নতুন রঙিলা ঋতু |||| পুলক বড়ুয়া
সবক্ষেত্রেই নারী-পুরুষ বৈষম্য খোঁজা অর্থহীন ।
উভয়ক্ষেত্রে সহজাত স্বাতন্ত্র্যের কথা তো অনস্বীকার্য । কিন্তু, নারী বিষয়ক প্রাসঙ্গিক সূক্ষাতিসূক্ষ বৈষম্য, মোটাদাগে স্থূল পার্থক্য, অধোদাগ টেনে দেওয়ার মতো আলাদা প্রকটিত কথার নাছোড়-উচ্চারণসমূহ—উচ্চকিত হবেই। অনিবার্য। মুখ বন্ধ করে রাখা যাবে না। বলতেই হবে। অধিকারহীনতা তো । সামষ্টিক শূন্যতা। অসংখ্য অধিকারের কথা। না-পাওয়ার কথা। বেদনার বার্তা। জঘন্য জোর-জুলুম। যুগের পর যুগ কীভাবে মানবাধিকার হারিয়েছে তারা। অবহেলার এত দিক আছে যে এর কোনোটিই হেলাফেলা করার মতো নয়। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাই এ ‘ আন্তর্জাতিক নারী দিবস’। এরমধ্য দিয়ে পারস্পরিক দৃঢ়তা-মেলবন্ধন—আশা— সংহতি লাভ করব।
আরও একটা কথা এখানে পরিস্কার গলায় সুস্পষ্ট করতে চাই, সবসময়ই নারীদের প্রতি আরও মানবিক হোন। আপনি তার দুর্বলতায়—সুযোগ বুঝে অমানবিক হবেন না। তার উত্তরণে আপনার ভূমিকাটি ইতিবাচক হওয়া উচিত। যার প্রয়োজনীয় অনুপস্থিতিতে সভ্যতার অন্যতম সুদীর্ঘ নীরব-সংকট ‘নারী অধিকার’ স্বয়ং সরব হতে বাধ্য হয়েছে। মানুষ হিসেবে শুধু মানুষের অধিকার নয়—তার বাইরেও, সবকিছুর ভিতর ভারসাম্য, প্রয়োজনীয় সমতাপূর্ণ বিষয়ের অপূর্ণতায়, ক্ষতিতে, অভাবে—আজ জীবজগতের
নানান উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাগুলো সব মিলিয়ে এক কথায়, সভ্যতার সংকট। ‘নারী অধিকার’ও তার অন্যতম একটি জীবন্ত সংকট।
আমরা একদা ভয়ংকর পারমাণবিক হয়েছি বটে, তার চেয়েও, বড় কথা, যদি বলি—দিনে দিনে কত-না মহা অমানবিক হয়ে গেছি। কী অমানুষিক আজ মানুষীদের ক্ষত্রে। পারমাণবিক শক্তির অপব্যবহারে যদি মানবিক সংকট তৈরি হয়। মানবীয় শক্তির সদ্ব্যাবহারে অমানবিক সংকট দিশা খুঁজে পাবে। মানবীদের মানব-বেড়ী পরিয়ে রাখা যাবে না। মানবীদের সমুখ থেকে মানব-ব্যরিকেড সরিয়ে দিতে হবে। আমাদের আজ আশু ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।
তবেই, নারী-পুরুষ বৈষম্য বিলুপ্ত হবে। পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হবে। আত্মিক এ উন্নয়নের নামই মানবিক উন্নয়ন । যেখানে সন্তোষজনক সমাধানের চাবিকাঠি নিহিত। আমরা একটা প্রত্যাশিত মাত্রায় উন্নীত হব।
আজকে যে অসাম্য, তার বদলে দুয়ে দুয়ে দেখতে পাব সৃষ্টিশীল সুষম মধুর মিলন । নারী-পুরুষ মিলে শোভা পাবে—এ সুসম্পর্ক—সাম্য। দুয়ে দুয়ে দুনিয়ার বুকে নেমে আসবে একটি নতুন রঙিলা ঋতু—যুগল বসন্ত!