ফিচার্ড মত-মতান্তর

সাম্প্রতিক ডেঙ্গু সমস্যা ||| প্রজ্ঞা চৌধুরী প্রাপ্তি

সাম্প্রতিক ডেঙ্গু সমস্যা ||| প্রজ্ঞা চৌধুরী প্রাপ্তি

কথায় আছে, স্বাস্থ্যই সম্পদ কিন্তু সমাজের কিছুসংখ্যক মানুষের বালকসুলভ আচরণের ফলে আজ সেই সম্পদ হুমকির মুখে। আমরা মানুষ। কাজেই আমরা অবধ্য নই।মানুষ মরণশীল, তাই মৃত্যুর কোলে একদিন সকলকেই ঢলে পড়তে হবে বইকি। কিন্তু তাই বলে অসচেতনতার দরুন মৃত্যুবরণ, এ তো মনুষ্যকূলে কাম্য নয়। কারণ মানুষ যে বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রাণী, বুদ্ধিহীনতা দর্শানো তার কাজের মধ্যে পড়ে না। বিগত কয়েক বছর যাবত ডেঙ্গু এদেশে মহামারীর আকার নিয়েছে। শুধুমাত্র একটু কষ্ট সহ্য করে বাড়ি-ঘর-দোর পরিষ্কার রাখলেই যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। ডেঙ্গুজ্বরকে আমরা কেউ কেউ যতটা সহজভাবে নিচ্ছি ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাওয়া কিন্তু ততটা সহজলভ্য নয়।

তাহলে একটু বিস্তারিত বর্ণনাই করা যাক,-

ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহক “এডিস” নামক একধরনের বিষাক্ত মশা। এটি দেখতে গাঁঢ়  কালো ও নীলাভ বর্ণের। সারা শরীরময় সাদা-কালো ডোরাকাটা দাগ। দুই প্রজাতির স্ত্রীমশক এ রোগের জীবাণুবাহক।  যথাঃ এডিস ইজিপ্টা ও এডিস এলরোপিকটাস। সর্বপ্রথম পৃথিবীতে এডিস মশার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় আফ্রিকার জঙ্গলে। ধারণা করা হয়, জাহাজের মাধ্যমে সমুদ্রপথে এডিস মশা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ডেঙ্গুজ্বরে সর্বক্ষণ আক্রান্ত ব্যাক্তির জ্বর ১০৪/১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে অবস্থান করে। ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত দুই প্রকার – ক্লাসিকাল ডেঙ্গুজ্বর ও হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বর। যার মধ্যে দ্বিতীয়টি অধিক মারাত্মক। ডেঙ্গু ভাইরাস চার প্রকার। যথাঃ ডেন-১,২,৩ ও ৪। এর মধ্যে ১ ও ২ দ্বারা আক্রান্ত হলেই ডেঙ্গুজ্বর নিশ্চিত। যার কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা অদ্যাবদি আবিষ্কৃত হয়নি। ১৯৬৪ খ্রীস্টাব্দে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে ডেঙ্গুজ্বর ধরা পড়ে। এর লক্ষ্মণগুলো হলোঃ প্রচন্ড জ্বরের সাথে বমিবমি ভাব, মাথা ব্যাথা, কাঁশি, শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যাথা, কোমড় ব্যাথা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল লাল চাকার মতো দেখা দেওয়া, শরীরে এলার্জির প্রাদুর্ভাব প্রভৃতি। এসব লক্ষ্মণ দেখা দিলে দ্রুত ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা উপসর্গ অনুযায়ী জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ দিয়ে থাকেন। এছাড়া রোগীকে প্রচুর পরিমাণে জল ও মৌসুমি ফলের রস পান করাতে এবং কিসমিস, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক জাতীয় খাদ্য প্রচুর পরিমাণে খাওয়াতে হবে।  তার সাথে রোগীকে ২৪ ঘণ্টা মশারীর ভেতর অবস্থান করতে হবে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর প্লেটলেট ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ দশ হাজারের নিচে নেমে গেলে রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়।

সরকারি হিসাবে ২০২১ খ্রীস্টাব্দের প্রথম সাত মাসেই বাংলাদেশে ২২৯২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২০২০ সালে ১৪০৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন  । বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়েছিল ২০১৯ সালে। সে বছর এক লাখের বেশি মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর মারা গিয়েছিলেন ১৭৫ জনের বেশি। বেসরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় এ রোগ  মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।  করোনা এবং ডেঙ্গু দু’টো মহামারি যদি একত্রে চলমান থাকে তাহলে মানবজীবন মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হবে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই চাপ নিতে সক্ষম হবে না তাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র জনাব আতিকুর ইসলাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সকলকে বারবার উৎসাহিত করছেন কিন্তু আখেরে তাঁদের পেতে হচ্ছে ব্যর্থতার স্বাদ। ঢাকা সিটির প্রায় অধিকাংশ বাড়িতে অপরিচ্ছন্নতা এবং জমায়িত বদ্ধ পানির মাঝে মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। মশার কামড়ে প্রতিদিনই দুইশতাধিক ব্যাক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন।  এসবই জনগণের অসচেতনতা বা ডেঙ্গুকে পাত্তা না দেওয়ার ফল।আর এই অসচেতনতা বা ডেঙ্গুকে পাত্তা না দেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা কিন্তু আমাদের খারাপ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে জগতের সামনে তুলে ধরছি।তাই মনে রাখতে হবে –

When money is lost nothing is lost, health is lost something is lost but character is lost everything is lost. তাই চরিত্রকে সুগঠিত করে সচেতনতার সাথে নিজ বাড়ির আশপাশের ঝোপ জঙ্গল পরিস্কার করি, ফুল বাগানে বা ছাদ বাগানে, ড্রেনে, ডাবের খোসা প্লাস্টিক সামগ্রী, মাটির পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদিতে যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখি। মনে রাখতে হবে জমে থাকা পানিতেই মশা ডিম পাড়ে এবং ডেঙ্গুর লার্ভা জন্মায়। আসুন সবাই সচেতন হই, মশার বংশ বিস্তার রোধ করি এবং ডেঙ্গু মুক্ত দেশ গড়ি।

We shell overcome.

Finger crossed.

সাম্প্রতিক ডেঙ্গু সমস্যা ||| প্রজ্ঞা চৌধুরী প্রাপ্তি- খুদে লেখক, মৌলবীবাজার থেকে।

 


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন