দেশের সংবাদ ফিচার্ড

সিলেটে যে ভয়

সিলেটে যে ভয়

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে ।। সিলেটের হাসপাতালে সংকুলান হচ্ছে না করোনা আক্রান্ত রোগীর। আইসিইউতে ঠাঁই নেই। একসঙ্গে কয়েক গুণ রোগী বাড়ার কারণে অক্সিজেন সংকটের আশঙ্কা। এখনই এই অবস্থা। যদি করোনা পরিস্থিতির  আরও অবনতি হয় তাহলে সিলেটে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিতে পারে। এমন আশঙ্কা সব মহলের। লকডাউনের পর সিলেটে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। নগরে যানজট বাড়ছে।

পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা গিজগিজ করছে। অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে সবকিছু। রোগী বাড়লে চিকিৎসার অভাবে বাড়বে মৃত্যুর মিছিলও। ১লা  জুলাই থেকে সিলেটে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। লকডাউন দেয়া হলেও রোগী কমেনি। মৃত্যুর মিছিল চলেছে। গত ১৬ দিনে সিলেটে সরকারি হিসেব মতেই ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও ৪ হাজারের কাছাকাছি। এই হিসাবের হেরফের হচ্ছে না এখনো। গত শুক্রবার ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে, গতকাল ছিল কিছুটা স্বস্তির দিন। এদিন মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকেরই। দুই সপ্তাহের অধিক সিলেটে আইসিইউ সংকট চলছে। সরকারি বেসরকারি মিলে সিলেটে কোভিড আইসিইউ বেড ১২৫টি। প্রতিদিনই আইসিইউর জন্য স্বজন নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটছে মানুষ। কিন্তু কোথাও মিলছে না আইসিইউ। করোনা আক্রান্ত রোগীরও ভর্তির জায়গা সংকোচিত হয়ে আসছে। আশঙ্কাজনক না হলে রোগীকে বাড়িতেই রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ব্যক্তি উদ্যোগেও অক্সিজেন সংগ্রহ করে চলছে চিকিৎসাসেবা। টাকা দিয়েও মিলছে না চিকিৎসার সুযোগ।

https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24

করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন সবাই। এই অবস্থায় সিলেটে চিকিৎসার পরিধি বাড়ানোও সম্ভব হচ্ছে না। সিলেটে সরকারিভাবে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪০০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপনের দাবি ছিল সব মহলের। সেই দাবির প্রেক্ষিতে ওসমানী মেডিকেল কর্তৃপক্ষও নতুন বিল্ডিংয়ে ৪শ’ বেডের একটি আইসোলেশন ওয়ার্ডের কাজ প্রায় এগিয়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে বেডসহ আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। তবে, বাধ সেধেছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা। সেটির জন্য একটি প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা। কিন্তু টাকা ছাড় না দেয়ার কারণে ৪শ’ বেডের চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা আশাবাদী; খুব শিগগিরই টাকা ছাড় দেয়া হতে পারে। টাকা পেলেই তারা কাজ শুরু করবেন এবং দ্রুততম সময়ে ওসমানীতে করোনা চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো হবে। সরকারিভাবে ওসমানী ছাড়া আর কোথাও করোনা চিকিৎসার পরিধি বাড়ানোর সুযোগ নেই। আছে কেবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। সেগুলোতে ইতিমধ্যে আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হলেও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা ডেডিকেডেট হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালেও ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডেও রোগী বেশি। নতুন করে কেবিনে একজনের পরিবর্তে দুইজন রোগী রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখন রোগীর সংখ্যা প্রায় ১১০ জনের মতো। আর রোগী ভর্তি করলে অক্সিজেন সংকট দেখা দিতে পারে। এ কারণে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩টি ওয়ার্ডে আপাতত রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে এসব রোগীদের চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লকডাউনে সিলেট নগরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গ্রামের পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এখন সিলেটের সব উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনার বিস্তৃতি। এই অবস্থায় গ্রামেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। পশুর হাটকেন্দ্রিক স্বাস্থ্যবিধিও উপেক্ষিত। মাস্ক পরার প্রবণতা নেই সিলেটের মানুষের মধ্যে। সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মোজয় দত্ত জানিয়েছেন, ‘লকডাউনের ফল কিছুটা হয়তো পাওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি কোনোভাবেই স্বস্তি দিচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানলে ঈদের পর হয়তো পরিস্থিতি ভালো হতে পারে।’ বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার রোগীদের জন্য সবার আগে প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন ব্যবস্থা। কিন্তু সেটি নিয়েও শঙ্কা আছে। লকডাউনকালে সময়মতো অক্সিজেনের গাড়ি পৌঁছাতো সিলেটে। কিন্তু লকডাউনের পর ঈদযাত্রায় যানজটে আটকা পড়ছে অক্সিজেনবাহী গাড়ি। এতে করে বেসরকারি করোনা চিকিৎসায় সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে ইতিমধ্যে তারা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

গণদাবি ফোরামের উদ্বেগ: সিলেট বিভাগে আশঙ্কাজনক হারে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি, করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার অপর্যাপ্ততা, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল সংকট, আইসিইউ ও অক্সিজেন সংকটে সিলেটের উন্নয়নমূলক সংগঠন সিলেট বিভাগ গণদাবি ফোরামের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সিলেট বিভাগ গণদাবি ফোরামের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান চৌধুরী এডভোকেট, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চৌধুরী আতাউর রহমান আজাদ এডভোকেট, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমদ, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী গোলাম মর্তুজা, সিলেট জেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান মসুদ রাজা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক চৌধুরী দেলওয়ার হেসেন জিলন, সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি শামীম হাসান চৌধুরী এডভোকেট ও কেন্দ্রীয় সদস্য শিক্ষক আব্দুল মালিক গণমাধ্যমে প্রেরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে বল হয়, সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা সদরে কোভিড-১৯ পরীক্ষা, আইসিইউ স্থাপন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য জনবল নিয়োগ অপিরিহার্য, এছাড়া সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বিভাগের প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার, কর্মচারী নিয়োগ ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি জরুরি ভিত্তিতে প্রদান আবশ্যক। কোভিড-১৯ প্রতিরোধকল্পে হাট-বাজার, মসজিদ-ঈদগাহ, গরুর বাজার, যানবাহন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি পালনে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও বিবৃতিতে বিদেশগামী কর্মজীবী, প্রবাসী ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে স্বল্প সময়ে ও সহজে টিকা প্রদানের সুবিধার্থে জেলা ও উপজেলা সদরে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন, প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকা প্রদান নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও শিক্ষা কার্যক্রম চালুর ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। -মানবজমিন


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন