সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার রোজিনার দেশে ফেরার আকুতি
‘হাতে-পায়ে গরম পানি ঢালে গো আম্মা। আব্বা গো, আমারে চিকিৎসাও করায় না। আমারে যে মাইর মারে, আমারে চুল ধইরা টানে। ও আম্মা গো, আমি আর বাঁচতাম না। আমারে মাইরা ফালাইব গো মাই। আমারে তাড়াতাড়ি দেশে নেও, তাড়াতাড়ি নেও।’
ভিডিও কলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন সৌদি আরবে বর্বরোচিত নির্যাতনের শিকার রোজিনা আক্তার (২৭)। তিনি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার উছমানপুর গ্রামের সুন্দর আলীর মেয়ে।
গত শনিবার স্বজনদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয় রোজিনার। তখনই তিনি সৌদি আরবে তার ওপর বর্বরোচিত নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
রোজিনার বাবা সুন্দর আলী জানিয়েছেন, মেয়ের সঙ্গে কথা হওয়ার পর গত সোমবার তিনি দালাল দুলাল মিয়াসহ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। মেয়েকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
সুন্দর আলী বলেন, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর দালাল দুলাল মিয়া ঢাকার মডেল এভিয়েশন সার্ভিসের মাধ্যমে রোজিনাকে সৌদি আরবের দাম্মাম পাঠায়। উচ্চ বেতনের কথা বলে মেয়েকে সৌদি আরবে পাঠানো হলেও সেখানে যাওয়ার পর থেকে তার ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মেয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগই বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। কোনো একভাবে মেয়ে শনিবার ফোন করতে পেরেছিল। ওর ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, তা চোখে দেখা যায় না।
চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, রোজিনা আক্তার খুবই দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। পরিবারের অসচ্ছলতা ঘোচাতে দালাল ধরে বিদেশে যান। সেখানে তার ওপর নির্যাতনের বিষয়টি দুঃখজনক। তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক মোজাহিদ আলম জানান, মামলাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, সৌদি আরবে নির্যাতনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
-সূত্র: সংবাদ ও ছবি: দৈনিক বাংলা