২৯ জুলাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি
বিদ্যুৎ ভৌমিক ।। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মোদিনীপূর জেলার বীরসিংহ গ্রামে ১৮২০সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতার নাম ছিল ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতার নাম ছিল ভগবতী দেবী। জন্মগ্রহণ কালে তার পিতামহ তার বংশানু্যায়ী নাম রেখেছিলেন “ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়”। ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা নামেও তিনি স্বাক্ষর করতেন। ১৮৩৯ সালের ২২ এপ্রিল হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষা দেন ঈশ্বরচন্দ্র। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অগাধ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন লেখক,দার্শনিক, পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, অনুবাদক, প্রকাশক, সংস্কারক, দয়ালু ও মানবহিতৈষী।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দির একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় অসাধারণ ব্যুৎপত্তি ছিল তাঁর। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজপাঠ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকারই ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তাকে বাংলা গদ্যের প্রথম ও অন্যতম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনা করেছেন যুগান্তকারী শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক এবং সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা তিনি সৃষ্টি করেছেন।
অন্যদিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় ছিলেন একজন বড় মাপের সমাজ সংস্কারক। নারী শিক্ষা ও নারীমুক্তির আন্দোলনেও বিদ্যাসাগরের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। বিধবা বিবাহ ও স্ত্রী শিক্ষার প্রচলন, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক অভিশাপ দূরীকরণে তার অক্লান্ত সংগ্রাম আজও স্মরিত হয় যথাযোগ্য শ্রদ্ধার সঙ্গে। বাংলার নবজাগরণের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘দয়ার সাগর’ নামে। দরিদ্র, আর্ত ও পীড়িত মানুষ কখনোই তাঁর দ্বার থেকে শূন্য হাতে ফিরে যেত না। এমনকি নিজের চরম অর্থসঙ্কটের সময়ও তিনি ঋণ নিয়ে পরোপকার করেছেন। তাঁর পিতামাতার প্রতি তার ঐকান্তিক শ্রদ্ধা, ভক্তি ও বজ্রকঠিন চরিত্রবল বাংলায় আজও প্রবাদপ্রতিম হয়ে আছে। মহাকবি মাইকেল মধুসুধন দত্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন প্রাচীন ঋষির প্রজ্ঞা, ইংরেজের কর্মোদ্যম ও বাঙালি মায়ের হৃদয়বৃত্তি।
বাঙালি সমাজে বিদ্যাসাগর মহাশয় আজও একজন প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মোদিনীপূরে তাঁর স্মৃতিরক্ষায় স্থাপিত হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী কলকাতায় আধুনিক স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বিদ্যাসাগর সেতু তাঁরই নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। ২০০৪ খ্রীষ্টাব্দে বিবিসি বাংলা কর্তৃক পরিচালিত জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০ জন বাঙালির মধ্যে অষ্টম স্থান লাভ করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । ১৮৯১সালের ২৯ জুলাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মৃত্যু বরণ করেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর না থাকলেও বাঙালি সমাজে ও উপমহাদেশে বিদ্যাসাগর মহাশয় একজন অতি প্রাতঃস্মরণীয় শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক , দয়াল সাগর ও মানবহিতৈষী হিসাবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
সূত্র : উইকিপেডিয়া ও অন্যান্য গন্থ
লেখক: কলামিষ্ট ও সিবিএনএ’র উপদেষ্টা, ২৮ জুলাই, ২০২৪ খ্রী:
CBNA24 রকমারি সংবাদের সমাহার দেখতে হলে
আমাদের ফেসবুক পেজে ভিজিট করতে ক্লিক করুন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে পোস্ট করুন।