ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

বিচিত্র কুমার-এর একগুচ্ছ মজার শিশুতোষ গল্প

বিচিত্র কুমার-এর একগুচ্ছ মজার শিশুতোষ গল্প

কালু ভূতের দশ ঠাং

একবার এক সুন্দর গ্রামের মধ্যে বাস করতো এক অদ্ভুত ভূত, যার নাম ছিল কালু ভূত। কালু ভূতের ছিল দশটা ঠাং, আর প্রতিটি ঠাং ছিল আলাদা আলাদা রঙের। এক ঠাং লাল, অন্যটা নীল, তৃতীয়টা সবুজ, আর চতুর্থটা হলুদ—এভাবে দশটা ঠাং নানা রঙের!

কালু ভূত সব সময় চিন্তা করতো, “আমি কেমন করে আমার ঠাংগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করবো?” একদিন সে ঠিক করলো, গ্রামের শিশুরা তাকে সাহায্য করতে পারবে। তাই সে গ্রামের মাঠে গিয়ে ডাক দিলো, “হে ছোট্ট বন্ধুরা, আসো আমার ঠাংগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করো!”

শিশুরা শুনে খুব আনন্দিত হলো। তারা কালু ভূতের ঠাংগুলো নিয়ে খেলতে শুরু করলো। কেউ বলল, “আমার লাল ঠাং দিয়ে আমরা লাল ফুলের খেলা খেলবো!” আরেকজন বলল, “আমার নীল ঠাং দিয়ে আমরা নীল আকাশের মতো নাচবো!”

একদিন, কালু ভূত তাদের বললো, “আমার সব ঠাং একত্র করে কিছু দারুণ করতে হবে!” শিশুরা ভাবলো, তারা একটি বড় আর্কেশন তৈরি করবে। লাল ঠাং দিয়ে তারা লাল ফুলের টানে লাগালো, নীল ঠাং দিয়ে তারা নীল আকাশ আঁকলো, সবুজ ঠাং দিয়ে তারা সবুজ ঘাসের মত লাগালো আর হলুদ ঠাং দিয়ে তারা সূর্য আঁকলো।

কালু ভূত দেখল যে তার ঠাংগুলো একসঙ্গে কাজ করে একটি সুন্দর আর্ট তৈরি করেছে। সে খুব খুশি হয়ে শিশুরদের ধন্যবাদ জানালো। শিশুরাও কালু ভূতের সঙ্গে মজা করে আরও অনেক কিছু করতে শুরু করলো।

এরপর থেকে, কালু ভূত তার ঠাংগুলো দিয়ে নানা ধরনের খেলাধুলা ও সৃজনশীল কাজ করতে থাকলো, আর গ্রামের শিশুদের সাথে আনন্দে কাটালো। কালু ভূতের ঠাংগুলো শুধু রঙিন নয়, তারা আনন্দ ও মজারও রূপ নিলো।

আর এর পর থেকে, গ্রামে সবাই জানলো—কালু ভূতের দশ ঠাং দিয়ে যে কোনো সমস্যা সমাধান করা সম্ভব!

(০২)

মামার গায়ে বাঘের জামা

একদিন গ্রামের পাড়া-মহল্লার সবাই শুনল, মামা নতুন জামা বানিয়েছেন। কিন্তু এ জামা কোনো সাধারণ জামা নয়; এটা বাঘের জামা! গ্রামের সবাই বিস্মিত হয়ে গেল, “মামার গায়ে বাঘের জামা কেমন হয়?”

মামা বললেন, “এ জামার মধ্যে ঢুকলে আমি যেমন বাঘের মতো ভয়ানক, তেমনি কিসেরও ভয় পেতে হয় না!”

গ্রামের ছোট্ট ছেলেটা, রবিন, জামাটা দেখতে গেল। জামাটি ছিল রঙ-বেরঙের উজ্জ্বল সুতোর কাজ করা, যার মধ্যে ছিল বড় বড় বাঘের দাঁত আর কাঁটা। রবিন যখন জামাটা দেখল, সে হাসতে হাসতে বলল, “মামা, আপনার জামা তো বাঘের মতো ভীষণ মজার!”

মামা জামাটা পরে গ্রামের মাঠে গেলেন। সেখানে কিছু ছেলেমেয়েরা খেলছিল। মামার বাঘের জামা দেখে তারা একে অপরকে বলল, “ও দেখো, মামা বাঘ হয়ে গেছে!”

মামা জামার মধ্যে ঢুকে সবাইকে দেখানোর জন্য কেঁপে কেঁপে হাঁটছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে জামার সেলাই খুলে গেল আর জামাটা সরে গিয়ে পড়ে গেল। গ্রামের লোকেরা চিৎকার করতে করতে বলল, “আহা, মামা তো আসলে একজন!”

তবে মামা খুব তাড়াতাড়ি জামা পরলেন আবার এবং হাসতে হাসতে বললেন, “আমার জামার মধ্যে ঢুকলে আমি বাঘ হই, কিন্তু জামা ছাড়া আমি তো শুধু মামা!”

সবাই হাসির মধ্যে বলল, “তাহলে মামা, আমরা জানি তুমি বাঘের জামা পরলেই বাঘ, কিন্তু যখন তুমি জামা ছাড়ো, তখন তুমি আমাদের প্রিয় মামা!”

মামা সবসময় বলতেন, “একটা জামা আসলে কেবল জামা, কিন্তু আমাদের হাসি আর খুশি কখনোই জামার মধ্যে আটকা পড়ে না।”

এভাবে মামার বাঘের জামা গ্রামের সবাইকে আনন্দ দিলো, আর সকলেই হাসি-আনন্দে দিন কাটাল।

(০৩)
বনে চলে হাতির গাড়ি

এক সময় এক বড় সুন্দর বনে, যেখানে মাটির পাতা ও ফুলের গন্ধে পূর্ণ, একটি বিশেষ হাতির গাড়ি বসে ছিল। এই গাড়ি ছিল অদ্ভুতভাবে তৈরি: একদম প্রাচীন হাতির চামড়া দিয়ে বানানো। কিন্তু সবচেয়ে মজার কথা হলো—এই হাতির গাড়ি চলত নিজের পায়ে!

এক সকালে, বনজুড়ে আনন্দের অমলীন আলো এসে পড়ল। বনবাসী সব প্রাণী কৌতূহলে জেগে উঠল যখন তারা দেখতে পেল হাতির গাড়িটি নাচতে নাচতে বনের পথে চলছে। গাড়ির সামনে ছিল একটি লম্বা লাঠির মতো পোকা, যা গাড়ির বেল বেল শব্দ তৈরি করছিল।

“দেখো, হাতির গাড়ি কেমন করে চলেছে!” চিত্কার করে বলল এক খরগোশ, তার দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে।

“আমরা কি এর পেছনে যেতে পারি?” প্রশ্ন করল এক ছোট্ট বানর।

বনের প্রাণীরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিল—আজ বনের প্রাণীদের নতুন মজার অভিজ্ঞতা হবে। তাই তারা সবাই হাতির গাড়ির পেছনে পেছনে দৌড়াতে লাগল।

গাড়িটি চলতে চলতে বনভূমির সমস্ত অংশ প্রদক্ষিণ করতে লাগল। নানা ধরনের গান গাইতে লাগল। সিংহটি, যে গাড়ির চালক ছিল, সবার সাথে কথা বলছিল, গান গাইছিল এবং মাঝে মাঝে চমৎকার নাচ দেখাচ্ছিল।

“এত সুন্দর নাচ! কীভাবে তুমি এমন নাচ করতে পারো?” পিপঁড়ের দল জানতে চাইলো।

সিংহটি হেসে বলল, “আমরা কেবল মনে করি, নাচ ও গান দিয়ে আমরা আমাদের জীবনকে আরো সুন্দর করতে পারি। এই হাতির গাড়ি আমাদের পার্টনার। এটি বনবাসী প্রাণীদের সাথে আনন্দে কাটানোর জন্য!”

তাদের গান এবং নাচের সঙ্গে যোগ দিল একটি বড় হরিণ, একটি রঙিন টিকটিকি, এবং একটি গেম্বল খরগোশ। তারা সবাই হাতির গাড়ির সাথে মিলে এক বিশাল নাচের উৎসব শুরু করল। গাড়ির চালক সিংহ এবং তার বন্ধুদের সাথে নাচতে নাচতে আনন্দে মেতে উঠল।

এদিন বনের প্রাণীরা এমন আনন্দে মেতে উঠল যা কখনো তাদের জীবনে হয়নি। ছোট্ট বানর একটি মজার কীর্তি প্রদর্শন করল এবং পিপঁড়েরা তাদের ছোট ছোট নাচ দিয়ে সবাইকে হাসিয়ে দিল।

সূর্য যখন পশ্চিমে ঢলতে শুরু করল, বনজুড়ে অন্ধকারের ছায়া পড়তে লাগল। হাতির গাড়ি ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করল। গাড়ির চালক সিংহ সবাইকে বিদায় জানিয়ে বলল, “আজকের দিনটি আমাদের জীবনকে মিষ্টি এবং আনন্দময় করে তুলল। আমরা আবার একসাথে মজা করতে পারব।”

প্রাণীরা একে অপরকে বিদায় জানিয়ে বনের মাঝে ফিরে গেল। হাতির গাড়ি নিজের পায়ে ঘুরে ঘুরে বনজুড়ে ফিরে এল, শান্তি এবং আনন্দের এক বিশেষ অনুভূতি নিয়ে।

এমন একটি দিন বনের প্রাণীরা বারবার মনে রাখবে, এবং তারা অপেক্ষা করবে পরবর্তী মজার দিনটির জন্য, যখন আবার হাতির গাড়ি তাদের জীবনকে রঙিন করবে।

(০৪)
বাঁদর রাজার কান কাটা

এক দেশে ছিল এক বাঁদর রাজা। তার নাম ছিল রাজা বনগাছা। রাজা বনগাছা খুবই গর্বিত ছিলেন তার লম্বা, মোটা কান নিয়ে। তিনি ভাবতেন, “আমার কান যত বড়, আমি ততই বড় রাজা!”

একদিন, রাজা বনগাছা এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি ঠিক করলেন, তার কান আর বড় থাকা উচিত নয়। তাহলে রাজ্যবাসীরাও আরও বেশি গর্বিত হবে। রাজা বনগাছা সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আদেশ দিলেন—”আমার কান কেটে ফেলতে হবে!”

সবার প্রথমে, রাজ্যের মন্ত্রীরা এই সিদ্ধান্তে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, রাজা বনগাছার আদেশ তো অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। তারা কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না, কিভাবে এত বড় কান কাটা যাবে।

অতঃপর, এক হুঁশিয়ার বাদর ডাক্তার এসে বললেন, “আপনার কান কেটে দেওয়া আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমি এটা করব, কিন্তু একটি শর্তে—আপনার কান কেটে ফেলার পর, আমাকে কিছু আরামদায়ক ফল দিতে হবে।”

রাজা বনগাছা রাজি হলেন এবং ডাক্তার কেটে ফেললেন তার কান। কাটা কান দেখলে মনে হবে, দুটো বিশাল পাতা বাতাসে উড়ছে।

কিন্তু রাজা বনগাছার কান কাটা হয়ে যাওয়ার পর, রাজ্যবাসীরা হেসে ফেলল। তাদের অনেকেই রাজা বনগাছার কান নিয়ে মজা করত। রাজা বনগাছা কিছুদিন ধরে বিব্রত বোধ করছিলেন, কিন্তু তারপর বুঝলেন যে তার আসল গর্ব তাঁর রাজ্যের সুখ-শান্তি এবং তার প্রজাদের আনন্দে।

অবশেষে, রাজা বনগাছা তাঁর নতুন কান নিয়ে হাসিমুখে রাজ্যবাসীদের সাথে শেয়ার করতে লাগলেন, এবং সবাই তাঁর সোজা কান দেখে আনন্দিত হলেন।

এভাবে, রাজা বনগাছা তাঁর কান কাটা থেকে একটি নতুন শিক্ষা পেলেন—প্রকৃত গর্ব হলো আপনার প্রজাদের সুখী রাখা।

(০৫)
হাতি মামার কচু খাওয়ার অভিযান

একদা এক জঙ্গলের মধ্যে হাতি মামার বাস। হাতি মামা হলেন এমন একজন বড়, খুশমেজাজী হাতি, যিনি জঙ্গলের সব প্রাণীর বন্ধু। কিন্তু তার একটা বড় অভ্যেস ছিল—কচু খাওয়া। শুধু কচু না, বিশেষ করে রসালো কচু।

একদিন, হাতি মামা ভাবলেন, “আজ আমি জঙ্গলের সবচেয়ে বড় কচু খেয়ে দেখব!” তিনি একটা খুঁতখুঁতে কচু খুঁজতে বের হলেন। কিন্তু, যতই তিনি কচুর গন্ধ খুঁজতে থাকলেন, ততই আরো মজার ঘটনা ঘটে গেল।

হাতি মামা জঙ্গলের ভিতরে চলে গেলেন, যেখানে সবাই নানা রকম হাস্যকর কচু মজা করছেন। বানররা কচুর সাথে দোলনায় দুলছে, এবং পাখিরা কচুর উপর গান গাচ্ছে। হাতি মামার খুব খুশি লাগল।

হাতি মামা তাদের দেখার পর জিজ্ঞেস করলেন, “এই, বন্ধুরা! কচু কই?”

বানররা মুচকি হেসে বলল, “ওহ, মামা, এই কচুর জন্য একটা বিশেষ জায়গা আছে। সেখানেই আছে তোমার স্বপ্নের কচু!”

হাতি মামা হাঁটা শুরু করলেন। পথের মধ্যে একটি কচু ডাক্তারও দেখা দিলেন, যিনি কচুর বিভিন্ন রোগ নিয়ে আলোচনা করছিলেন। “কচু খাওয়ার আগে অবশ্যই সঠিক পরিমাণে ভিটামিন নিতে হবে!” ডাক্তার কচু বললেন।

“ওহ, সত্যি?” বললেন হাতি মামা, “আমি ঠিকমতো প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

শেষে হাতি মামা পৌঁছলেন কচুর রাজ্যে—এটি এক বিশাল কচুর বাগান, যেখানে কচু নানা আকারে, রঙে, ও স্বাদে ছিল। হাতি মামা কচু দেখতে দেখতে আনন্দিত হলেন, আর একটি বিশাল কচু নিয়ে বসে পড়লেন।

তিনি সেই কচু খেতে শুরু করলেন এবং তৎক্ষণাৎ অনুভব করলেন, এই কচু এতই সুস্বাদু যে, তার মুখে কচুর রসের ধার ঝরছে। কচু খেতে খেতে হাতি মামা মজা করে বললেন, “আহ, এই কচুর জন্য আমি একদিন অপেক্ষা করেছি!”

তারপর, সব প্রাণী এসে হাতি মামাকে সাহায্য করল কচু খাওয়ার আনন্দ ভাগ করে নিতে। পুরো জঙ্গল আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে গেল, আর হাতি মামা নতুন বন্ধুদের সাথে সুখী হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন।

আর এভাবেই হাতি মামার কচু খাওয়ার অভিযান শেষ হল, হাস্যকর ঘটনা আর বন্ধুত্বের সাথে।

(০৬)
সিংহ মামার লম্বা লেজ

একদিন, বনভূমির মাঝখানে একটি দারুণ বড় লম্বা লেজের সিংহ থাকতেন, যাঁর নাম ছিল সিংহ মামা। সিংহ মামার লেজ ছিল অদ্ভুত লম্বা—অতটাই লম্বা যে, তাঁকে রাস্তায় চলতে গেলে লেজটি কাত হয়ে সোজা চলত।

সিংহ মামার লেজের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে অদ্ভুত কিছু গল্প প্রচলিত ছিল। কেউ বলত, লেজটা এত লম্বা যে, এটি গাছের সাথে জড়িয়ে গেছে। আবার কেউ বলত, লেজটা এত লম্বা যে, সিংহ মামা যখন দৌড়ান, তখন লেজটা ঝুলে ঝুলে পিছনে পড়ে থাকে।

একদিন, সিংহ মামা বনভূমিতে হাঁটছিলেন, হঠাৎ করে একটি কুমির এসে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “ওহ, তুমি তো লেজ দিয়ে সোজা চলতে পারো না! আমি যদি তোমার লেজ ধরে টান দিই, তবে তুমি কি গাছের সাথে আটকে পড়বে?”

সিংহ মামা হেসে বললেন, “দেখো কুমির ভাই, আমি তোমাকে এক গল্প বলি। আমার লেজ এত লম্বা হওয়ার কারণ হল—এটা আমার বিশেষ ক্ষমতা। যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন পিপঁড়ের রাজা আমাকে একটি জাদু লেজ উপহার দিয়েছিল। এই লেজ দিয়ে আমি বনভূমির সব জায়গায় সহজে চলাফেরা করতে পারি। তুমি চাইলেও এই লেজ আমাকে আটকে রাখতে পারবে না।”

কুমির মুচকি হেসে বলল, “তাহলে দেখাই যাক।” কুমির সিংহ মামার লেজ ধরল আর টান দিল। কিন্তু লেজ তো এতই লম্বা যে, কুমিরের শক্তি পরাস্ত হয়ে গেল এবং কুমির হাল ছেড়ে দিল।

সিংহ মামা তার লম্বা লেজ দিয়ে কুমিরের মাথায় আলতো করে টোকা দিলেন। কুমির হাসতে হাসতে বলল, “ঠিকই বলেছো, তোমার লেজ এত লম্বা যে, তুমি সবসময়েই আগলে রাখতে পারো। তবে তোমার লেজকে যেন কেউ বিভ্রান্ত না করে!”

সিংহ মামা হেসে বললেন, “আরও অনেক গল্প আছে আমার লেজ নিয়ে। আসো, বনভূমির মাঝখানে আমাদের বসন্তের পিকনিকের আয়োজন করি। সেখানে আমি তোমাদের আরো মজার গল্প শোনাবো।”

এভাবেই সিংহ মামা ও কুমির নতুন বন্ধু হয়ে গেল এবং সিংহ মামার লম্বা লেজ সবসময়ই হাসির কারণ হয়ে থাকল।

(০৭)
পিঠা খায় মিঠা পাখি

নিশি গোপালপুর গ্রামে এক সুন্দর মিঠা পাখি বাস করত। তার নাম ছিল মিঠা পাখি। মিঠা পাখির অদ্ভুত এক শখ ছিল—সে পিঠা খেতে খুব পছন্দ করত। কিন্তু, মিঠা পাখির কাছে পিঠা পাওয়া ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।

একদিন, মিঠা পাখি ভাবল, আজ সে পিঠা খেতেই হবে। তাই সে উঠে পড়ল এবং সবকিছু খুঁজতে শুরু করল। প্রথমে সে গেল গরুর পাড়ায়, যেখানে গরু পিঠা বানাচ্ছিল। কিন্তু গরু মিঠা পাখিকে বলল, “পিঠা পেতে হলে তোমাকে চিনি এবং ঘি যোগাতে হবে। কিন্তু তুমি তো এসব সবজির মতোই দেখতে!”

মিঠা পাখি মেনে নিল যে সে চিনি আর ঘি যোগাতে পারবে না। তাই সে গেল চিনি-বাটারির দোকানে। দোকানদার তাকে বলল, “আমার কাছে চিনি তো আছেই, কিন্তু তোমার জন্য পিঠা বানাতে হবে। তুমি তো আছো ছোট্ট পাখি!”

মিঠা পাখি একেবারেই দমে না গিয়ে, পিঠার জন্য সেই অবাক হতে লাগল। সে ছুটে গেল মিষ্টির দোকানে, সেখানেও একই কথা শুনতে পেল। মিষ্টির দোকানের বিক্রেতা বলল, “তুমি তো পিঠার কাজেই যোগ্য নয়!”

এভাবে অনেক জায়গায় ঘুরে মিঠা পাখি হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরল। কিন্তু হঠাৎ তার চোখে পড়ল একটি ছোট্ট মিষ্টির দোকান। দোকানের সামনে লেখা ছিল: “বিশেষ মিঠা পাখির জন্য পিঠা!”

মিঠা পাখি ভেবেছিল, এটি কি বাস্তব? দোকানদার জানাল, “আমরা জানি তুমি পিঠা খুব ভালোবাসো। তাই আমরা তোমার জন্য বিশেষভাবে এই পিঠা বানিয়েছি।”

মিঠা পাখি অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে পিঠা খেল এবং একে অদ্ভুত সুস্বাদু মনে করল। সে তার বন্ধুদেরও নিয়ে এসে পিঠার উৎসব পালন করল। তারপর থেকে, মিঠা পাখি বুঝতে পারল, কখনো হাল ছাড়লে চলবে না—বিশেষ করে যখন পিঠার মতো মিষ্টি কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে!

এভাবে মিঠা পাখির পিঠা প্রেম আর তার অবিশ্বাস্য যাত্রার গল্প গোপালপুর গ্রামে একটি কিংবদন্তি হয়ে গেল।

(০৮)
হাওয়ায় উড়ে হাতি

একবারের কথা, একটি সুন্দর ছোট্ট গ্রামে বসবাস করত এক দারুণ হাতি, যার নাম ছিলো পিপঁড়ে। পিপঁড়ে ছিলো খুবই বিশেষ কারণ সে ছিলো একটি অভিনব হাতি—সে হাওয়ায় উড়তে পারত!

গ্রামের সবাই পিপঁড়ের উড়ন্ত ক্ষমতা দেখে অবাক হয়ে যেত। একদিন পিপঁড়ে তার বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে বের হলো। সেইদিন সে সিদ্ধান্ত নিলো, সে সবাইকে দেখাবে কেমন করে উড়তে হয়।

পিপঁড়ে উড়ে উড়ে গ্রামের পুকুরের পাশে গেলো। সেখানে ছোট ছোট মাছেরা পিপঁড়েকে দেখে খুব বিস্মিত হল। মাছেরা বলে উঠল, “ওয়াও, তুমি তো সত্যিই উড়তে পারো!”

পিপঁড়ে হাসি দিয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমার জন্য উড়ানো খুবই সহজ। তবে তুমি যদি সাঁতার কাটতে চাও, তাও আমাকে দেখাতে পারব!”

তারা সবাই একসঙ্গে হাসল এবং পিপঁড়ে তাদের সঙ্গে এক সুন্দর খেলা শুরু করল। পিপঁড়ে হাওয়ায় উড়ে উড়ে মাছদের সাঁতার কাটানো দেখালো। মাছেরা তার উড়ন্ত দক্ষতা দেখে খুব খুশি হল এবং তার সাথে আরও কিছু মজার খেলা খেলল।

এরপর, পিপঁড়ে ও তার নতুন বন্ধুদের খেলার মাঝে দেখা গেলো, গ্রামের এক কোণে একজন কুম্ভীর ছিলো যাকে পিপঁড়ে চিনত না। কুম্ভীরকে দেখতে পেয়ে পিপঁড়ে কৌতূহলী হয়ে তার কাছে গেলো। কুম্ভীর ভাবছিলো, “এই হাতিটি তো কত সুন্দরভাবে উড়ছে! আমি কি উড়তে পারব?”

পিপঁড়ে হাসি দিয়ে বলল, “তুমি চেষ্টা করতে পার, তবে মনে রেখো, তোমার চেহারা একটু আলাদা।”

কুম্ভীর হেসে বলল, “এটা ঠিকই! কিন্তু তোমার সঙ্গে খেলা করতে পারলে আমি খুব খুশি হব।”

পিপঁড়ে কুম্ভীরের জন্য একটি বিশেষ খেলা আয়োজন করল—বাঁশের উপর দিয়ে লাফানো। কুম্ভীর লাফাতে লাফাতে খুব মজা পেলো এবং পিপঁড়ের সঙ্গে তার নতুন বন্ধুত্বও গড়ে উঠল।

অবশেষে, পিপঁড়ে ও তার বন্ধুদের সাথে খেলা করে, একটি নতুন কুম্ভীরকে তার গ্রামে ফিরে যেতে হলো। কিন্তু সবাই একসঙ্গে হাসি এবং আনন্দে মেতে উঠলো, কারণ তাদের একটি নতুন বন্ধু ও নতুন অভিজ্ঞতার সাথে বেঁচে থাকার মজা পেয়েছিলো।

আর তাই, পিপঁড়ে এবং তার বন্ধুদের গল্প মনে রেখে, গ্রামের সবাই বুঝতে পারলো যে বন্ধুত্ব ও আনন্দের মাধ্যমে, কোনো অসাধারণ ক্ষমতাও নিত্যদিনের জীবনে চমক আনা সম্ভব।


বিচিত্র কুমার। কবি ও গল্পকার। আলতাফনগর, দুপচাঁচিয়া, বগুড়া, বাংলাদেশ


এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন