ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সব স্মৃতিচিহ্ন, জেলা গণগ্রন্থাগার, প্রেস ক্লাব, জেলা পরিষদ ভবন, সার্কিট হাউস, জেলা জজের বাসভবন, রেলস্টেশন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ সব সরকারি অফিস
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের আগুনে পুড়ে ছাই সব
মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া/৩০ মার্চ ।হেফাজতে ইসলামের তান্ডবের আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিচিহ্ন থেকে শুরু করে রেলস্টেশন, জেলা গণগ্রন্থাগার, প্রেস ক্লাব, জেলা পরিষদ ভবন, সার্কিট হাউস, শিল্পকলা, ভূমি অফিস, জেলা জজের বাসভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সম্পদ কোনো কিছুই বাদ যায়নি এ মধ্যযুগীয় তান্ডব থেকে। সার্বিক ঘটনা তদন্তে সরকারের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব ঘটনায় সাতটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটক হয়েছেন ১৪ জন।
গত রবিবার হরতালের সময় হেফাজতের তান্ডবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর অনেকটা ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়। হেফাজতের হামলায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনপদ। তাদের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ স্পর্শ করেছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ ভাষা চত্বর, সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনের একটি জাদুঘর, তিনটি ক্লাসরুম, সরোদ মঞ্চ, প্রশাসনিক কক্ষ ও স্টোররুমে থাকা বাদ্যযন্ত্র, চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য আসবাবপত্র, আবদুল কুদ্দুস মাখন মুক্তমঞ্চ, কালীবাড়ি মন্দিরের প্রতিমা, জেলা পুলিশ লাইন, ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয়, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশ সুপারের বাসভবন, সরাইলের হাইওয়ে থানা, সদরের খাঁটিহাতা থানা, রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, সদর থানাধীন দুই নম্বর পুলিশ ফাঁড়ি, জেলা আনসার-ভিডিপি কার্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়, জেলা প্রশাসন আয়োজিত উন্নয়ন মেলা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স, ব্যাংক এশিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর কার্যালয়, মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, দলিল লেখক সমিতির কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের কার্যালয় ও বাড়ি, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও আয়কর উপদেষ্টা জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়ার কার্যালয়, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম রুবেলের বাড়ি, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভনের বাড়ি, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়ার অফিস, বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসিমা মুকাই আলীর শহরের হালদারপাড়ার বাসভবন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব আলম খোকনের বাড়ি ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়। এ ছাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রতিনিধি রিয়াজ উদ্দিনের ওপর হামলা চালানো হয়।
তবে এসব ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করে এসব ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ‘সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনের তাঁর হাতে লেখা চিঠি, ব্যবহৃত নানা সামগ্রী ও দুর্লভ ছবি ধ্বংস হয়েছে। আগুনে পোড়া জিনিসপত্রের ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে। পূর্বপাশের ভবনের প্রতিটি কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে পোড়া ছাই। অফিস রুমেরও তছনছ অবস্থা। মিউজিয়ামের ভিতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাঁচ ও পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের ছাই। পাখাগুলো আগুনের তাপে বাঁকা হয়ে গেছে।
গত দুই দিনে সাধারণ মানুষ, সংগীতাঙ্গনের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাংস্কৃতিক সংগঠক পুড়ে যাওয়া সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন দেখতে ভিড় করছেন। এর আগে ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটিকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে সংশিষ্টরা বলছেন এবারের ঘটনা ভয়াবহ। তারা জানান, এবার প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি কক্ষ বেছে বেছে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ছয়টি কক্ষের মধ্যে একটি জাদুঘর, তিনটি ক্লাসরুম, মুক্ত আলোচনার সরোদ মঞ্চ, প্রশাসনিক কক্ষ ও স্টোররুমে থাকা বাদ্যযন্ত্র, চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র সবকিছু ভেঙে তছনছ করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রহরী সাজন সরকার বলেন, তিনটি গেট তালা দিয়ে আমি বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারা শাবল দিয়ে তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। আমি প্রতিষ্ঠানটির একটি কক্ষে থাকি। বর্তমানে ঘরগুলো ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আর কিছু রক্ষিত নেই। রাত পর্যন্ত আগুন জ্বলেছে। হরতাল পালনকারীদের ভয়ে কেউ আগুন নেভাতে এগিয়ে আসেনি।
আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনের পুড়ে যাওয়া দৃশ্য দেখে প্রবীণ সংগীত প্রশিক্ষক ছবি ভট্টাচার্য বলেন, পবিত্র এই প্রতিষ্ঠানটির এমন করুণ অবস্থা দেখে বুক ফেটে কান্না আসছে। প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক নাট্যব্যক্তিত্ব মনজুরুল আলম বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে থাকা অতি দুর্লভ আড়াইশ বই, আড়াই হাজার ছবি, দলিলপত্র, আলাউদ্দিন খাঁর লেখা সংগীতের পান্ডুলিপি, দুর্লভ ছবি, সংগীতের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি হারমোনিয়াম, ১৯ জোড়া তবলা, সেতার, মন্দিরা, করতাল, ৩০টি বাঁশি, ৫ জোড়া নূপুর, ১টি ম্যারাক্কাস, বেহালা, খুঞ্জন, একটি ইলেকট্রনিক রবাব ও বিখ্যাত বাদ্যযন্ত্র সরোদ ছিল। সাউন্ড সিস্টেম, দুটি এসি, স্মার্ট টিভি ফ্রিজ, নগদ ১৮ হাজার ৫০০ টাকাসহ সব মিলিয়ে অন্তত ৩৫ লাখ টাকার যন্ত্রপাতির ক্ষতি হয়েছে। এবারের আগুনে সংগীতাঙ্গনের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়েছে। আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিবিজড়িত শেষ যে কয়েকটি জিনিসপত্র ছিল, সেগুলোও এবার শেষ হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, এবারের হামলা ছিল অতীতের যে কোনো হামলার চেয়ে ভয়াবহ।
উল্লেখ্য, সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নিজের কেনা জায়গায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পুরাতন জেলরোডে ১৯৫৬ সালে ৫৬ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন’ প্রতিষ্ঠানটি। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি পরিচালনা কমিটি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। পৌরসভা কার্যালয় : আগুনে পৌরসভা কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার সবকটি কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকটি কক্ষে থাকা প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। মেয়র এবং সচিবের কক্ষে পোড়া আসবাবপত্র পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কবেনাগাদ পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হবে তা স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। পৌরসভার গাড়ির গ্যারেজে থাকা সব গাড়ি আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে।
আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন : হেফাজত কর্মীদের চালানো তান্ডবে আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনটির এখন ছাই ছাড়া আর কিছুই নেই। মিলনায়তনের কয়েক শ চেয়ার এবং দরজা-জানালা পুড়ে কয়লা হয়েছে। দেয়ালের পলেস্তারাও খসে পড়েছে। সবকটি পাখা আগুনের তাপে বাঁকা হয়ে নিচের দিকে হেলে পড়েছে।
পরিকল্পিত তান্ডব : গত তিন দিনের হেফাজতে ইসলামের ডাকা কর্মসূচিকে ঘিরে এক ভয়াবহ অরাজকতা সৃষ্টি হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। পুলিশের পক্ষ থেকে এসব ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া তান্ডবের ঘটনা অনেকটাই পরিকল্পিত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ব্যাপক ভাঙচুরের পর কেপিআইসহ সরকারি বেশ কিছু স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের সদর দফতরের গাড়ি গ্যারেজ, হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, আশুগঞ্জ টোল প্লাজার পুলিশ ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৮ মার্চ হরতালের আগে বিকালে শহরে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশটি বিক্ষোভে রূপ নেওয়ার পরই দ্রুত বদলে যায় পরিস্থিতি। বিক্ষোভ মিছিলটি প্রধান সড়ক টিএ রোড অতিক্রম করার সময় মিছিলের পেছনের অংশ থেকে জেলার প্রধান মাদরাসা জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসায় হামলা চালায় কয়েকজন। এ সময় অর্ধশত ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। পরক্ষণেই মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় মসজিদ-মাদরাসা রক্ষার। ঘোষণার পর পর মাদরাসার ছাত্ররা রাস্তায় নেমে পড়ে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় লোকজন। রাত প্রায় ৮টায় মাদরাসা সড়কে বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন হতাহত হয়। পরদিন হরতাল চলাকালে সকাল থেকে পুলিশ ও বিজিবি শহরের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে হেফাজত কর্মীদের শহরে প্রবেশ। অদৃশ্য হয়ে যান শহরে অবস্থানকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সুযোগে নারকীয় তান্ডব চালায় হেফাজত। আলোচনা রয়েছে, জেলার বাইরে থেকে শিবির কর্মীরা যোগ দেয় হরতালে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে হাজার হাজার লোক প্রবেশ করে। এতে পুলিশ অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে যায়। সদর থানা থেকে বারবার পুলিশ মাইকে ঘোষণা করে, ‘আপনারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করুন। আমাদের কোনো ক্ষতি করবেন না। থানার দিকে এগোবেন না।’ তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইনে পাঁচ দফা হামলা চালায় হামলাকারীরা। জেলার অন্যতম কেপিআই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের সদর দফতরে পাঁচ দফা হামলার পর বিকাল ৪টার দিকে গাড়ির গ্যারেজে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, হেফাজতের আড়ালে সরকারবিরোধী বিশেষ গোষ্ঠী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ তান্ডব চালায়।
প্রশাসনের নীরবতা : দিনভর তান্ডবের সময় পুলিশ ও প্রশাসন কেন নীরব ছিল-এ প্রশ্ন এখনো মানুষের মুখে মুখে। সাধারণ মানুষ বলছে, পুলিশ এবং প্রশাসন আন্তরিক হলে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ও বিপুল প্রাণহানি এড়ানো যেত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, হরতালের দিন পুলিশ ও প্রশাসন আরও কঠোর হলে প্রাণহানির সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ত। কারণ বিশ্বরোড হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার সময় সেখানে আটকা পড়েন ৭০ জন পুলিশ। তাদের আর্তচিৎকারে ওয়্যারলেস সেটে থাকা কর্মকর্তারাও হতভম্ব হয়ে পড়েন। তাদের আকুতি ছিল হয়তো তারা আর বাঁচবেন না। কেউ রক্ষা করবে না। শহরের পৌর এলাকার পৈরতলা এলাকা ও পুলিশ লাইনে এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সদর উপজেলার সুহিলপুর সড়কে এমন ঘটনা ঘটেছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা যদি কৌশলী না হতাম, তবে আরও মানুষের জীবন বিপন্ন হতো। হয়তো শত শত পুলিশের জীবন দিয়ে প্রমাণ করতে হতো আমরা দায়িত্ব পালন করেছি। এ জন্য রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছাকে দায়ী করেন। সরকারি নির্দেশনা না মেনে মিছিল করায় পরবর্তী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা জানান।
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন : টানা তিন দিনব্যাপী তান্ডবে সরকারি-বেসরকারি অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
সোমবার সকালে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গন, জেলা শিল্পকলা, আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, পৌরসভাসহ বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা তিনি পরিদর্শন করেন এবং সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, প্রতিটি ঘটনার জন্যই মামলা হবে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তিনি আরও জানান, বিষয়টি তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে।
সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, পৌরভবন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবসহ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, তান্ডবের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সময় জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাত মামলা, গ্রেফতার ১৪ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত সাড়ে ছয় হাজারকে আসামি করে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আহসান হাবীব এবং আনসার ও ভিডিপি অফিসে হামলার ঘটনায় আনসার ও ভিডিপির এক কর্মকর্তা অজ্ঞাত সাড়ে চার শ থেকে পাঁচ শ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি আবদুর রহিম হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচটি মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করেন। আশুগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর ওপর টোলপ্লাজা ও টোলপ্লাজার পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় আশুগঞ্জ থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে বলে আশুগঞ্জ থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ জানিয়েছেন।
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন
এস এস/সিএ