ফিচার্ড বিশ্ব

পশ্চিমবঙ্গে একদিনে চাকরি হারালেন ২৬ হাজার জন, ফেরত দিতে হবে বেতন

কলকাতা হাইকোর্ট (ফাইল ফটো)

পশ্চিমবঙ্গে একদিনে চাকরি হারালেন ২৬ হাজার জন, ফেরত দিতে হবে বেতন
লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে অস্বস্তিতে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস

লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে বড় ধাক্কা খেল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একদিনে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের নিয়োগ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। নির্বাচনকালীন সময়ে কলকাতা হাইকোর্টের এ রায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে ফেলেছে ব্যাপক অস্বস্তিতে। গোটা মামলাতেই অভিযুক্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা ও মন্ত্রী। ফলে অনিবার্যভাবেই এই ইস্যু বিরোধীদের মোক্ষম হাতিয়ার হতে চলেছে।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ২০১৬ সালে শিক্ষক এবং অশিক্ষক শিক্ষাকর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ৩৫০টি মামলা হয়েছিল। সেসব মামলা একত্র করে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেন। রায়ে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে- অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরির মাধ্যমে যাদের চাকরি দেওয়া হয়েছিল, ৪ সপ্তাহের মধ্যে সাত বছরের সম্পূর্ণ বেতন ১২ শতাংশ সুদসহ সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে।

স্বাধীনতা উত্তর এত বড় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ বাংলায় এমনকি গোটা ভারতেও বিরল। সকাল থেকেই এ দিন কলকাতা হাইকোর্ট চত্বরে কড়া নিরাপত্তা ছিল। হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে বহু মানুষের নজর ছিল এই রায়ের দিকে। সোমবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ কলকাতা হাইকোর্টে এসএসসি মামলার রায় পড়তে শুরু করেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। ২৮১ পাতার রায়ে ৩৭০টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত সব মামলা গ্রহণযোগ্য বলেই পর্যবেক্ষণ বিচারপতি বসাকের। ২০১৬ সালের বিতর্কিত গোটা প্যানেলই খারিজ করার সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।

এই রায় শিক্ষা দপ্তর তথা স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওপর বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু তা নয়, যে ২৫ হাজার ৭৫৩ জন চাকরি হারিয়েছেন, চার সপ্তাহের মধ্যে বেতনের টাকা ১২ শতাংশ সুদসহ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা স্কুল পর্যবেক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেই টাকা আদায়ের।

হাইকোর্ট জানিয়েছে, বেআইনিভাবে নিয়োগের বিনিময়ে টাকা নেওয়া হয়েছে বা টাকার বিনিময়ে যারা চাকরি কিনেছেন, তারা প্রত্যেকেই অভিযুক্ত। হাইকোর্টের রায়ে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার এরই মধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া চালাচ্ছে সিবিআই। এ দিন সিবিআইকে তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশ, সিবিআই এ মামলার তদন্ত করবে। স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং শিক্ষা দপ্তরের যেসব অফিসাররা এই নিয়োগ কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, অর্থাৎ প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও যে অফিসাররা নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়েছিলেন তাদের প্রয়োজনে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে পারবে। বেআইনিভাবে সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরি করে চাকরি পাওয়াদেরও হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই। পাশাপাশি ওএমআর শিট দ্রুত এসএসসির সার্ভারে আপলোড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানিয়েছেন, যে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের নিয়োগ বাতিল করা হলো, সেই শূন্যপদে অবিলম্বে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। সময় বেঁধে সেই নিয়োগ করতে হবে এবং সেই প্রক্রিয়া হতে হবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ। একইসঙ্গে ওএমআর প্রস্তুতকারক সংস্থা নাইসার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আদালত। হাইকোর্টের মতে, মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেলের পরে সব নিয়োগই অবৈধ। রায়ে শুধুমাত্র সোমা দাস নামে একজনের চাকরি থাকবে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট। কারণ, তিনি ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। মানবিক কারণে তার চাকরি বহাল রেখেছেন আদালত।

সুপ্রিম কোর্টের ডেডলাইন মেনে এ দিন রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে ৫ হাজার চাকরি বাতিল করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। চাকরি হারানো শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন। সুপ্রিম কোর্ট তাদের সাময়িক রক্ষাকবচ দেয়। সঙ্গে মামলা ফের কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ফেরত পাঠানো হয়। ছয় মাসের মধ্যে মামলার রায় ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সব মামলা বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। প্রায় তিন মাস ধরে দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে দীর্ঘ শুনানি চলে। বাদী-বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা চাকরিপ্রার্থী, রাজ্য সরকার এবং এসএসসির হয়ে শুনানি করেন। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ২০ মার্চ সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানি শেষ হয়। কিন্তু রায় স্থগিত রাখে ডিভিশন বেঞ্চ। অবশেষে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বড় রায় ঘোষণা করলো হাইকোর্ট।

মামলার শুনানি চলকালীন আদালতের পর্যবেক্ষণ ২০১৬ সালে এসএসসির নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগ এবং একই বছরে স্কুলে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে ৩০ লাখ আবেদনকারী চাকরি বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ২২ হাজার পদে দুর্নীতির মাধ্যমে লাখো চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। জানিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরে রাজ্য সরকারের অবস্থান তিনি স্পষ্ট করবেন। তবে শিক্ষা দপ্তর সূত্রের খবর, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হতে পারে। যাদের চাকরি বাতিল হয়েছে, তারা সুপ্রিম কোর্টে মামলা করছেন কিনা তাও অপেক্ষা করে দেখতে চাইছে রাজ্য সরকার। -সূত্র: সমকাল

এসএস/সিএ

সংবাদটি শেয়ার করুন