দেশের সংবাদ ফিচার্ড

হাই-সিকিউরিটি সেলে যেমন আছেন প্রদীপ

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ

হাই-সিকিউরিটি সেলে যেমন আছেন প্রদীপ

ফাঁসির আসামির নির্ধারিত ড্রেস পরে কাশিমপুরের হাই-সিকিউরিটি পার্ট-৪ এর একটি কনডেম সেলে দিনযাপন করছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ। সিসিটিভি ক্যামেরাসহ কারাগারের অভ্যন্তরে দায়িত্ব পালন করা দুই গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নজরদারিতে রয়েছেন তিনি। ঘণ্টায় ঘণ্টায় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তার খোঁজ নিচ্ছেন। সাধারণত কারও সঙ্গে কথা বলছেন না সাবেক এই ওসি। কারা কর্তৃপক্ষের লোকজন গেলে তাদেরকেও এড়িয়ে চলছেন। এদিকে কাশিমপুর কারাগারের হাই-সিকিউরিটি সেলে আনার পর তিন দিন হয়ে গেলেও তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। দেখা করার আবেদনও দেয়নি কেউ। নিয়ম অনুযায়ী কনডেম সেল থেকে নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে ফোনে কথা বলতে পারেন আসামিরা।

ওসি প্রদীপকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো তিনি কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন কিনা। জবাবে প্রদীপ জানান, কথা বলার মতো তার কেউ নেই। তার স্ত্রী ও সন্তান বর্তমানে ভারতে আছেন। নিকট আত্মীয়দের বেশির ভাগ আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাই আপাতত কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থা নেই। কাশিমপুর কারাগারের হাই-সিকিউরিটি সেলে দায়িত্ব পালন করা এক কর্মকর্তা  এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, সরকারি দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ফাঁসির আসামিদের আমরা দেখভাল করি। ওসি প্রদীপের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আলাদা কোনো দিকনির্দেশনা নেই। তিনি অন্যান্য সাধারণ ফাঁসির আসামির মতোই আছেন। তার নামে কোনো ধরনের ডিভিশনও নেই। হাই-সিকিউরিটি ইউনিটে ৮৮৭ জন ফাঁসির আসামি রয়েছে। অন্যরা যেমন আছে তিনিও তাই থাকবেন। কাশিমপুর কারাগারে ১ হাজার ১৪টা সেল আছে। কারা কর্মকর্তারা জানান, কাশিমপুর জেল হাই-সিকিউরিটি ইউনিট একমাত্র সেল সিস্টেম। বাংলাদেশের বাকি ৪৬৭টি কারাগারে ওয়ার্ড সিস্টেম। তিনি জানান, গত কয়েকদিনে ওসি প্রদীপকে সাধারণ আসামিদের জন্য বরাদ্দ খাবার দেয়া হচ্ছে। কোনো আসামি চাইলে কারাগারে থাকা প্রিজনার ক্যাশ (পিসি) বা ব্যক্তিগত তহবিল থেকে টাকা খরচ করে ভালো মানের খাবার কিনতে পারেন। ওসি প্রদীপ গত কয়েকদিনে কারা ক্যান্টিন থেকে বিশেষ কোনো খাবার কেনেন নি। তার পিসিতে কতো টাকা আছে বা আদৌ আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কারাগারে আটক বন্দিদের ব্যক্তিগত তহবিলে (পিসি) অর্থ জমা রাখার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কেউ কারাগারে আটক বন্দিদের পিসিতে টাকা জমা করতে চাইলে ডাকযোগে মানি অর্ডার করতে পারেন। আবার ব্যক্তিগত ভাবেও বন্দির আত্মীয়স্বজন পিসিতে অর্থ জমা দিতে পারেন। রিজার্ভ গার্ডে কর্তব্যরত প্রধান কারারক্ষীর সহযোগিতায় এই অর্থ জমা দেয়া যায়। কারাগারের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ওসি প্রদীপের সঙ্গে সম্প্রতি কোনো নিকট আত্মীয় দেখা করেননি বিধায় তাদের পক্ষ থেকে তার পিসিতে টাকা জমা হয়নি। আবার ডাকযোগে মানি অর্ডারও আসেনি। এর আগে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে বুধবার (৯ই ফেব্রয়ারি) রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে নেয়া হয়। রায় ঘোষণার পর প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নির্ধারিত পোশাক পরিয়ে তাদের কনডেম সেলে রাখা হয়। এরপর তাদের চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাদের কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। ২০২০ সালের ৩১শে জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ই আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত। কক্সবাজারের র‌্যাব-১৫ মামলাটির তদন্তভার পায়। ওই বছরের ৭ই আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর ২০২১ সালের ২৪শে জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসেন। মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিতর্কিত ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। তবে এ মামলা থেকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যসহ সাতজনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।

-কাজী সোহাগ, মানবজমিন

 


সংবাদটি শেয়ার করুন