করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন অফিসের কাজ ‘ওয়ার্কিং ফ্রম হোম’ বা ‘বাড়িতে বসে কাজ’ করছেন।
অনেকে ঘরে বসে অফিস করার জন্য যেসব জায়গা বেছে নিয়েছেন তা বেশ অভিনব।
”জয় অব ওয়ার্ক” নামে একটি বইয়ের লেখক ব্রুস ডেইজলি বলছেন, অনেকে দেখতে পাচ্ছেন যে বাড়িতে পারিবারিক জীবন আর কাজের জীবনের মধ্যে একটা ব্যবধান থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তার কথায়, বাড়িতে বসে কাজ করার সময় কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে ঘরের জীবন বেশি উপভোগ করছেন – ফলে ব্যাপারটাতে সবার জন্য সমতাও বা ”লেভেল প্লেইং ফিল্ড”ও রক্ষিত হচ্ছে না।
“কেউ কেউ তার বাবা-মায়ের বাড়ি থেকে কাজ করছেন। কেউ বা তাদের একমাত্র কক্ষটিই ব্যবহার করছেন।”
“কেউ বা এই অদ্ভুত অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে নানা রকম আপোষ করার চেষ্টা করছেন।”
অনেকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কীভাবে তারা ওয়ার্কিং ফ্রম হোম করছেন।
যারা উত্তর পাঠিয়েছেন, তার মধ্যে ব্যতিক্রমী কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো।
কাজ আর ব্যায়াম
ইয়র্কশায়ার থেকে ব্যবসা ব্যবস্থাপনার কাজ করেন কেন ফুলটন।
তার ঘরে অফিস বানানোর জায়গা নেই, চেয়ারও নেই। আছে একটি সাইকেল।
সাইকেলটিকেই তিনি চেয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।
শুধু তাই নয়, তিনি তার বাড়িতে বসে কাজের দিন শুরু করেন ওই সাইকেলে বসে ২৫ মাইল ”ভার্চুয়াল” পথ বাইক চালিয়ে।
এসময় তিনি ব্যবহার করেন ট্রেনিং এ্যাপ জুইফট।
আর সাইকেলের শব্দ চাপা দেবার জন্য তিনি ব্যবহার করেন শব্দরোধী হেডফোন।
নিজে নিজে বানিয়ে নেয়া ডেস্ক
অনেকেই নানা কৌশলে নিজের কাজের টেবিল বা ডেস্ক বানিয়ে নেবার কথা লিখেছেন।
ফেসবুকে চাকরি করেন আলেক্সান্ড্রু ভোইকা।
তিনি তার বাড়ির গ্যারাজে নিজে একটি ডেস্ক বানিয়ে নিয়েছেন।
এতে তিনি ব্যবহার করেছেন পরিত্যক্ত কিছু বোর্ড। সাথে আছে ফ্যান আর প্লাস্টিকের ড্রয়ার।
ডেস্কটা আবার দেয়ালের সাথে লাগানো, তাই হঠাৎ পড়ে যাবার ভয় নেই।
ইস্ত্রি করার বোর্ড
এলিস হিলম্যান আরো সহজ পথ নিয়েছেন।
কাপড় ইস্ত্রি করার পা-ওয়ালা বোর্ডকে তিনি পরিণত করেছেন কাজের টেবিলে।
ক্যাট ডাইভার্স
তিনি তার ডেস্ক বানিয়েছেন কিছু কার্ডবোর্ডের বাক্স একটির ওপর আরেকটি বসিয়ে।
তা ছাড়া কম্পিউটারের একটি মনিটর – যা কেউ ফেলে দিয়েছিল – তা তিনি কুড়িয়ে এনে তার ঘরে বসিয়েছেন।
চারটি মনিটর এবং বেড়াল
টিভির লাইটিং ডিজাইনারের কাজ করেন মার্টিন। থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
তিনি চারটি বাঁকানো মনিটর জোড়া দিয়ে বেশ জাঁকালো চেহারার ডেস্ক বানিয়ে নিয়েছেন।
তাছাড়া তার আছে তিনটি বেড়াল, এবং মনিটরের সামনেই তাদের শুয়ে-বসে থাকারও জায়গা আছে।
‘হাই লাইফ’
গ্রিন পাটির কাউন্সিলর স্টিভ মাস্টার্স ।
তিনি একজন পরিবেশ কর্মী এবং এর সাথে কর্মজীবনের সমন্বয় ঘটাতে তিনি তার অফিস বানিয়েছেন গাছের ওপর।
তিনি গাছেই থাকেন এবং কাজ করেন।
তার কাউন্সিল তাকে একটি ল্যাপটপ দিয়েছে। তিনি তার মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটের সাথে ল্যাপটপটিকে জুড়ে দিয়েছেন।
এগুলো চার্জ করতে তিনি ব্যবহার করেন একটি সৌরশক্তিচালিত বহনযোগ্য পাওয়ারস্টেশন।
তার কথা “গাছে বসে আমি সবচেয়ে ভালো ইন্টারনেট সংযোগ পাই।”
‘রিমোট কন্ট্রোল’ বিজ্ঞান
ড. অম্রুতা গাডগে সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক।
তিনি বাড়িতে এমনভাবে কম্পিউটার বসিয়েছেন যে ঘরে বসেই তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে থাকা লেজার যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
শুধু তাই নয় রিমোট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই তিনি তৈরি করেছেন বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট – যা পদার্থের ‘পঞ্চম অবস্থা’ বলে মানা হয়।
এভাবে কিছু মৌলিক পদার্থকে এক চরম ঠান্ডা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় যখন পরমাণুগুলো তাদের ভেতরকার শক্তি হারিয়ে ফেলে জমাট বেঁধে যায়, তৈরি হয় সুপার-এ্যাটম নামে একরকম পরমাণু। এটা বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারি, টাচস্ক্রিন এবং সৌরশক্তির সেল তৈরিতে ব্যবহার করা যায় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট কখনো এভাবে রিমোট কন্ট্রোল প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়নি – যা করেছেন অম্রুতা গাডগে।
ঘরের ভেতর ফার্ম
জেন ব্রমলি একজন প্ল্যান্ট সায়েন্টিস্ট, তিনি কাজ করেন ভার্টিক্যাল ফিউচার নামে একটি কৃষিকাজ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে।
তার বাড়ির পানি গরম করার বয়লার যে ঘরে বসানো – লকডাউনের শুরুতে তিনি সেই ঘরটি পরিষ্কার করে সেখানে গড়ে তুলেছেন তার নিজের কৃষি ফার্ম।
সেখানে কৃত্রিম দিনের আলো-সৃষ্টিকারী আলো এবং টাইমার বসিয়ে তিনি চাষ করছেন, খাওয়া-যায়-এমন নানা রকম ফুল।
তবে সেখানে পানি দিতে হচ্ছিল হাতে করে, যা ছোট্ট ঘরের মধ্যে বেশ কষ্টকর কাজ।
তবে এ থেকে পাওয়া উপাত্তগুলো তিনি তার কাজে ঠিকই ব্যবহার করতে পেরেছেন।
‘হোম স্টুডিও’
ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভা বৈদ্যনাথনের বাড়িতে আগে থেকেই একটা অফিসঘর ছিল।
কিন্তু তার ছাত্রছাত্রীদের জন্য ঘরে বসে লেকচার স্ট্রিমিং করার জন্য তিনি আরেকটি ছোট ঘর তৈরি করে নিয়েছেন।
সেটাকে সাউন্ডপ্রুফ করার জন্য দেয়ালে বসিয়েছেন শোলার পর্দা। তার আইফোনের ক্যামেরাটি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করেছেন, সবুজ পর্দা ব্যবহার করেছেন স্লাইড দেখানোর জন্য।
ঘরটিকে তিনি একটি পডকাস্টের জন্যও কাজে লাগাচ্ছেন সিভা বৈদ্যনাথন।
‘আমার কাজের সময় শেষ’
সারা বার্জেস একজন ডিজাইনার। তিনি একটি ছোট বাড়িতে থাকেন, তার কাজের কোন নির্দিষ্ট এলাকা নেই।
বাড়িতে বসে কাজ করার সময় যখন শেষ – তখন স্মার্টফোনের একটি এ্যাপে একটা বোতাম টিপে জানাতে হয়: “আমার কাজের সময় শেষ – আমি বিদায় নিলাম।”
তিনি বলছেন, বাড়িতে থেকেও কাজের সময় আর ‘হোম টাইমে’র এই পার্থক্য স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে পারাটা তাকে একটা দারুণ মানসিক স্বস্তি দেয়।
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা
বাঅ/এমএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন