ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

পিতাপৃথিবী | পুলক বড়ুয়া

পিতাপৃথিবী | পুলক বড়ুয়া

বাবারা তো বাউলই হন
বেশিরভাগ সময় বাইরে বাইরে থাকেন
ঘর থেকে যখন তখন বের হন
প্রতিদিন বাইরে বেরিয়ে যান
প্রয়োজনে কিছুদিন ঘরহীন হয়ে যান
মাঝেমধ্যে গৃহহীন হয়ে থাকেন
ঘর ছেড়ে তাদের সময় বৈরাগী হয়ে যায়
বিবাগী বাতাসে ছুটতে থাকেন
না, বোহেমিয়ান নন
দায়িত্ব ও কর্তব্যের টানে

এই যেমন আমার বাবার ছায়াকে
দেখে মনে হয়, আবছায়া এক সন্ন্যাসী
ছায়া মানে সত্তার বাইরে তার মানস-চারণ
বস্তুগত চিন্তার বাইরে তার
সমাজ-সংস্কৃতির ভাববিশ্বে বিচরণ
তার আকর গ্রন্থ ‘জন্মভূমি’তে
ছড়ানো ছিটানো বিছানো সে কথা
একটি সময়ের স্থান-কাল-পাত্রের
দলিল হয়ে আছে
এই অসামান্য এক ইতিহাসের পাতায় পাতায়

বৈরিতার বিন্দুবিসর্গ তার
চারিত্রবৈশিষ্ট্যে দাগ কাটতে পারেনি
মুক্তিযুদ্ধে যখন বাবা রাজনৈতিক কারণে
পাকহানাদার বাহিনীর আগ্রাসনের মুখে
আমাদের নিয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেলেন
সারাজীবন চিকিৎসাভোগীর দল
আমাদের অরক্ষিত বাড়ি পুড়িয়ে ফের যুদ্ধকালীন
ব্যাক্তিক সংঘর্ষে আহত হয়ে বেশরমের মতো
আমাদের পোড়োবাড়ির বিধ্বস্ত ‘নিরাময় ক্লিনিক’-এ চিকিৎসক পিতার সকাশে দ্বারস্থ হতে কসুর করেনি
পিতা তাদের বিমুখ করেননি

এমনই তিনি

তাঁকে দেখেই বুঝতে কষ্ট হয় না
কেমন ছিলেন, গৃহী গৈরিক হাছন রাজা
আজন্ম বাউলা এক প্রাণ
যদিও বাবা কখনও বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি খোঁজেননি

সদা সহজাত উদারহস্ত, দিলখোলা, সরলপ্রাণ
সহজ মানুষেরাই সংসারে সন্ন্যাসী

ঘরে ও বাইরে নৈঃশব্দ্যে-নৈঃসঙ্গে
সময়-অসময় ফেলে  প্রাণ থেকে প্রাণে
আজন্ম অকুণ্ঠ ভেসে যাওয়া এক
হিতব্রতী-ব্রতচারী-আরোগ্যতরী

এই স্বনির্মিত বাতাবরণে একান্ত উজ্জ্বল তিনি
সারাজীবন একজন মঙ্গলমানব মৌলিক মানুষ
আমাদের মননে আননে একজন আদর্শ পৃথিবী
আমাদের আঁখির অনন্ত অহম-অলঙ্কার-আলপনা

আজও তিনি শতাব্দীপ্রাচীন মহীরুহের মতোন
আমাদের ছায়াময় মায়াময় মহাপৃথিবী
আমাদের সবার ওপরে নির্মল আকাশ
আমাদের বুকের ভেতরে বিশুদ্ধ বাতাস

আমরা তাঁর ছায়াপৃথিবী মায়াপৃথিবী
বিশদ বিপুল এক
পিতাপৃথিবীর আবছায়া কায়া ।


সংবাদটি শেয়ার করুন