সৌদিতে কোয়ারেন্টিন নিয়ে ভোগান্তি
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সঙ্গে এ কী আচরণ!
। তিন তারকার টাকা নিয়ে রাখা হয় নিম্নমানের হোটেলে । দূতাবাসের অভিযোগের তীর বিমানের দিকে।
গোলাম সাত্তার রনি ও আরিফুজ্জামান মামুন । সৌদি আরবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কর্মীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে ভোগান্তির অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের হোটেল বুকিং ও কোয়ারেন্টিন প্যাকেজে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগও এসেছে। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব যাওয়া যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের।
অভিযোগ রয়েছে, প্যাকেজে যে মানের হোটেলের কথা বলা হয়েছে, বাস্তবে সে হোটেলে রাখা হচ্ছে না প্রবাসী কর্মীদের। উপরন্তু অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শন ও ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শুনে সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইংয়ের প্রথম সচিব সফিকুল ইসলাম প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে গত ৩ জুন চিঠি দেন। ৭ জুন মন্ত্রণালয় ওই চিঠির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেয়। যদিও বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
রিয়াদ থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস চিঠিতে জানায়, গত ২০ মে করোনার টিকা গ্রহণ না করা থাকলে সৌদি প্রবেশকালে বাধ্যতামূলকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বলে আদেশ জারি করে দেশটির সরকার। এ নির্দেশনার পর সৌদি ফিরতে ইচ্ছুক কর্মীরা হোটেল কোয়ারেন্টিন বাবদ জনপ্রতি ৬২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ৬৩ হাজার ৬০০ টাকা বাংলাদেশ বিমানকে পরিশোধ করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭৮ হাজার ৩১৫ টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতে হয়েছে। এত টাকা দিলেও অত্যন্ত নিম্নমানের অ্যাপার্টমেন্টে রাখা হয়, যার ভাড়া দৈনিক ১০০–১৫০ সৌদি রিয়ালের বেশি হওয়ার কথা নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ২৯ মে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট দাম্মামে অবতরণ করলে ১২২ জনকে হোটেলে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজ্জা প্যালেসে ৫১ জন, শ্যালী রেসিডেন্সে ৪০ জন এবং দার আল সারক হোটেলে ৩১ জনকে রাখা হয়। সরেজমিন ঘুরে এ মানের হোটেলের ৭ দিনের কোয়ারেন্টিন খরচ ৪০ হাজার ৬০০ থেকে ৫১ হাজার ৮৬ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয় বলে জানা যায়। ৩০ মে একটি ফ্লাইটে রিয়াদে যান ১০০ জন। তাদের কোয়াইট রুমস অ্যাপার্টমেন্টস নামের হোটেলে কোয়ারেন্টিনে রাখার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন পরিদর্শনে গিয়ে দূতাবাস প্রতিনিধি কোনো বাংলাদেশি যাত্রীকে পাননি। সেখানে আফগান যাত্রীরা অবস্থান করছিল।
এর পর দূতাবাসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করলে বিমানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি জানান, যাত্রীদের সুমু প্যালেস, ফাককানাতুল মাকান, আল আজিরিয়া ও সায়লেন্ট–৩ নামে চারটি হোটেলে রাখা হয়েছে। যাত্রীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রত্যেকে কোয়ারেন্টিন বাবদ ৭৮ হাজার ৩১৫ টাকা দিয়েছেন। হোটেল পরিদর্শন করে, ফোনে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ও স্থানীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ মানের হোটেলের ৭ দিনের কোয়ারেন্টিন খরচ ৪০ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ৫৪ হাজার ৫০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয় বলে জানা যায়। বিমান থেকে সকালে অবতরণের পর দুপুর ১টা পর্যন্ত কোনো খাবার পাননি বলেও অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
চিঠিতে দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইংয়ের সচিব সফিকুল ইসলাম আরও উল্লেখ করেছেন, আল আজিরিয়া হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা যাত্রীরা গত ১ জুন পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় না পেয়ে দূতাবাসে যোগাযোগ করলে দুজন প্রতিনিধিকে বিষয়টি দেখার জন্য পাঠানো হয়। প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়ে প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে তাদের অভিযোগ শোনেন। যাত্রীরা জানান, তারা প্রত্যেকে বাংলাদেশে কোয়ারেন্টিন বাবদ ৭৮ হাজার ৩১৫ টাকা করে দিয়েছেন। তখন বলা হয়েছিল, তাদের রিয়াদে তিন তারকা হোটেলে রাখা হবে। তারা আরও কম খরচের হোটেলে থাকতে চাইলেও বিমান কর্তৃপক্ষ অপারগতা জানায়।
তিন তারকা হোটেলের কথা বলা হলেও রিয়াদে আসার পর কর্মীদের রাখা হয় ফার্নিশড অ্যাপার্টমেন্টে। যার প্রতি কক্ষের দৈনিক ভাড়া ১০০–১৫০ সৌদি রিয়াল (২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা)। তা ছাড়া দিনে মাত্র ১২০০ মিলিলিটার পানি ও তিন বেলা যে খাবার দেওয়া হয় তা মানসম্মত ও পর্যাপ্ত নয়। বিষয়গুলো হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা জানায়, প্রত্যেক যাত্রীর ছয় রাত অবস্থান এবং খাবার সরবরাহ বাবদ তাদের সঙ্গে এক হাজার সৌদি রিয়াল (প্রায় ২২ হাজার ৬০০ টাকা) প্রদানের চুক্তি হয়েছে। ওয়াসিম নামে এক ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে এই চুক্তি হয়। যাত্রীরা হোটেলের পক্ষ থেকে এমন তথ্য জেনে খুবই ক্ষুব্ধ হন।
তারা আরও জানান, মাসে মাত্র ১০০০–১৫০০ রিয়াল বেতনের চাকরি বাঁচাতে পরিবার পরিজন ফেলে সৌদি ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। আর তাদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এমন প্রতারণা করা হয়েছে। তারা এর বিচার এবং ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান
আল আজিরিয়া অ্যাপার্টমেন্টের স্বত্বাধিকারী আবু খালেদ জানান, তিনি তার অ্যাপার্টমেন্ট মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া নিলে শুধু থাকা বাবদ দৈনিক ১০০ সৌদি রিয়াল হারে ভাড়া নিয়ে দূতাবাস কিংবা বিমান বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি চুক্তিবদ্ধ হতে চান। এ ছাড়া মাসভিত্তিক চুক্তি না করে ফ্লাইট ছাড়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে জানালে যাত্রীসংখ্যা অনুযায়ী তিনি কক্ষপ্রতি ১৫০ সৌদি রিয়াল হারে ভাড়া নেবেন বলেও জানান।
এ ব্যাপারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল আমাদের সময়কে বলেন, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ সংবলিত একটি পত্র দেওয়া হয়েছে। আমরা তার উত্তর দিয়েছি। অভিযোগ সত্য নয়। কী উত্তর দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। -আমাদের সময়
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান