কানাডার সংবাদ ফিচার্ড

মন্ট্রিয়ল ফোবানা এক টুকরো বাংলাদেশ

মন্ট্রিয়ল ফোবানা এক টুকরো বাংলাদেশ

‘মন্ট্রিয়লে এক টুকরো বাংলাদেশ’ শ্লোগান নিয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে কানাডার মন্ট্রিয়লে অনুষ্ঠিত হলো ৩৬তম ফোবানা বাংলাদেশ সম্মেলন। লেবার ডে উইকেন্ডে ৩-৪ সেপ্টেম্বর শনি ও রোববার সহস্রাধিক প্রবাসী বাংলাদেশির অংশগ্রহনে লাভাল শেরাটন হোটেল দৃশ্যত ‘এক টুকরো বাংলাদেশ’-এ পরিণত হয়।

আয়োজক সংগঠন ছিলো বাংলাদেশ সোসাইটি অব মন্ট্রিয়ল। কনভেনর এজাজ আক্তার তৌফিকের নেতৃত্বে সম্মেলনে দেশ ও প্রবাসের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জমজমাট ছিলো। সম্মেলনে ফোবানার বিদায়ী চেয়ারম্যান আলী ইমাম শিকদার ফোবানার ২০২৩-২০২৪ সালের স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে গিয়াস আহমেদ ও সেক্রেটারী হিসেবে শাহ নেওয়াজের নাম ঘোষণা করে বলেন নতুন চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারী পরবর্তীতে বসে পূর্ণাঙ্গ স্টিয়ারিং কমিটি ঘোষণা করবেন। অপরদিকে কনভেনর এজাজ আকতার তৌফিক ঘোষণা দেন যে, আগামী বছর অর্থাৎ ৩৭তম ফোবানা হবে যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট রাজ্যে। আয়োজক সংগঠন থাকবে বাংলাদেশী আমেরিকান এসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট।

শনিবার সন্ধ্যায় দু’দিনব্যাপী মন্ট্রিয়ল ফোবানা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর ছিলো উদ্বোধনী সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর আগে অপরাহ্নে ছিলো ট্যালেন্ট শো, কাব্য জলসা ও সেমিনার।

“রবীন্দ্রনাথ অনুরাগে নজরুল “দুই কবির মাঝে শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন, নজরুল গবেষক, বাচিক শিল্পী,সংগীত শিল্পী অনিন্দিতা কাজী। মনট্রিয়াল এর আবৃত্তি শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনা,”জোট বাঁধো তৈরী হও “গ্রন্থনা,বেলায়েত হোসেন, নির্দেশনা:ইশরাত আলম। অংশগ্রহণে মুফতি ফারুক, নাওশাবা তাবাসসুম, ঈসা মেহেদী, তৌফিকুর রহমান রাঙা,ইশরাত আলম। বাংলাদেশি ডায়াসপোরা ,সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন লেখক সালমা বাণী। প্রধান আলোচক কাজী জহিরুল ইসলাম,” চর্যাপদ থেকে আজকের বংলা কবিতা” সম্পর্কে খুব সাবলীল বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ থেকে আগত বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী বেলায়েত হোসেন এর আবৃত্তি মুগ্ধতা। এছাড়াও মণিপুরী সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন শেরাম রিপন,হামোদ প্রমোদ। কবি শামিমা কালাম , গীতিকার উপন্যাসিক এম এ করিম নিজের লেখা পাঠ করেন। আরো ছিলেন আমেরিকা থেকে আগত আবৃত্তি শিল্পী কাইজার দর্শক কেমন উপচে পরা ছিল,কত মনোযোগ দিয়ে সবাই শুনেছে।সঞ্চালকের দায়িত্ব কেমন পালন করেছি, এটি আপনার নিজের দায়িত্বে লিখবেন দাদা। একটি ফোবানা মানে গান বাজনা নয়। কাব্যজলসায় বাংলাদেশের সংস্কৃতির আভিজাত্যর প্রকাশ পেয়েছে।

বিকেল থেকেই কানাডার মন্ট্রিয়েল ও টরন্টো সহ কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা সপরিবারে অংশ নেন। এছাড়াও নিউইয়র্ক থেকে শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভেনিয়া, কানেকটিকাট, নিউজার্সী, জর্জিয়া প্রভৃতি রাজ্য থেকেও প্রবাসীরা অংশ নেন। ফলে ফোবানা সম্মেলন স্থল লাভাল শেরেটান হোটেল এক টুকরো বাংলাদেশে পরিণত হয়।

সন্ধ্যায় মূল মঞ্চে কানাডার স্থানীয় এমপি হাউজ ফাদার, সাবেক সিটি কাউন্সিলার মি. মারবিনসহ মূলধারার রাজনীতিক ও ফোবানা নেতৃবৃন্দ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এইদিন আতিকুর রহমান সালু স্বরচিত কবিতা ও এম এ সাদেক বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার অংশ বিশেষ আবৃত্তি করেন এবং প্রবাসের বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কবি নাতনী অনিন্দিতা কাজী। রাতে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী এস আই টুটুল। তিনি দেশের স্মরণীয় শিল্পীদের গানের পাশাপাশি নিজের গান নিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা সঙ্গীত পরিবেশন করে উপস্থিত শত শত দর্শক-শ্রোতাকে মুগ্ধ করেন। মধ্য রাত পর্যন্ত চলে এই অনুষ্ঠান।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন রোববার সেমিনার, আজীবন সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড প্রদান ছাড়াও ছিলো ফ্যাশন শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিন রাতে ফোবানার নতুন স্টিয়ারিং কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। তবে এই কমিটি গঠন করতে ফোবানা কর্মকর্তাদের শনি ও রোববার দফায় দফায় অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হতে হয়।   সবশেষে রোববার গভীর রাতে অনুষ্ঠিত সভায় নতুন কমিটির (২০২৩-২০২৪) চেয়ারম্যান হিসেবে গিয়াস আহমেদ ও সেক্রেটারী হিসেবে শাহ নেওয়জের নাম চুড়ান্ত হয়। এজন্য একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। সম্মেলনের চেয়ারম্যান আলী ইমাম তাদের নাম ঘোষনা করেন। চুক্তি মোতাবেক ২০২৩-২০২৪ সালের চেয়ারম্যান হিসেবে গিয়াস আহমেদ ও সেক্রেটারী হিসেবে শাহ নেওয়াজ দায়িত্ব পান। এবং ২০২৫-২০২৬ সালের ফোবানা চেয়ারম্যান থাকবেন শাহ নেওয়াজ। এর আগে আগামী সম্মেলনের স্থান ও আয়োজক সংগঠনের ঘোষণা দেন কনভেনর এজাজ আকতার তৌফিক। তিনি ২০২৩ সালের সম্মেলন কানেকটিকাট এবং আয়োজক সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশী আমেরিকান এসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বিএএসি) হওয়ার কথা ঘোষণার পাশাপাশি বিএএসি’র সভাপতি নূরুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন চৌধুরীকে পরিচয় করিয়ে দেন। এর আগে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন ফোবানা’র সদস্য সচিব (অপারেশন) ও সদস্য সচিব (অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন) লাবলু আকন। এদিন বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী তাহসান সবশেষে সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। মধ্যরাত ২টার দিকে তার গানের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে।

এবছর  মন্ট্রিয়লে ফোবানার ৩৬তম আসরের সিবিএনএ-এর টিমের ক্লিকে  দু’দিনের ছবি দেখতে হলে নিচের দিনগুলোতে ক্লিক করুন।

মন্ট্রিয়লে ফোবানার প্রথম দিন

মন্ট্রিয়লে ফোবানার দ্বিতীয় দিন

কনভেনর এজাজ আকতার তৌফিক জানান, সর্বসম্মতিক্রমে পরবর্তী সম্মেলন এবং আয়োজক সংগঠন হিসেবে বিএএসি’র নাম গৃহীত হয়েছে। তিনি আরো জানান, ১৬০০ আসন বিশিষ্ট লাভাল শেরাটন হোটেলের বলরুম দু’দিনের সম্মেলনে দর্শক-শ্রোতায় ছিলো প্রায় পরিপূর্ণ। তিনি বলেন, আমরা একটি ভালো সম্মেলন উপহার দিতে গিয়ে পরবর্তীতে ‘নাম্বার ওয়ান’ সম্মেলন উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এজন্য সবার সহযোগিতা পেয়েছি, আমরা ‘নাম্বার ওয়ান’ ফোবানা উপহারদিতে পেরেছি। তাই সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

মন্ট্রিয়ল ফোবানা সম্মেলন উপলক্ষে ‘মন্ট্রিয়লে এক টুকরো বাংলাদেশ’ শীর্ষক বিশেষ স্যুভেনির প্রকাশ করা হয়। এটি সম্পাদনা করেন তাজ মোহাম্মদ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোনিয়া রাজ্যের লস এঞ্জেলেসে, ইলিনয় রাজ্যের শিকগো এবং নিউইয়র্কে পৃথক পৃথক আয়োজনে আরো তিনটি বিভক্তির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে একই সময়ে। পাশাপাশি নিউইয়র্কে ‘বাংলাদেশ কনভেনশন’ নামে আরো একটি সম্মেলন হয় লেবার ডে উইকেন্ডে। নিউইয়র্ক (ইউএনএ)



সংবাদটি শেয়ার করুন