জীবন ও স্বাস্থ্য ফিচার্ড

ব্লাডম্যান মনির; সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াটার মধ্যেই যার শান্তি

ব্লাডম্যান মনির (ডানে) এর সাথে সাংবাদিক জীবন পাল (বামে)

ব্লাডম্যান মনির; সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াটার মধ্যেই যার শান্তি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ঢাকা মেডিকেলের ইনচার্জের মাধ্যমে মনিরকে কল দিয়ে বলা হয় জরুরী ভিক্তিতে এ পজিটিভ রক্ত সংগ্রহ করে দিতে। মনির উনাকে ফোনে লাইনে রেখে আরেকটি ফোন দিয়ে কল করে ২ মিনিটের মধ্যে এক ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে দেয়।
পিজিতে ভর্তি ছিলো ১৩ বছরের  জামালপুরের এক অসহায় মেয়ে। যার কিডনি দুটোই ডেমেজ হয়ে গিয়েছিল, পানি জমে গিয়েছিল শরীরে, ব্রেইনে এফেক্ট করেছিল। তার জন্য জরুরী ভিক্তিতে ‘ও নেগেটিভআ রক্ত দরকার ছিল। রক্ত জোগাড় হলেও টাকার অভাবে ব্লাড ক্রসমেচসহ আনুষাঙ্গিক খরচের টাকা ছিলনা রোগীর হাতে।

সাথে সাথে মনির ৮ হাজার টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছিল। যদিও মেয়েটা পরে মারা যায়।

এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে। যার সাথে মনির ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত।

আমরা ফেসবুকে অনেক রক্ত সংগ্রহে করে দেওয়া গ্রুপ দেখে থাকি। কিন্তু প্রয়োজন মতো সহযোগিতা পাওয়াটা খুব একটা সহজ হয়না। তার মধ্যে প্রতারনার ফাঁদ তো আছেই।

এ বিষয়ে সবদিক ভালভাবেই মনিটরিং করে মানুষকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কাজে সদাপ্রস্তুত এই বন্ধুটি।

লকডাউনের শুরুর সময় (২৬ মার্চ,২০২০ ইং) সবাই যখন যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে ২৫ মার্চ হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলো। মনির তখন শুধু দর্শক হয়ে তা দেখে ঢাকায় রয়ে গিয়েছিল। কিছুদিন পর কাজকর্মসহ সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবার পর যাদের বাজার,খাবার সমস্যা শুরু হয়েছিল, মানিক তখন তার সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। নিজের বেতনসহ বাড়তি আয়ের টাকা থেকে সে প্রকৃত সমস্যায় পড়ে যাওয়া মানুষের জন্য বাজার করে দিয়েছে। তারপর নিজের সংগঠনের সহায়তায় খাবার প্রদান করা শুরু করে। শুরুর দিকে করোনা রোগী দেখার কৌতুহল থেকে কুর্মিটোলার আশপাশ গিয়ে উঁকি মেরেছিল।

ঐ পরিস্থিতিতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে লকডাউন এলাকায় বাজার পৌঁছে দিয়েছে সে। কিছু কিছু অকৃতজ্ঞ মানুষ থেকে ধন্যবাদটুকুও পাইনি।  সেটা নিয়ে অবশ্য তার একটা দুঃখ রয়ে গেছে। কিন্তু কি আর করা। আমাদের অনেকের মনমানসিকতা,শিক্ষা, সামাজিকতার কারণে হয়তো এমন হয়ে থাকতে পারে।

মনির অনেকগুলো ব্লাড সংগ্রহের গ্রুপে একটিভ। একটিভ মানে যে শুধু ফেসবুকে  একটিভ তা কিন্তু নয়। গতদিন আমার সামনে তার ফোনে একটা কল আসলো যে, প্লাজমার জন্য ২৪ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। সাথে সাথে দেখলাম রক্ত সংগ্রহের চিন্তায় সে যোগাযোগ শুরু করে দিলো।

আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম – একসাথে ২৪ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করাটা খুব কঠিন হয়ে যাবে না?

মনিরের উত্তর – চাইলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়।

আসলেই,মন থেকে চাইলেই অনেক কিছুই করা সম্ভব। যেমন সেদিন আরমান বুঝিয়ে দিয়েছিল চাইলে কিভাবে আকাশ ছোঁয়ার দাড়প্রান্তে ছুটে চলা যায়।

পুরো নাম মনিরুল ইসলাম। বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার ৯ নং ছুটিয়াকাঠি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের বালিহারী গ্রামের ব্যবসায়ী নজরুল  ইসলামের সন্তান সে। দুই ভাই তিনবোনের মধ্যে মনির বড়। মনির দীর্ঘদিন থেকেই ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করে যাচ্ছে।

চাকুরীর পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক সংগঠনের সাথে জড়িত মনিরের স্বপ্ন – পরিচিতদের মাধ্যমে যতটুকু পারা যায় বেকারদের কর্মসংস্থানের একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া। তার কাছে এই কাজটিও খুব কঠিন মনে হয়না। তার মতে- ভাল অবস্থানে থাকা কিংবা কোন অফিস,ফ্যাক্টরী ও কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কেউ নিজের রেফারেন্সের মাধ্যমে একজন বেকারকে কাজের সুযোগ করে দিতে পারে। সেটা যে কোন কাজই হোক।

আর আমাদেরও উচিত, এরকম পরিস্থিতিতে এত যাচাই বাছাই না করে যেখানে সুযোগ পাওয়া যায় সেখানেই মাথা ঢুকিয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ শুরু করে দেওয়া। বেকার না থেকে সুযোগ পেলে যে কোন একটা কাজে লেগে পড়াটা জরুরী ।

সংবাদ সংযোগ # জীবন পাল

সংবাদটি শেয়ার করুন