সারোগেসি পদ্ধতি কি? (Surrogacy) গত বছর বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে কৃতি শ্যানন অভিনীত ‘মিমি’ সিনেমা। এই সিনেমার মূল গল্প ছিলো সারোগেসি পদ্ধতি। আপনারা যারা এই সিনেমাটি দেখেছেন তারা ইতিমধ্যেই সারোগেসি পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।
আবার সম্প্রতি বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আর তার স্বামী নিক জোনাস সারোগেসির মাধ্যমে কন্যা সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন।
এছাড়াও বলিউডের কিং শাহরুখ খান তার সবচেয়ে ছোট ছেলে আবরাম খানের জন্ম দিয়েছেন সারোগেসির মাধ্যমেই। বলিউড অভিনেতা তুষার কাপুর, পরিচালক করণ জোহারও সারোগেসির মাধ্যমেই সন্তান লাভ করেছেন।
কিন্তু এই সারোগেসি পদ্ধতি কি?
সারোগেসিকে অনেকে গর্ভ ভাড়া দেওয়ার সাথে তুলনা করে থাকেন। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এনএইচএস জানাচ্ছে, সারোগেসি হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে একজন নারী কোন একটি যুগলের জন্য গর্ভধারণ করেন যারা চিকিৎসা বা শারীরিক কারনে গর্ভধারণ করতে অক্ষম।
তখন সারোগেসির মাধ্যমে শিশুর আইনি বাবা-মা হন ঐ যুগল।
কাদের জন্য সারোগেসি?
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এনএইচএস ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত লিডস ফার্টিলিটি ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী কিছু কিছু নারীর শারীরিক নানা সমস্যা থাকে যার জন্য তার পক্ষে গর্ভধারণ করাটা অসম্ভব হতে পারে। কিন্তু তাদের ডিম্বাণু স্বাভাবিক থাকে।
গর্ভধারণে নারীদের যেসব সমস্যা থাকে :
১. গর্ভাশয় ছাড়া জন্ম নিয়েছেন।
২. গর্ভাশয় থাকলেও সেটি পরিপুর্ণ বিকশিত নয়।
৩. শারিরিক সমস্যার কারনে যাদের গর্ভাশয় কেটে ফেলতে হয়েছে।
৪. গর্ভাশয়ে যাদের মারাত্বক ক্ষতি সাধন হয়েছে।
৫. যে নারীর অনেক বেশি গর্ভপাত হয়।
৬. আইভিএফ এর মাধ্যমেও যারা গর্ভধারণ করতে পারেননি
৭. এমন শারিরিক সমস্যা রয়েছে যার কারনে গর্ভাশয় ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
সারোগেসি পদ্ধতি কত প্রকার :
বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় দুই ধরণের সারোগেসি পদ্ধতি চালু আছে। একটি হচ্ছে ট্রেডিশনাল সারোগেসি এবং অন্যটি হচ্ছে আধুনিক সারোগেসি বা হোস্ট সারোগেসি।
ট্রেডিশনাল সারোগেসি : যদি কারো ডিম্বাণু একেবারেই উৎপাদিত না হয়, তাহলে সারোগেট মায়ের ডিম্বাণু ব্যবহার করে গর্ভধারণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার সঙ্গী কিংবা শুক্রাণু দাতার কাছে থেকে শুক্রাণু নিয়ে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে যে নারী গর্ভধারণ করেন তিনি জিনগতভাবে ঐ শিশুর সাথে সম্পর্কিত থাকেন।
হোস্ট সারোগেসি : হোস্ট সারোগেসির ক্ষেত্রে আইভিএফ ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে যারা সন্তানের পিতা-মাতা হবেন, তাদের ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু ব্যবহার করে অন্য কোন নারী গর্ভধারণ করেন। এক্ষেত্রে গর্ভধারণকারী ঐ নারীর সাথে শিশুর জিনগত কোন সম্পর্ক থাকেনা।
হোস্ট সারোগেসি তিন ধাপে সম্পন্ন হয় :
ডিম্বাণু দান : যিনি মা হতে চান তিনি বা ডিম্বাণু দাতার কাছে থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় একাধিক ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয়।
ফার্টিলাইজেশন : ল্যাবরেটরিতে ডিম্বাণুকে শুক্রাণুর সাথে মিলন ঘটিয়ে ভ্রুণ তৈরি করা হয়।
প্রতিস্থাপন : এই ধাপে ল্যাবরেটরিতে তৈরি ঐ ভ্রুণ সারোগেট মায়ের গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়।
সারোগেট মা কোথায় পাবেন :
সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান নিতে চাইলে এর জন্য একজন সারোগেট মা পাওয়া প্রয়োজন। আপনার পরিবার, আত্বীয়-স্বজন বা আশে-পাশের পরিচিত কেউ একজন কে আপনি সারোগেট মা হিসেবে বেছে নিতে পারেন যদি তিনি সম্মত থাকেন এবং তার মা হওয়ার সক্ষমতা থাকে।
আবার এমন কেউ হতে পারে যাকে আপনি চেনেন না। এমন অনেক নারী আছেন যারা সারোগেসির জন্য গর্ভ ভাড়া দেন। আপনি তাদের মত কাউকে আপনার সন্তানের সারোগেট মা হিসেবে বেছে নিতে পারেন।
সারোগেসিতে কী স্বাস্থ্যের ঝুঁকি আছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সারোগেসি খুব একটা সহজ পদ্ধতি নয়, এতে একাধিক জটিলতা ও ঝুঁকি থাকে। প্রথমত, ভ্রূণের জীবনের প্রিইমপ্ল্যান্টেশন, প্রসবপূর্ব ও নবজাতক সময়কালে ব্যর্থতার সম্ভাবনা থাকে।
ডিম্বাশয় উদ্দীপনা, পরবর্তী আইভিএফ চক্র ও আইভিএফ ও জেনেটিক ল্যাবরেটরির মধ্যে ভ্রূণ, পেরিনেটাল ও নবজাতক সময়ের মধ্যে নিযুক্ত কৌশলগুলোর মতো একাধিক জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি আছে।
সারোগেসিতে কত খরচ হয়?
আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবির ক্ষেত্রে ভারতে আনুমানিক ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। এছাড়াও সারোগেট মায়ের সুস্থতা ও চিকিৎসার পেছনেও অনেকটা খরচ করতে হয়।সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান পেতে অনেক ক্ষেত্রে সারোগেট মায়ের আনুষঙ্গিক খরচের পরিমাণ ৩০-৫০ লাখ টাকাও হতে পারে।
বর্তমানে বিভিন্ন দেশে গর্ভ ভাড়া দেওয়া বা সারোগেসি পদ্ধতি অবলম্বন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।