেকশনের প্রস্তুতি নে।’ আমার তখন তাৎক্ষণিকভাবেই মাথায় ঢুকল, ইলেকশন যদি করিই তাহলে এমপিএ কেন, এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লি) ইলেকশনই করব। বিষয়টি জানালাম বঙ্গবন্ধুকে, কিন্তু তিনি কোনোভাবেই রাজি হলেন না। বললেন, ‘তুই ছোট, তোকে মানুষ ভোট দেবে না। প্রথমে এমপিএ ইলেকশন কর। পরিচিত হ। পরে বড়টা করবি।’ বঙ্গবন্ধু জানালেন, মেসবাহ উদ্দিন নামে অবসরপ্রাপ্ত এক জজকে আমার নির্বাচনী এলাকা (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-নিকলী-তাড়াইল) থেকে এমএনএ নির্বাচনের জন্য মনোনীত করেছেন। কী আর করা, মন খারাপ করে কিশোরগঞ্জ ফিরলাম। কিন্তু মাথার মধ্যে এমএনএ ইলেকশন করার পোকাটা থেকেই গেল। বঙ্গবন্ধুকে কিছুদিন না দেখলে মন কেমন করে। এপ্রিল মাসে আবার ঢাকায় এলাম দেখা করতে। এবার আমাকে দেখেই তিনি হাসতে থাকলেন। সেই হাসি যেন থামেই না। ভাবলাম, আমার কাপড়চোপড়ে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা। তিনি যত হাসতে থাকলেন, আমার অস্বস্তিও তত বাড়তে থাকল। আমাকে বসতে বলেও বঙ্গবন্ধু হাসি থামালেন না। টাঙ্গাইলের আবদুল মান্নান আর ইউসুফ আলী (পরবর্তীকালে শিক্ষামন্ত্রী) তখন উপস্থিত। এবারে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘সেই জজ মারা গেছে। আমি কি আর তোর কথা না রাইখা পারি। তুই তো আমার দাদা।’ শেখ আবদুল হামিদ যে বঙ্গবন্ধুর দাদা, সেটা তখন আমার জানাই ছিল না। জজ সাহেব নেই, তাই বঙ্গবন্ধুর মনোনয়ন পেয়ে আমি এমএনএ নির্বাচনে অংশ নিলাম। ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলীর জনসভায় বঙ্গবন্ধু আমার জন্য ভোটও চাইতে গেলেন। কোনো কোনো জায়গায় নৌকা থেকেও বক্তৃতা করলেন। নির্বাচিত হলাম সর্বকনিষ্ঠ এমএনএ হিসেবে।

এ প্রসঙ্গে আরেকটি ব্যক্তিগত ঘটনা মনে পড়ছে। বঙ্গবন্ধু যে আমাকে এমএনএ মনোনয়ন দেবেন, এ খবর আব্বাকে জানালে তিনি খুবই অবাক ও যুগপৎ খুশি হয়েছিলেন। আমার আব্বা হাজি মো. তায়েবউদ্দিন সর্বদাই চাইতেন, তার ছেলেরা সমাজের নেতৃত্ব দিক। আমার বড় ভাই মো. আবদুল গণি ছিলেন আমাদের ইউনিয়নের বিডি সিস্টেমে নির্বাচিত চেয়ারম্যান। কিন্তু আব্বার পক্ষপাত ছিল আমার প্রতি। তিনি বুঝতে পারছিলেন, তার ছেলে হামিদ, মিঠামইনের গণ্ডি ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

সত্তরের নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধুর মনোনয়ন পাওয়ার পর আব্বারও সমর্থন পেলাম। বঙ্গবন্ধু আব্বাকে আমার নির্বাচনী খরচ দেওয়ার জন্য বলে দিলেন। আব্বা আমাকে ওই সময় দুই কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকা করে মোট এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন। তা ছাড়া প্রায় ছয় মাস নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার সময় পঞ্চাশ-ষাটজন লোকের, কোনো কোনো সময় একশ’-দেড়শ’ লোকের বাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছিল।

জানিয়ে রাখি, সর্বকনিষ্ঠ এমএনএ নিয়েও একটি মজার ঘটনা ঘটেছিল। নির্বাচনের পরই বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নিলেন, নির্বাচিত সব এমএনএ ও এমপিকে শপথ করাবেন, যাতে তারা ছয় দফার সঙ্গে এবং বাংলার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করেন। রেসকোর্স ময়দানে সেই শপথে অংশ নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ অফিস থেকে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। কিশোরগঞ্জের তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে জিল্লুর রহমান, ফজলুর রহমান, শাহাবুদ্দিন ঠাকুর, কামরুল আহসান শাজাহান, লিয়াকত হোসাইন প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম আওয়ামী লীগ অফিসে। কিন্তু পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্মীরা আমাকে ফিরিয়ে দিলেন, ‘যার পরিচয়পত্র সে নেবে’ এই বলে। শুধু আমি নই, আমার সঙ্গীরা অনুরোধ করার পরও আওয়ামী লীগের অফিস সেক্রেটারি বিশ্বাস করলেন না, আমি নিজেই এমএনএ। তিনি বারবারই বলছিলেন, ‘আপনারা কেন বুঝতে চাচ্ছেন না, একজনের কার্ড আরেকজনকে দেওয়া যাবে না। এমএনএ সাহেবের নিজে এসে কার্ড নিতে হবে।’ কোনোভাবেই কার্ড সংগ্রহ করতে না পেরে যখন ফিরে আসছি, তখন দেখলাম তাজউদ্দীন আহমদ ঢুকছেন। তাকে বিষয়টি জানালে তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন এবং তাদের বললেন, ‘তোমরা চিনতে পারো নাই, এই সেই ভাটি শার্দূল আবদুল হামিদ, দুরন্ত দুর্দান্ত যুবক।’ সেদিনের বিশেষণগুলো এখনও আমার কানে বাজে।

প্রশ্ন : নির্বাচিত হলেও ওই সময়ে তো সংসদে যেতে পারেননি।

উত্তর : সত্তরের বিজয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে ত্বরান্বিত করে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ক্ষমতা হন্তান্তরে নানা টালবাহানার আশ্রয় নিতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডেকেও পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। আন্দোলনে যোগ হয় নতুন মাত্রা। জনগণ তাদের প্রাণপ্রিয় নেতার নির্দেশনার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে। বঙ্গবন্ধু ৩ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালির আবেগ-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতারই ডাক। স্বাধীনতার আগে সংসদে যাওয়ার সুযোগ হয়নি আমাদের। আন্দোলন আরও বেগবান হলো। আমরা জনগণের কাতারে থেকে জনগণের জন্যই কাজ করে যেতে থাকলাম। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অংশ নিলাম। দেশ স্বাধীন হলো। কত ঘটনা, কত স্মৃতি। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেন। এবার সবাই মিলে দেশ গড়ার সংগ্রাম শুরু হলো। কাজ চালিয়ে যেতে থাকলাম বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা অনুসারেই। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও বাড়তে থাকল। আজ নিঃসন্দেহে বলতে পারি, সত্তরের ওই নির্বাচনই আমাকে বঙ্গবন্ধুর মতো এক মহান নেতার আরও কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল এবং তার কাছ থেকে শিখলাম, রাজনীতি হচ্ছে মানুষের মনের কাছে যাওয়ার চেষ্টা। মানুষও আমাকে প্রতিদান দিয়েছে, আমার মতো প্রান্তবর্গীয় একজন সাধারণ মানুষ তাই দু’বার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিরল সুযোগ পেয়েছে।

প্রশ্ন : আপনি নিজে একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান। আপনার মুখ থেকে পার্লামেন্টারিয়ান বঙ্গবন্ধুর মূল্যায়ন শুনতে চাই।

উত্তর : আমরা জানি, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের সময় প্রথম পার্লামেন্টে যান বঙ্গবন্ধু। তখন তো আমি একেবারেই ছোট। ১৯৭০ সালে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এমএনএ নির্বাচিত হলেও পার্লামেন্টে বসতে পারিনি। সুযোগটি এলো দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে। তখন সংবিধান তৈরির ৯ মাস আমরা একসঙ্গে গণপরিষদে ছিলাম। নিতান্ত নবীন সদস্য হিসেবে বয়োজ্যেষ্ঠ এবং অভিজ্ঞদের কর্মকাণ্ড খুব আগ্রহভরেই তখন প্রত্যক্ষ করতাম। গণপরিষদে ওই অর্থে কোনো বিরোধী দল না থাকলেও বিরোধী পক্ষের দু-একজন সদস্য তো ছিলেনই। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ন্যাপ থেকে নির্বাচিত তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কথা। পার্লামেন্টে বক্তৃতা করার সুযোগ চাইলে সব সময়ই তিনি সুযোগ পেতেন। স্পিকার মাঝেমধ্যে তাকে মাইক দিতে না চাইলে বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘ওকে সুযোগ দেন, বিরোধী পক্ষের কথা আগে শুনতে হবে।’

স্বাধীন দেশের পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমার আগ্রহের কেন্দ্রে। লক্ষ্য করেছি, পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে স্পিকার বিব্রত হতেন; কিন্তু বঙ্গবন্ধু হতেন না। ১৯৭৩ সালের পার্লামেন্টে আতাউর রহমান খান, এমএন লারমাসহ বিরোধী দলের কয়েকজন এমপি ছিলেন। তখনও দেখেছি, তারা কথা বলতে চাইলেই সুযোগ পেতেন। প্রায় সময় বঙ্গবন্ধুই স্পিকারকে বলে সে সুযোগ করে দিতেন। আমি সব সময়ই বলি, বঙ্গবন্ধুই আমার রাজনৈতিক গুরু; যা শিখেছি তার কাছ থেকেই শিখেছি। সেই শিক্ষাগুলোই পরে প্রয়োগ করেছি নিজের রাজনৈতিক জীবনে। আমি নিজে জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকা অবস্থায় বিরোধী দলকে যে সুযোগ দিতাম, সেটাও আসলে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই শেখা।

আইয়ুব-ইয়াহিয়াবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বঙ্গবন্ধুকে নিজের দেশের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সব সময়ই দেখেছি মার্জিতভাবে কথা বলতে। সবুর খান, শাহ আজিজুর রহমান- এদের সম্পর্কে বলতে গিয়েও কোনো সময় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেননি। বঙ্গবন্ধুর এই যে ভদ্রতা, এই যে শিষ্টাচারের সংস্কৃতি এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তার ঘনিষ্ঠ না হলে সেটা হয়তো সম্ভব হতো না। আমি একজনের বিরুদ্ধে বললে অন্যজনও আমার বিরুদ্ধে বলবে- এ বিশ্বাস তার ভেতরে পুরোমাত্রায় ছিল। তিনি বলতেন, গণতন্ত্রে দল থাকবে, কিন্তু আমাদের দলে অন্ধ হলে চলবে না। আমাদের অন্ধ হতে হবে দেশের প্রতি, দেশের স্বার্থে।

প্রশ্ন : পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আপনি তো এমপি হোস্টেলে ছিলেন। ঘটনাটি কীভাবে জানতে পেরেছিলেন?

উত্তর : বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক অধ্যায়। এমপি হোস্টেলে থেকে সকালে খবরটি শুনে কত যে কেঁদেছি! আক্ষেপ জেগেছে, বঙ্গবন্ধুকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সাবধান করেছিলাম। যতদূর মনে পড়ে, পঁচাত্তরের ১১ আগস্ট বিকেলে গণভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম, আমার কিছু একান্ত কথা আছে। সন্ধ্যার পর গণভবনের বাগানে হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে জানতে চাইলেন, ‘কী বলতে চাস?’ আমি কিছু সন্দেহজনক ব্যাপার তাকে খুলে বললাম। বঙ্গবন্ধু হেসে বললেন, ‘একটু ঝামেলা ছিল, সব ঠিক হয়ে গেছে; চিন্তা করিস না।’ ফিরে এলাম আশ্বস্ত হয়ে। এটাই তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা, শেষ কথা। এখন বুঝতে পারি, কোনো কিছুই ঠিক ছিল না তখন।

মনে পড়ে, ১৪ আগস্ট রাতে নানা জায়গায় আড্ডা দিয়ে এমপি হোস্টেলে ফিরি। ৩টা-৪টার দিকে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও একাধিক আওয়াজ শুনেছি। ভেবেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ-উল্লাস হচ্ছে; পটকা ফুটছে। সকাল ৭টার দিকে পাশের রুমের খন্দকার নুরুল ইসলাম (রাজবাড়ীর এমপি) এসে দরজা ধাক্কানো শুরু করলেন। রাতে দেরিতে ঘুমিয়েছি, তাই বেশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতেই তার মুখে শুনলাম, ‘সর্বনাশ হয়ে গেছে।’ তিনি দৌড়ে রেডিও নিয়ে এলেন। সেখানে বারবার বাজছে, ‘আমি মেজর ডালিম বলছি…।’ এর পরের কথাগুলো আমি আর শুনতে পারি না। আমার কান বন্ধ হয়ে আসে। মাথা ঘুরতে থাকে। আমার নেতাকে, আমার বঙ্গবন্ধুকে, বাঙালি জাতির পিতাকে ওরা মেরে ফেলেছে- এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আমরা চেয়ে দেখি, এমপি হোস্টেলের বাইরেও ট্যাঙ্ক ঘুরছে। অনেক এমপি ও নেতাকে ফোন করি, অনেককেই পাই না। এমপি হোস্টেলে হামলা হতে পারে- এ আশঙ্কার মধ্যেই বের হই। স্যান্ডেল পায়ে হেঁটে হেঁটে ফার্মগেটে যাই। তারপর সেখান থেকে মহাখালীতে এক আত্মীয়ের বাসায়। কিশোরগঞ্জে গিয়েছি আরও পরে।

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করার কারণে আপনি তো জেলও খেটেছেন।

উত্তর : ‘৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জে আয়োজিত আলোচনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করি। বক্তব্যে বলি, হিটলার-মুসোলিনি থেকে শুরু করে কোনো স্বৈরাচারই টিকেনি, এ দেশেও টিকবে না। এই অপরাধেই বোধ হয় কিছুদিন পর গ্রেপ্তার হই। জেলখানার ভেতরেই জিয়াউর রহমান তার সামরিক সচিব কর্নেল মাহফুজুর রহমানের মাধ্যমে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পাঠান। বলা হয়েছিল, প্রস্তাবটি না মানলে ২৫ বছর জেলে থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারিনি বলে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই। জীবনভর বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে তার আদর্শ আঁকড়ে ধরেই থাকতে চেয়েছি। এর ফলেই হয়তো অধিষ্ঠিত হতে পেরেছি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আসনেও। আমার জীবনে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া বাকি নেই। আমি শুধু চাই, এ দেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চিরঞ্জীব থাক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধুর কোন গুণটি আপনার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে?

উত্তর : সেটা বলে শেষ করা যাবে না। বস্তুত আমার জীবনে বঙ্গবন্ধু ধ্রুবতারার মতো হয়ে আছেন। দীর্ঘ ৭৭ বছরের জীবনে যখন পেছন ফিরে দেখি; দেখতে পাই আমার জীবনের যে অভিমুখ ও অর্জন, সবই বঙ্গবন্ধুর অবদান। মাত্র ২৬ বছর বয়সে আমাকে তিনি জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আমি হয়েছিলাম তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব একজন তরুণের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা দেখতে পাওয়া। আমার মতো লাখো তরুণের মধ্যে কেবল নয়, গোটা জাতির ভবিষ্যৎদ্রষ্টা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তরুণ বয়স থেকেই তিনি বাঙালির স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন। শুধু স্বপ্ন দেখেননি; বাস্তবায়নে রাত-দিন কাজ করেছেন। আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো গোটা জাতি তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন তিনি।

আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, মানুষের সঙ্গে মিশতে পারার অসম্ভব গুণ ছিল বঙ্গবন্ধুর ভেতরে। তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন জনগণের কাছে যাওয়ার মাহাত্ম্য। আমার নির্বাচনী এলাকা তো বটেই, পুরো কিশোরগঞ্জে গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছি আমি। কিশোরগঞ্জের এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই, যেখানকার মানুষকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। মানুষকে নামধামসহ মনে রাখতে পারাটাও আমি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই শিখেছি। যদিও বঙ্গবন্ধুর মতো স্মৃতিধর হতে পারিনি।

প্রশ্ন : আমরা সাক্ষাৎকারের একেবারে শেষ পর্যায়ে। বঙ্গবন্ধু এবং তার রাজনীতির মূল্যায়ন করে জাতির উদ্দেশে কিছু বলেন।

উত্তর : আমাদের জাতীয় ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান অপরিসীম। গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি এই জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। এ জন্য তাকে বহুবার কারাবরণসহ অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে এ দেশের জনগণকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে এই মহান নেতা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এ জন্য পুনরায় তাকে কারাবরণ করতে হয়, যেতে হয় ফাঁসির মঞ্চে। তবুও তিনি শত্রুর সঙ্গে আপস করেননি। দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সারাজীবন সমুন্নত রেখেছেন। দুঃখী মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তাই ঘাতক চক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তার আদর্শ ও নীতিকে ধ্বংস করতে পারেনি।

খুব কাছ থেকে দেখেছি, মানুষের সঙ্গে মিশতে পারার যে অসম্ভব গুণ ছিল বঙ্গবন্ধুর ভেতরে, সেটাই তাকে পরিণত করেছিল বাঙালির মহান নেতায়। ‘আমি তোমাদেরই লোক’- জনগণের ব্যাপারে তিনি সব সময়ই বুকে ধারণ করতেন এই আপ্তবাক্য। এই চেতনাই তাকে পৌঁছে দেয় অনন্য উচ্চতায়। পরিণত করে বঙ্গবন্ধুতে, অতঃপর জাতির পিতায়।

আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হতো না। তিনি জাতির পিতা কেবল এই কারণে নন যে, স্বাধীনতা-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি জাতির পিতা এই কারণেও যে, এই দেশের যা কিছু- সবই তিনি জন্ম দিয়েছিলেন। এমনকি ‘বাংলাদেশ’ নামটিও তার দেওয়া। বিশ্বে আরও বিভিন্ন দেশের জাতির পিতা রয়েছেন। আমাদের এ অঞ্চলেও রয়েছেন মহাত্মা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী কিংবা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। কিন্তু কয়টি দেশের জাতির পিতা তার দেশের নামও রাখতে পেরেছেন? জাতির পিতা হিসেবেও বঙ্গবন্ধু সে ক্ষেত্রে অনন্য।

বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নয়, সবার- এটা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে। যারা তাকে মানতে চায়নি, তারা বাংলাদেশকেও মানতে পারেনি। তাদের সংখ্যা কিন্তু একেবারে কম নয়। একাত্তরের পরাজিত শক্তিই পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে দেশকে পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমরা আবার ফিরেছি প্রগতির পথে। আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশ। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আরও এগিয়ে যাব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই আমাদের অগ্রযাত্রায় মূল শক্তি। এটাকে আমরা যত ছড়িয়ে দিতে পারব, ততই আমাদের বিভাজন কমবে। রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠাই ছিল তার স্বপ্ন। আমাদের দায়িত্ব হবে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা। তাহলেই আমরা চিরঞ্জীব এই মহান নেতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারব। -সমকাল

 

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন