দু জন মিলে কুড়িয়ে নেবো রাঙা বসন্ত ;
এখনও শ্মশান জগতে অনেকটা সময় বাকি ;
হয় তো তার মধ্যেই চিতাকাঠ সাজানো হয়ে যাবে ;
শুরু হয়ে যাবে মহাকালের প্রলয় নৃত্য ;
একটু একটু করে ফিরে এসেছে ফেলে আসা দিনলিপি ;
উঠানে অনেক দিন পা পড়েনি প্ৰথম প্রেমিকার ,
নির্জন দুপুরের ঘুঘু পাখির ;
অথচ , বসন্ত উৎসবে সকলেই গেছে
কোনও এক আরশিনগরে ;
যেখানে হয় তো রোদ্দুর-রঙে মেতে ওঠেছে
রঙবেরঙের প্রজাপতি সকল ;
প্রাচীন বাড়ির পলেস্তরাও খসে খসে পড়ে
একটা ছন্দ জুড়ে ;
ঘুমিয়ে থাকে রূপকথার সেই রাজ কুমারী ;
চাই কেবল একটা সোনার কাঠি আর একটি
রুপোর কাঠি ;
নুড়ির ভিতরে জমে হয়ে থাকা স্বপ্ন গুলো শব্দ তোলে মাঝেমধ্যে ;
ঠিক যখন শুকনো হলুদ পাতা মাড়িয়ে
কোনও এক আজানা কিশোরী হেঁটে যায়
ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতে বুনতে ;
পারলে তুই ওভাবেই হেঁটে আসিস ;
পুরানো দিনের গল্প কথা গুলো বার বার শুনিয়ে যায়
নরম মনের নরম বাতাস ;
হয়তো সে কারণে নদী এখনও শান্ত ;
শান্ত তোর অতীত সকল ;
তোর সঙ্গে দেখা হলে একটা গল্প শোনাবো ;
আমার সেই পুরনো দিনের গল্প ;
যেখানে কোনও দিনের জন্য তুই ছিলিস না ;
কেবল প্রথম সকালের আলো ঝলমল করতো
বস্তুর মধ্যে উড়ে আসা পাখির ডানায় ,
খড়ের চাল , মাটির উঠান ;
আমাদের উঠানটা অনেক বড় ছিল
ঠিক হৃদয়টার মতো ;
এই হৃদয়ে তো তোর আসন পাতা ;
পায়ে পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলে
পথের নুড়ি গুলো গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে টিলার নিচে ;
অনেক নিচে …
যেখানে ছেড়ে দিয়ে এসেছি অতীতের যন্ত্রনা গুলো ;
যদিও সেদিকে আর ফিরে তাকাতে রাজি নই ;
বহু পুরানো পূর্ব পুরুষের চলার পথ এটাই ;
এখানেই এখনো দেখা পাওয়া যায়
টিকে থাকা স্মৃতি চিহ্ন ;
প্রথম জীবনে এক কিশোরীর প্রেমে ডুবে ছিলাম ;
অথচ কোন দিনের জন্য বলতে পারিনি
বুকে জমে থাকা কথা গুলো ;
এখন সে সময়ের কথা গুলো ভাবলে
নিজেকে কেমন যেন একা মনে হয় ;
মনে হয় এর পর তো সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে
গেছি বহু বার ;
বহু বার দেখা হয়েছে বসন্ত উৎসবে নতুন নতুন
আবেগী মন , সুন্দর সুন্দর মুখ সকল ;
তবুও সে গুলোর মধ্যে খুঁজে নিতে চেয়েছি
অতীতের প্রথম সেই মুখ মণ্ডল ;
শ্মশানে শ্মশানে করা যেন দীপ জ্বেলে যাচ্ছে
এ অসুস্থ সময়ে ;
সে আলোতে একটু একটু করে নেমে আসছে
মহাকাশের অলৌকিক এক রেণু ,
নতুন করে জেগে ওঠার উত্তাপ ;
এভাবে এতো উত্তাপ পাওয়া যায় ;
এভাবে নিজেকে বার বার দেখা যায় আগে কোনও দিনের জন্য ভাবা হয়নি ;
ভাবা হয় নি তোর কথাও …
বিকালের আলো মেখে শুরু হয়ে গিয়েছে
ধামসা , মাদলের শব্দ তরঙ্গে ;
সে গুলো ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসের বুকে ভেসে
নরম হৃদয়ে হৃদয়ে ;
অথচ , কোথাও যেন হাজার হাজার কান্নার রোল
লাজুক বাতাসকে ভারী করে তুলছে ;
আশেপাশের পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে করছে ;
তোর মতো কোকিলও কি ভুলে গেছে সুর !
মাথা উঁচু করে শিমুল গাছটা নীরবেই দাঁড়িতে থাকে ;
অথচ আগুন ঝরানো ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে ;
আর অচেনা কিছু পাখি বার বার উড়ে এসে বসছে
তার সবুজ ডালে ;
নতুন করে আবার কুমারী নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে ইচ্ছা করে ,
তোর হাত ধরে , ভবিষ্যৎ দিনের হাত ধরে ;
পলাশের জঙ্গলের রাঙা পলাশ সারা দুপুর জুড়ে
ঝরে ঝরে পড়বে রাঙা মাটিতে ;
ঠিক তখনই এক ভূমি কন্যা তোর মতো করে
এক আঁচলা পলাশ কুড়িয়ে এনে দেবে ;
তখন কি তুই অভিমানী হয়ে উঠবি আগের মতো !
উদাস বাউল ফিরে যাচ্ছে যে সময়ে তার আখড়ায় ;
ফিরে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখি সকল ;
অথচ , আমি ফিরতে পারলাম না স্বপ্নাতুর হৃদয়ের কাছাকাছি ;
চারিদিকে এতো নৈঃশব্দ্য , এতো মুখোশ ,
মাঝেমধ্যে নিজেরই মুখটিকে ভালো করে দেখে নিতে হয় ;
বুঝে নিতে হয় পায়ের নিচের মাটি ;
এখন অপেক্ষায় আছি এ বসন্ত উৎসবের ;
তোর সঙ্গে সারাটা দিন আবার নতুন করে
প্রেমালাপ করে যাবো ;
নিয়ে যাবো কোনও এক রূপকথার দেশে ;
যেখানে কোনও দিনের জন্য অস্থিরতা
ঢুকে পড়বে না যখন তখন ;
প্রতিনিয়ত অন্ধকার ভেদ করে বেরিয়ে আসতে আসতে
কখন যে শূন্য এক বলয়ের মনে ঢুকে পড়েছি
এ এক জীবনে বুঝে উঠতে পারিনি ;
পারলে আসার সময় এক মুঠো শুদ্ধ বাতাস নিয়ে আসবি
কেবলমাত্র আমার জন্য নয় , এ সময়েরও জন্য ।