অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ফিচার্ড

সেনা-পুলিশে নিয়োগের আগে ‘সতীত্ব’ পরীক্ষা করে এই দেশ

১ / ১৬ বিশ্বের অন্যতম বড় দ্বীপ-দেশ ইন্দোনেশিয়া। জনসংখ্যার নিরিখে বিশ্বের চতুর্থ। পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গাও। কিন্তু জানেন কি এই দেশ আরও একটি কারণে বিশ্বের নজরে রয়েছে। সেখানে আজও ‘সতীত্বের পরীক্ষা’ দিতে হয় মহিলাদের!

Indonesia Virginity Test: সেনা-পুলিশে নিয়োগের আগে ‘সতীত্ব’ পরীক্ষা করে এই দেশ

গত পাঁচ দশক ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের উপর এই নিয়ম চলে আসছে ইন্দোনেশিয়ায়। ইন্দোনেশিয়ার মহিলারা যদি পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চান, তা হলে যোগ্যতা পরীক্ষায় তাঁদের প্রথমে ‘সতীত্বের প্রমাণ’ দিতে হয়!
‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নামে পরিচিত এই পরীক্ষা শুধু মহিলাদের মানসিক ভাবেই বিপর্যস্ত করে তোলে তা-ই নয়, অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক এই পদ্ধতিতে মহিলাদের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়। অথচ পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে গেলে পুরুষদের এমন কোনও প্রমাণ দিতে হয় না।

চিকিৎসক (পুরুষ এবং মহিলা নির্বিশেষে) মহিলাদের হাইমেন পর্দা সুরক্ষিত রয়েছে কি না পরীক্ষা করেন। পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ফলে এই পর্দাটি ছিঁড়ে যায়। পর্দা ঠিকঠাক না থাকা মানেই ধরে নেওয়া হয় ওই মহিলা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। যদিও চিকিৎসকদের মতে, এই পর্দা আরও অনেক কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এই পদক্ষেপ মহিলাদের উপর ১৯৬৫ সাল থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই তখন থেকেই দেশের ভিতরে এবং বাইরে এ নিয়ে সরব হতে শুরু করেছিলেন মহিলারা। নানা সময় এর সমালোচনা হয়েছে বিভিন্ন স্তরে।

আবার উল্টো দিকও রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর অনেক অফিসার আবার এর ‘গুরুত্ব’ বোঝানোর চেষ্টা করেছেন বিশ্বকে। উচ্চপদস্থ অফিসারদের যুক্তি ছিল, এক জন মহিলা যিনি সেনা হিসাবে দেশের সেবা করতে চান তাঁকে মানসিক এবং শারীরিক দিক থেকে অত্যন্ত দৃঢ় হতে হবে। তাঁদের দাবি, ‘সতীত্ব’ই নাকি কোনও মহিলার দৃঢ় মানসিকতার পরিচয়।

১৯৯৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার কমিশন এই নিয়মকে বেআইনি ঘোষণা করে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশন এই পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দাবি করে। কিন্তু এত কিছুর পরও চুপ ছিল ইন্দোনেশিয়া প্রশাসন।

২০১৪ সালে ইন্দোনেশিয়া পুলিশে নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি ফের ঝড় তোলে। তাতে পরিষ্কার লেখা ছিল, যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি মহিলাদের ‘সতীত্বের’ প্রমাণ দেওয়া বাধ্যতামূলক। তাতে এও লেখা ছিল যে, যে সমস্ত মহিলা নিজেদের পুলিশ হিসাবে দেখতে চান তাঁরা যেন ছোট থেকেই ‘সতীত্ব’ বজায় রাখার মানসিকতা তৈরি করে নেন।

শুধু পুলিশ এবং সেনাবাহিনীতেই নয়, ২০১৩ সাল নাগাদ ইন্দোনেশিয়ার বেশ কিছু স্কুলও ছাত্রী ভর্তির সময় এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেয়।

এর পর ইন্দোনেশিয়ার চিকিৎসকরাও এর বিরুদ্ধে সরব হন। হাইমেন পর্দার পরিস্থিতি বৈজ্ঞানিক ভাবে কখনও কোনও মহিলার সতীত্বের প্রমাণ হতে পারে না, সাফ জানিয়ে দেন তাঁরা।

কোনও মহিলার হাইমেন পর্দা নানা কারণে ছিঁড়ে যেতে বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পর্দা ছেঁড়ার প্রকৃত কারণ বিশ্লেষণ না করেই ওই মহিলা কোনও পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন ধরে নেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল চিকিৎসক মহল।

২০১৫ সালে ইউরোপীয় কমিশন এই অভ্যাসকে ‘বৈষম্যমূলক এবং অবমাননাকর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন চিকিৎসক নিলা ময়লোয়েক। তিনিও সে সময় এই নিয়মের সমালোচনা করেন।

প্রকাশ্যেই তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে মহিলা নিয়োগে এই নিয়মের প্রয়োজনীয়তা, পদ্ধতি এবং ফলাফল নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।’’

২০১৯ সালে পশ্চিম জাভার এক জিমন্যাস্টকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান গেমসে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তিনি নাকি ‘সতীত্ব’ হারিয়েছিলেন।

২০১৯ সালের এই ঘটনার পর চাপা অসন্তোষ ব্যাপক আকার ধারণ করতে শুরু করে ইন্দোনেশিয়ায়। আন্তর্জাতিক স্তর থেকেও এই অবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ করার চাপ বাড়তে থাকে ইন্দোনেশিয়ার উপর।

দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে চুপ করে থাকা প্রশাসন এ বার নড়েচড়ে বসেছে। সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো বার্তায় এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার আভাস দিয়েছেন সে দেশের এক সেনাকর্তা।

সূত্রঃ আনন্দবাজার ( Indonesia Virginity Test: সেনা-পুলিশে নিয়োগের আগে ‘সতীত্ব’ পরীক্ষা করে এই দেশ )

 

সংবাদটি শেয়ার করুন