বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী

সেই বিকেলের প্রত্যক্ষদর্শী

সেই বিকেলের প্রত্যক্ষদর্শী

দাবায়ে রাখতে পারবা না...

সেই বিকেলের প্রত্যক্ষদর্শী

”শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,/ রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/ অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।/ তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,/ হৃদয়ে লাগিল দোলা,/ জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা।/ কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?/ গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি;/ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’/ সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।”
‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ শিরোনামের কবিতায় কবি নির্মলেন্দু গুণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রার মহান সোপান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের একটি চিরন্তন কাব্যিক রূপ দিয়েছেন। সেদিনের স্মৃতিকথা আর কবিতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নির্মলেন্দু গুণ বলেন, ‘সেদিন লাখো মানুষের ভিড়ে মিশে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। ওই ভাষণটি আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলাম।
তখন যে কবিতাটি লিখেছিলাম, সেটি ৭ তারিখেই একটি টেলিগ্রাম সংখ্যায় বেরিয়েছিল ‘গণবাংলা’য়। সেই পত্রিকাগুলো এখন আর পাওয়া যায় না। পত্রিকাটি আমি অনেক জায়গায় খুঁজেছি, পাইনি। বঙ্গবন্ধুর পুরো ভাষণটি ছিল একটি কবিতা। এখানে ১০৩টি লাইন আছে। ১৯ মিনিটের দীর্ঘ। প্রথমেই ‘ভায়েরা আমার’ বলে যে সম্বোধন করলেন; মনে হলো, হাজার বছরের বাঙালির যে ভালোবাসার তৃষ্ণা এবং যে প্রত্যয়নির্ভরতা, যার স্বপ্ন দেখেছে সে, সেই নেতা এসে আমাদের সামনে দাঁড়িয়েছেন। ১০ লাখ লোক একসঙ্গে লাফিয়ে উঠেছিল। সব মানুষ আনন্দে উত্তেজনায় একাকার। তাদের নেতার উপস্থিতিতে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছিল তারা।’
আমাদের চিত্রকলার পুরোধা ব্যক্তিত্ব শিল্পী রফিকুন নবীও ছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে। সেদিনই প্রথম বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয় তার। সেদিনের স্মৃতি নিয়ে রফিকুন নবী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কথা মনে পড়লে মনের আয়নায় ভেসে ওঠে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের কথা। এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে, যা এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, এখানেই লাখো মানুষের ভিড়ে প্রথম বঙ্গবন্ধুকে দেখার সৌভাগ্য হয়। তখন আমি সদ্য পাস করা একজন তরুণ শিক্ষক। একদিকে স্বপ্ন দেখছি স্বাধীন বাংলাদেশের, অন্যদিকে মনে কাজ করছে ভয়। যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল বুঝি! সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রেসকোর্সের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ছিল। শোনা যাচ্ছিল, এখানে বোমা ফেলবে পাকিস্তানিরা। হেলিকপ্টারের আওয়াজে মনে হচ্ছিল, যুদ্ধ বোধ হয় তখনই শুরু হয়ে যাবে। অবাক করার বিষয় হলো, এত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেও মানুষের উপস্থিতি কম তো হলোই না, বরং ধীরে ধীরে লোকে লোকারণ্য হতে লাগল চারপাশ। তা ছাড়া সেই ভাষণ শোনার জন্য সেদিন রেসকোর্সে যায়নি এমন কেউ ঢাকা শহরে ছিল বলে মনে হয় না। ওই দিন আমি আর আমার কয়েক পরিচিতজন একসঙ্গে উপস্থিত ছিলাম মাঠে। সেদিনই বঙ্গবন্ধুকে প্রথমবারের মতো দেখলাম। ওই দিনের স্মৃতি কখনোই ভোলার মতো নয়।’
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন তখন কাজ করছেন বাংলা একাডেমিতে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য তিনিও উপস্থিত ছিলেন লাখো মানুষের ভিড়ে। তার মতে, এই ভাষণটি ৭১ সালের সেই উত্তাল মুহূর্তে আমাদের জনজীবনের প্রত্যেক পর্যায়ে এক দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ী শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। ৭ মার্চের দিনটিকে উপজীব্য করে বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিক একটি উপন্যাসও লিখেছেন, ‘সাতই মার্চের বিকেল’ শিরোনামে। দিনটির কথা স্মরণ করে সেলিনা হোসেন সমকালকে বলেন, “মার্চের শুরুতেই ঘোষণা এলো- বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেবেন। তার এই ভাষণকে কেন্দ্র করে দারুণ উত্তেজনা শুরু হয় দেশজুড়ে। অবশেষে এলো সেই আকাঙ্ক্ষিত দিনটি- ৭ মার্চ, ১৯৭১। সেদিন বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে বসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাধারণ ভাষণটি শুনেছি। এ জন্য গৌরব বোধ করি। মেয়েদের জন্য বাঁশ দিয়ে ঘেরাও করা একটি জায়গা ছিল মঞ্চের কাছে। কবি সুফিয়া কামালও ছিলেন সেখানে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শেষ হলে মাঠ থেকে ফিরছিলাম স্বাধীনতার স্বপ্নে মগ্ন হয়ে।
এই ভাষণের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল আমাদের জনজীবনে, তার দুটি উদাহরণ দিলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। প্রথমটি বলব একজন পণ্ডিতজনের কথা, অন্যটি বলব একজন সাধারণ মানুষের।
ভাষণ শোনার পর বাংলা একাডেমিতে গিয়ে স্যার সরদার ফজলুল করিমের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি আমাকে বললেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার পরে আমার মাথা আকাশসমান উঁচু হয়ে গিয়েছে। মাথার ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ছে- এই বুঝি বোমা ফেলবে ওরা! কিন্তু ভাষণ শোনার পর আমি ভীষণ সাহসী হয়ে উঠেছিলাম। আমি আর ভয় পাচ্ছিলাম না। পালানোর চিন্তাই আসে নাই মনে।
এবার বলি একজন সাধারণ মানুষের কথা। সেদিন বিকেলে ভাষণ শেষে ভিড় কমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ময়দানে একজন লোক বাদাম বিক্রি করছিল। আমাকে দেখে বলল, আপা, বাদাম নেন। আমি তার কাছ থেকে বাদাম নেওয়ার সময় সে বলতে লাগল, ‘মুইছা গেছে; মুইছা গেছে পূর্ব পাকিস্তান’। আশ্চর্যের কথা হলো, বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে একবারের জন্যও পূর্ব পাকিস্তান শব্দটি বলেন নাই। তিনি বাংলা, পূর্ব বাংলা, বাংলাদেশ উচ্চারণ করেছিলেন। বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে লোকটির দিকে তাকাই আমি! বঙ্গবন্ধু বলেছেন- ‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।’ সেই মাঠে দাঁড়িয়ে বাঙালির জন্য এমন অবিনাশী কথা আর কী হতে পারে! বাদাম বিক্রেতার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেয়েছিলাম সেই স্বপ্নের ঘোরে তার উজ্জ্বল হাসিমুখ। এভাবেই ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের জনজীবনের প্রত্যেকটি পর্যায়ে স্বাধীনতা তথা মুক্তির ডাক হয়ে কাজ করেছে বলে মনে করি।”
প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক মামুনুর রশীদের মনে যুদ্ধের প্রেরণা আর সাহসের রক্তবীজ রোপিত হয়েছিল আজকের দিনে; রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সময় সশরীরে উপস্থিত থেকে। দিনটির কথা মনে করে তিনি জানালেন, “৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন- এই খবর শোনার পর এক ধরনের উত্তেজনা ভর করেছিল মনে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনব- এই ছিল সংকল্প। পরদিন সকাল হতেই দেখি বন্ধুরা হাজির। গুণ [কবি নির্মলেন্দু গুণ] বাবুলসহ আরও যেসব বন্ধু ছিল; সবার মধ্যেই এক ধরনের উত্তেজনা- আজ কিছু একটা হবে। চারদিক লোকে-লোকারণ্য; তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সবারই প্রতীক্ষা- কখন আসবেন বঙ্গবন্ধু! আমরা দল বেঁধে গিয়ে বসলাম ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউিটের কোণায়। একটু দেরিতেই এলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সরাসরি উঠে পড়লেন মঞ্চে। সে মুহূর্তে ময়দানের ওপরে হেলিকপ্টার চক্কর দেওয়া দেখে অনেকের মতো আমিও ভয় পেলাম। তবুও শঙ্কা আর আতঙ্ক নিয়ে বসে থাকলাম। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু মুখ খুললেন। দরাজ কণ্ঠে শুরু করলেন তাঁর ভাষণ- ‘ভায়েরা আমার…’
৭ মার্চের ভাষণের একেকটা শব্দ, বাক্য, বঙ্গবন্ধুর দরাজ কণ্ঠের উচ্চারণ সরাসরি বুকের মাঝে আঘাত হানতে লাগল। শিহরিত হয়ে উঠছিলাম। তিনি যখন বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’; তখন পৃথিবীর সমস্ত ভয় কেটে গেল। মনে হলো, আর থেমে থাকা নয়। যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতেই হবে। তখন বয়স মাত্র ২৩। তারুণ্যে টগবগ করতে থাকা আমি এবং আমার বন্ধুরাও এ কথা নতুন করে উপলদ্ধি করলাম। তখনই জানতাম না, এর পরের ইতিহাসটা অন্যরকম হতে যাচ্ছে। স্বাধীন বাংলার মানচিত্র ছিনিয়ে আনার যে শক্তি, সাহস বাঙালি জাতি পেয়েছিল, তার সূচনা ৭ মার্চের এই ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে। সেদিন বঙ্গবন্ধু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন- আমরা কোনোভাবেই দুর্বল নই। শোষণ, নির্যাতন, নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আমাদের যা কিছু আছে, তা নিয়েই লড়াই করতে হবে। তাহলে পাওয়া যাবে মুক্ত-স্বাধীন একটি দেশ। এটা সত্যি বলে প্রমাণ হতেও সময় লাগেনি। কারণ ৭ মার্চের ভাষণের পর আমাদের বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি।”
নাট্যব্যক্তিত্ব ও পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিলেন সাহসিকতার সঙ্গে। বিশেষ করে ঢাকায় পরিচালিত বিভিন্ন গেরিলা হামলার নেতৃত্ব দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিষদাঁত ভেঙে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ৭ মার্চের ভাষণের আগ থেকেই তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তার কাছে ৭ মার্চ ছিল স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা। শক্তি আর সাহস জোগানো সেই ভাষণের দিনটির কথা বলতে গিয়ে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, “বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে থাকি। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ৬ মার্চ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ ছিল উত্তাল। সেদিন রাতে ছিল কারফিউ। পাকিস্তানি বাহিনীর নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতায় ঢাকা তখন লাশের মিছিলে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেবেন এবং তার ঘোষণায় আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে। সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে আমরা তৎপর হয়ে পড়লাম। বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে আসার আগেই সারাদেশের কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা মিলে ১০ লক্ষাধিক মানুষ রেসকোর্স ময়দানে এসে হাজির হয়। কৃষকরা হাজির হয় লাঙ্গল ও কাস্তে নিয়ে। শ্রমিকরা আসে কোদাল ও শাবল নিয়ে। বিকেল ৩টার একটু পর বঙ্গবন্ধু এলেন। তিনি ভাষণ দিলেন। আমরা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সবাই মঞ্চের খুব কাছেই ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিল। রেডিও পাকিস্তান ঐতিহাসিক এই ভাষণটি প্রচার করেনি। আমরা তখন শাহবাগের রেডিও পাকিস্তান ও আজিমপুরের সেনা রিক্রুটমেন্ট অফিসে আক্রমণ করলাম। পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়ে ৮ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করে। হুকুম দিতে না পারলেও আমাদের কী করণীয়- এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু তার বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশনা অনুসরণ করেই সমগ্র বাঙালি সম্ভাব্য পাকিস্তানি আক্রমণের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রস্তুত করেছিল।”
কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে মঞ্চের একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে শুনেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সেই জাদুমাখা ভাষণ। নিজের উপস্থিতির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন বিদেশি রেডিও সাংবাদিক ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সকাল থেকেই একজন দোভাষী খুঁজছিলেন- সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দেবেন তা তাৎক্ষণিক ইংরেজি করে তাকে শোনাবেন, সে জন্য। দুপুরের আগে আমার সঙ্গে তার যোগাযোগ হলো। মাঠে সেদিন কত মানুষ ছিল, কেউ বলতে পারবে না। হয়তো ১০ লাখ। হয়তো আট লাখ। ভাষণ শুরুর আধ ঘণ্টা আগে যখন বিদেশি সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে বেরোই, মনে হলো, সারাদেশ ভেঙে পড়েছে রেসকোর্স মাঠে। সাংবাদিকদের জন্য মঞ্চের সামনে জায়গা ছিল। তিনি হাত ধরে আমাকে টেনে সেখানে নিয়ে গেলেন। এত সামনে থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে পাব, ভাবতেও পারিনি! বঙ্গবন্ধুকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছিল। বক্তৃতা শুরুর আগে দু’একবার হাত দিয়ে মাথার চুল ঠিক করলেন; আকাশে একটা হেলিকপ্টার উড়ছিল। সেদিকে একবার তাকালেন। তারপর সামনের মানুষের দিকে গভীর দৃষ্টি ফেললেন। তিনি বক্তৃতা শুরু করলেন। পুরো বক্তৃতাই এখন পাওয়া যায়। কিন্তু যা পাওয়া যায় না, তা হচ্ছে ওই কুড়ি-বাইশ মিনিটের জাদু। সেই জাদুর স্পর্শ অনুভব করেছিল তারাই, যারা সেদিন রেসকোর্সে ছিল। বঙ্গবন্ধু কথা বলছিলেন না; তিনি যেন বাঙালি জাতির সংগ্রামী ইতিহাসের একটা মুখবন্ধ লিখছিলেন। এ রকম গভীর আর জলদ-কণ্ঠের ভাষণ বঙ্গবন্ধুও হয়তো আর দেননি এবং বক্তৃতাটি শেষ হলে কারও মনে কোনো সন্দেহ ছিল না- তিনি কী চাইছেন। তিনি যা চাইছিলেন, আমরাও তা চাইছিলাম- বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং তার ভাষণে তিনি মানুষকে প্রস্তুত হতে বলেছিলেন। সারা মাঠের মানুষ নিঃশব্দে শুনছিল সেই জাদুময় ভাষণ, যা তাদের সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে তাদের একেকজন যোদ্ধায় পরিণত করেছিল।’

আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ     
কানাডার সংবাদ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 5 =