লেখালেখি

অমিত পর্ব – ১৪ |||| সুশীল কুমার পোদ্দার


পূর্ব প্রকাশের পর

অমিত পর্ব – ১৪ |||| সুশীল কুমার পোদ্দার

জেনেটিক মেডিসিনের অপরিমেয় সাফল্যের কথা ভাবতে ভাবতে অমিতের চোখ আটকে যায় দেওয়ালে ঝুলানো ক্যালেন্ডার টিভির খবরের উপর। কারা যেন রাস্তায় মিছিল করছে। বট গাছে ঝুলে আছে কিছু মানুষের লাশ , তাদের ঘিরে পুলিশ আর উৎসুক মানুষের ভিড়। টিভি রিপোর্টার বাংলাদেশ নিয়ে, কোন ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন পাঠ করছেন। অমিত মনোযোগী হতেই টিভিতে চলে আসে অন্য এক খবর। একটা অস্থিরতা ওকে ব্যাকুল করে তোলে। দেশে কি নতুন কোন বিপদ এসেছে? অমিত পকেট থেকে ভাজ করা খবরের কাগজের গেজেটটা (দ্বাবিংশ শতকের খবরের কাগজ আর কাগজে তৈরি হয় না। একটা ভাজ করা প্লাস্টিকের সিটের উপর বাটন চাপলেই ডাউনলোড হয়ে যায় যাবতীয় খবর ) বেড় করতেই ভেসে আসে দৃশ্যময় বাংলাদেশের খবর। প্লাস্টিকের পর্দায় ভেসে উঠে এক বট গাছ, পুলিশ অসংখ্য গ্রামবাসীকে করেছে গ্রেফতার। ক্ষিপ্ত গ্রামবাসী সমস্বরে শ্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে আসছে । এক কিশোরী ধর্ষিত হয়েছে কিছু বখাটে কুলাঙ্গারের হাতে। বাবা, মা বিচার চেতে যেয়ে হয়েছে নিগৃহীত। বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণ মৃত্যুদন্ড যোগ্য অপরাধ হলেও, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে পুলিশ থেকেছে নীরব, যারা প্রতিবাদ করে এগিয়ে যেতে চেয়েছে তাদেরকেই উল্টো ধর্ষণের মামালায় পুলিশ করেছে গ্রেফতার। নিরুপায় গ্রামবাসী তাই একজোট হয়ে আইন তুলে নিয়েছে হাতে। তারা রাতের আধারে অপরাধীদের ঝুলিয়ে দিয়েছে গাছে।

ধর্ষণের খবর পড়তে পড়তে অমিতের মনের পর্দায় ভেসে উঠে এক কিশোরীর নিষ্পাপ মুখ। যমুনার চর পেরিয়ে অমিত তখন শহরে। ও তখন কলেজে পড়ে। শহরের উপকণ্ঠে আরও কজন মিলে একসাথে থাকে। সেবার এক বিরাট বন্যা এসেছিল। শহরের বড় বড় রাস্তাগুলো গেছে তলিয়ে। অসংখ্য মানুষ আশ্রয় নিয়েছে স্কুলের আঙ্গিনায়। ওর এক বন্ধু সেদিন খবর দিয়েছিল, অমিত স্কুলের পেছনে পুকুরের মাঝে এক সংখ্যালঘু কিশোরীর নগ্ন লাশ ভেসে উঠেছে। অমিত কৌতূহল বসতঃ ছুটে গিয়েছিল সেই লাশ দেখতে। ততক্ষণে লাশটাকে জল থেকে উঠিয়ে আনা হয়েছে, আবৃত করা হয়েছে তার নগ্ন দেহ। লাশকে জড়িয়ে ধরে তার দরিদ্র বাবা-মা বিলাপ করে যাচ্ছে। বন্যায় মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে ওরা মেয়েটাকে রেখে এসেছিল আর আত্মীয়ের বাড়ীতে। সেই বাড়ির এক নষ্ট সন্তান তার সাঙ্গপাঙ্গ মিলে মেয়েটাকে শ্লীলতাহানি করে, শ্বাসরোধ করে ভাসিয়ে দিয়েছিল বানের জলে। সেদিন মেয়েটার লাশটাকে ঘিড়ে হয়েছিল অর্থের মহোৎসব। শহরের বেশ কিছু হলুদ সাংবাদিক, প্রশাসন রাতের অন্ধকারে ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেয় সে অর্থ। দরিদ্র পিতা আদালতে হাজিরা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে আসে ফিরে।

অমিত এ জীবনে এমনি কত নিষ্ঠুর ঘটনা দেখেছে, শুনেছে। দু’শত বছর আগের খবরের কাগজে দেখেছে ধর্ষিতা পূর্ণিমার ছবি, ছবি রানীর ছবিসহ অসংখ্য সংখ্যালঘু নির্যাতিত মা-বোনের খবর। অমিত ভাবে সে তো অতীতের স্মৃতি। কিন্তু আজও তার দেশ একই ভাবে ধর্ষিত হচ্ছে জেনে মনটা কষ্টে ভরে যায়। দেশে আইন আছে, কিন্তু সেই আইন প্রয়োগের নেই কোন নিশ্চয়তা। প্রায় ক্ষেত্রেই আইন ব্যবহৃত হয় ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের রক্ষা করে নিরীহ মানুষকে হয়রানী করার জন্য। তাই ধর্ষণের মতো ঘৃণিত কাজের জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান থাকলেও সেখানে ঝুলান হয় নিরপরাধ কোন বলির পাঠাকে।

পৃথিবীর অনেক দেশে আজ মৃত্যুদণ্ডাদেশ বিধান উঠে গেছে। যেহেতু মৃত্যুদণ্ড অপরাধ প্রবণতা দমনের কোন কার্যকরী সমাধান নয়, তাই তার স্থলে এসেছে কার্যকরী কারেকশনাল পদ্ধতি। এই কারেকশনাল পদ্ধতিতে যোগ হয়েছে শিক্ষা, পর্যাপ্ত খেলাধুলা, ব্যায়ম, সামাজিক সচেতনতা, সাইকোথেরাপী, pharmacogenomics, ও মেডিক্যাল জেনেটিক্স।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন প্রতিটি মানুষের মানুষিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে তার অভিজ্ঞতা, পরিবেশ এবং সর্বোপরি তার জীন বিন্যাসের উপর। যদিও জীনের মাঝে নেই কোন একক অপরাধী জীন, তবু এই জীন বিন্যাস কারোকে কারোকে নেশাগ্রস্থ বা অপরাধী বানাতে সাহায্য করে। জীন সিকুয়েন্সের ১% এর মধ্যে আছে এই রহস্যের সংকেত। নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির জীন মিউটেশন হার সাধারনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ । অপরাধের সাথে নেশার আছে এক গভীর সম্পর্ক। জীন বিন্যাস যেমন মানুষকে নেশাগ্রস্থ বা অপরাধী বানাতে সাহায্য করে তেমনি নেশাও ব্যক্তি মানুষের মস্তিষ্ককে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে। আর এর জন্য হিস্টোন নামে এক প্রোটিনকে দায়ী করা হয়। এই হিস্টোনকে কেন্দ্র করেই ক্রোমোজোম পায় তার পেচান সিড়ির মতো গঠন। শুধু তাই নয়, ক্রোমোজোমের কোন অংশের তথ্য উন্মোচন করবে আর কোন অংশের তথ্য গোপন করবে – তার নিয়ন্ত্রণ এই হিস্টোনের হাতে। যাকে বলে gene expression এবং gene silence । বিজ্ঞানীরা দেখেছেন কোন কোন মাদক এই gene expression এবং gene silence কে প্রভাবিত করে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে এমন এক পরিবর্তন আনে যা মানুষকে অপরাধ মূলক কাজ করতে উৎসাহিত করে। বিজ্ঞানীরা এও দেখছেন বাহির হতে কোন এনজাইম এবং প্রোটিন ব্যবহার করে হিস্টোনকে প্রভাবিত করা সম্ভব যা হয়তো মানুষকে অপরাধ জগত থেকে নিয়ে আসবে সরিয়ে, নিজের কৃতকর্মের জন্য জাগাবে অনুশোচনাবোধ….

চলবে…

 

অমিত পর্ব – ১৪ |||| সুশীল কুমার পোদ্দার ওয়াটারলু, কানাডা নিবাসী ।  ফলিত পদার্থ বিদ্যা ও ইলেকট্রনিক্স,  মাস্টার্স,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স,   ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, পি, এইচ, ডি,   ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। সিস্টেম ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স,  ওয়াটারলু, বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা ।।

 

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন