কমলগঞ্জবাসীর স্বপ্ন কি পূরণ হবে, নাকি স্বপ্নই থেকে যাবে?
কমলগঞ্জে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের জমিতে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের গণদাবি
বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী বিভাগ সিলেট। সিলেট বিভাগের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় জেলা মৌলভীবাজার। এ জেলার পর্যটন রাজ্য তথা অন্যতম উপজেলা কমলগঞ্জ। কমলগঞ্জ উপজেলা বরাবরই পাহাড়ি বনাঞ্চলে আবৃত্ত। পাহাড় টিলা আর অনাবিল সৌন্দর্যের সবুজ চা বাগান ঘেরা নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কমলগঞ্জ। এই উপজেলায় রয়েছে বণ্যপ্রাণীদের নিরাপদ অভয়ারন্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, সবুজ সমারোহের চা বাগান, মাগুড়ছড়া গ্যাসকূপ, বিভিন্ন চা বাগানের প্রাকৃতিক লেক ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র, প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আর বিভিন্ন প্রজাতি উদ্ভিদরাজি। এছাড়া এ উপজেলায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী আধিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। যাদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের জন্য কমলগঞ্জ শুধু দেশব্যাপী নয় বিশ্বব্যাপীও পরিচিত।
৪২৬.৭২ বর্গ কিলোমিটারের এই উপজেলা ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই উপজেলার বসবাসকারী মোট লোকসংখ্যা প্রায় ৪ লাখের মত। উপজেলায় শিক্ষার হার ৪৮.৬% (যার মধ্যে পুরুষ ৫১.৪% ও মহিলা ৪৫.৯%)। তবে নিরক্ষর লোকের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। সীমান্তবর্তী এ উপজেলায় ৪টি কলেজ ও ২৩-২৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য এই উপজেলা কিংবা জেলায় নেই কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, নেই সরকারি কোন মেডিকেল কলেজ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখও দেখেনি এই জেলা। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর এই জেলার প্রায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের বেগ পোহাতে হয় উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায়। ছুটতে হয় দূর থেকে দূরান্তরে। উচ্চ মাধ্যমিকের পর অস্বচ্ছল অধিকাংশ মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটাতে পারে না। তবে যাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা আছে তারা ছুটছেন সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তরের বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। তবে মেয়েদের বেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যেন রীতিমতো অস্ত্র বিহীন যুদ্ধ করার মত। পলকে পলকে পরিবারের সাথে যুদ্ধ করে কিংবা আকুতি মিনতি করে খুব অল্প সংখ্যক মেয়ে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে পাড়ি দিতে পেড়েছে এই জনপদের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়ার সুযোগ করে নিতে।
বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে যারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছেন তারা দেশে বিদেশের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ে থেকে কমলগঞ্জের পরিচিতি বৃদ্ধি করাচ্ছেন। চিকিৎসক, এসপি, জজ, ব্যারিস্টার, অধ্যাপকসহ বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ে চাকুরীরত লোকের বসবাস রয়েছে এই উপজেলার মধ্যে। অনেক চিকিৎসক দেশ ও দেশের বাহিরের মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করছেন। অনেকে আবার মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করছেন।
কমলগঞ্জবাসী তথা মৌলভীবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি জেলায় ‘সরকারি মেডিকেল কলেজ’ স্থাপনের। দীর্ঘদিন থেকেই তারা এই দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ উপজেলার দিনমজুর, কৃষক, শ্রমিক, নিন্ম আয়ের মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি কমলগঞ্জে একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হবে। তারা প্রাণভর স্বপ্ন দেখছেন তাদের নিজ উপজেলা তথা নিজ জেলাতেই যে কোন রোগে উন্নত চিকিৎসা নিবেন। তাদের এই স্বপ্ন কি পূরণ হবে, নাকি স্বপ্নই থেকে যাবে?
তবে কমলগঞ্জবাসী তথা মৌলভীবাজারবাসীর এই স্বপ্নের বাস্তব রূপ দেখাতে জাতীয় সংসদের ২০২১ সালের বাজেট অধিবেশনে যোগ দিয়ে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি তাঁর নির্বাচনী এলাকা কমলগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। গত রোববার (৬ জুন) সম্পূরক বাজেট আলোচনায় এ দাবি জাতীয় সংসদে উত্তাপন করেন তিনি। এর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোষ্টের মাধ্যমে সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবি বাস্তবায়নে সরব প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন কমলগঞ্জবাসী। কমলগঞ্জবাসী তথা মৌলভীবাজারবাসীর প্রাণের দাবি সংসদে উত্থাপন করায় উনার নির্বাচনী এলাকা কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গলের জনসাধারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোষ্টের মাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি তার বক্তব্যে বলেন, কমলগঞ্জে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তিনশত একরের মতো পর্যাপ্ত জায়গা আছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়, আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাস স্থাপন করা সম্ভব। এসময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, কমলগঞ্জের ভানুগাছ ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন মধ্যবর্তী জায়গায় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধিনস্থ প্রায় তিনশত একর ভূমি রয়েছে। যার মধ্যে ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্টা লাভ করা হীড বাংলাদেশ নামে একটি এনজিও সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বটতলা নামক স্থানে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের প্রায় ৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে সেখানে তাদের একটি দপ্তর, একটি গেষ্ট হাউজ ও একটি কুষ্ট ও যক্ষা হাসপাতাল পরিচালনা করেছে। আর প্রায় ৭০ একর ভূমি বনবিভাগের অধিনে রয়েছে। অন্য জমিগুলো পরিত্যক্ত থাকলেও কিছুটা বেদখল হয়েছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের যে ভূমি রয়েছে তাতে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার জন্য উপযুক্ত জায়গা হতে পারে । এই জায়গায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন করলে সরকারকে আলাদাভাবে ভূমি ক্রয় করতে হবে না, সরকারের অনেক সাশ্রয় হবে। এখানকার পরিবেশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া এই উপজেলায় শমশেরনগর ইউনিয়নে একটি বিমানবন্দর থাকায় আকাশপথেও যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে।