প্রবাসের সংবাদ

প্রবাস থেকে কেউ ফিরেছেন লাশ হয়ে, কেউ নিঃস্ব হয়ে

প্রবাস থেকে কেউ ফিরেছেন লাশ হয়ে, কেউ নিঃস্ব হয়ে

প্রায় পাঁচ বছর ধরে লিবিয়ায় কৃষিকাজ করছিলেন নোয়াখালীর সেনবাগের হারাধন চন্দ্র। সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে গিয়েছিলেন দেশটিতে। এরপর বিভিন্ন সময় দালালের খপ্পরে পড়ে আরও প্রায় ১৩ লাখ টাকা গচ্চা দিয়েছেন। এর জন্য দেশে স্ত্রী-কন্যার গয়নার পাশাপাশি জমি বিক্রি করতে হয়েছে। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার অভাবে তাঁর কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। তাঁর ছেলে বেনু নম দাস বলেন, এ মাসেই দেশে ফেরার কথা ছিল বাবার। ফিরেও এসেছেন, কিন্তু জীবিত নয়, লাশ হয়ে।

হারাধনের মতোই লাশ হয়ে ফিরেছেন নরসিংদীর রায়পুরার তানিয়া বেগম, ঢাকার নবাবগঞ্জের আবদুল কুদ্দুস, যশোরের ঝিকরগাছার শাহ আলম, গাইবান্ধার চণ্ডীপুরের ফুল মিয়াসহ মোট সাতজন। বিভিন্ন সময় লিবিয়ায় মারা যাওয়া এ প্রবাসীদের লাশ এসেছে আজ বুধবার। এ ছাড়া সে দেশ থেকে ফিরেছেন আরও ১৪১ প্রবাসী কর্মী। বিশেষ উড়োজাহাজে করে তাঁরা দেশে ফেরেন।

লাশ হয়ে ফেরা ফুল মিয়ার ছেলে সোলায়মান সরকার জানান, ১১ বছর লিবিয়ায় থাকা তাঁর বাবা মাঝেমধ্যে টাকা পাঠাতেন দেশে। একটি হোটেলে কাজ করতেন তিনি। কিডনিজনিত সমস্যায় পড়ে ছয় মাস আগে থেকেই দেশে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ফিরতে পারছিলেন না। এর মধ্যে কয়েক দফায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয় তাঁকে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে মারা যান ফুল মিয়া।

কাজ হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় দেশে ফিরেছেন বগুড়ার আদমদীঘির শহিদুল ইসলাম। তাঁর স্ত্রী রুপালি জানান, আট বছর লিবিয়ায় থাকলেও নিয়মিত টাকা পাঠাতে পারতেন না দেশে। সেখানে অবকাঠামো খাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। করোনার প্রভাবে কাজ নেই, আয়ও ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। আজ ফিরে আসা নরসিংদীর বেলাবোর মাসুদ মোল্লা, রায়পুরার জুরাইন মিয়া, কিশোরগঞ্জের শ্রীনগরের মজনু মিয়া, নোয়াখালীর সেনবাগের আবদুল মান্নান, টাঙ্গাইলের কালিহাতীর মো. তাহের, চাঁদপুরের হাজিগঞ্জের ইয়াকুব ইসলামসহ অনেকের অবস্থাই শহিদুলের মতোই।

অভিবাসন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইউরোপের দেশ ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দালালের মাধ্যমে অনেকেই নিয়মিত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ লিবিয়ায় যান, যার মধ্যে কেউ লাশ হয়ে আর কেউ ফেরেন নিঃস্ব হয়ে। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা বিমানবন্দরে নামেন লিবিয়াফেরত প্রবাসীরা। এরপর প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক ও আর্মড পুলিশের (এপিবিএন) সহায়তায় তাঁদের খাবারসহ জরুরি সহায়তা দেয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের একটি টিম। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৩৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রত্যেককে অর্থসহায়তা করেছে। সকালে নামলেও বিমানবন্দরে তাঁদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে দুপুর পেরিয়ে যায়।

জানা গেছে, লিবিয়া থেকে বাংলাদেশিদের নিয়ে ফ্লাইট বেনিনা বিমানবন্দর থেকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় উড্ডয়ন করে। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই ভ্রমণ ভিসায় দুবাই হয়ে ইউরোপের উদ্দেশে লিবিয়া গমন করেছিলেন। প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি এভাবে লিবিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় সাগরে ডুবে মারা যান।

-প্রথমআলো ( প্রবাস থেকে কেউ ফিরেছেন লাশ হয়ে, কেউ নিঃস্ব হয়ে )

 

সংবাদটি শেয়ার করুন