বাংলাদেশের ব্যাংকে মুনাফা কমেছে আমানতকারীর
নানা কারণে সংকটময় মুহূর্ত পার করছে দেশের আর্থিক খাত। অতিরিক্ত তারল্য, বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ঋণপ্রবাহে ভাটা, করোনায় বড় ঋণগ্রহীতাকে কিস্তি পরিশোধে ছাড় দেওয়া, ঋণখেলাপিদের দৌরাত্ম্য এবং বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ব্যাংক খাত। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে জীবনযাত্রা থমকে যাওয়ায় দেশের আর্থিক খাতে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলো টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে আমানতের সুদের হার কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
অন্যদিকে আমানতের সুদের হার কমে যাওয়ায় ক্ষুদ্র আমানতকারীদের মধ্যে যারা এ টাকায় সংসার চালান তারাও পড়েছেন বিপাকে। অর্থনীতিবিদদের মতে, মেয়াদি আমানতে মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম হারে সুদ দেওয়া হলে আমানতকারীদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। এ অবস্থার উন্নতি না হলে ব্যাংকগুলোর ওপর আমানতকারীদের আস্থা কমে যাবে। তারা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করবেন। এতে ব্যাংকগুলোও আর্থিক সংকটে পড়ে যাবে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হস্তক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমানতের সুদের হার স্বাভাবিক রাখতে বাজার থেকে তারল্য তুলে নেওয়ার পাশাপাশি আমানতের সুদহারের সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ৮ আগস্ট জারি করা এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, তিন মাস ও তার বেশি মেয়াদি আমানতের সুদহার কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হবে না। জুনে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ওই মাসে ব্যাংকগুলোতে সুদহার ছিল ১ থেকে ৬ শতাংশ।
সোমবার থেকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’-এর মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে কী পরিমাণ অর্থ ব্যাংকগুলো থেকে তুলে নেওয়া হবে সেটি এখনো নির্ধারণ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদের মতে, ব্যাংকগুলোর ওপর ঋণ প্রদানের নির্দিষ্ট সীমারেখা দেওয়া এবং সুদের হার নির্ধারণ করে দেওয়াসহ কিছু বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দেওয়ার কারণে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। এছাড়া তিনি ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকদের আমানতের সুদের হার কমিয়ে দেওয়ার জন্য বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার পাশাপাশি মহামারির প্রকোপকে দায়ী করেন।
বাংলাদেশের খবরকে এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘ব্যাংকগুলো ব্যবসা করে। সে মানুষের কাছ থেকে আমানত নিয়ে অন্যদের ঋণ দেয়। কিন্তু সেই ঋণ এবং ঋণের সুদের হারের ৬েক্ষত্রে ব্যাংকগুলোকে সীমারেখা দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের চাপে পড়ে ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনতে হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো সেই দায়টা গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দেয়। অর্থাৎ আমানতকারীদের সুদের হার কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির চেয়েও সুদের হার কমিয়ে দেওয়ায় গ্রাহকরাও ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখতে অনীহা প্রকাশ করতে পারে। এতে উভয়পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তার মতে, ব্যাংকগুলোতে স্বতঃসিদ্ধ নিয়মের ভিত্তিতে চলতে দেওয়া দরকার। ওপর থেকে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হলে তাতে হিতে বিপরীত হবে।
এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক বছর আগেও ব্যাংকে মেয়াদি আমানত রেখে ৯ থেকে ১২ শতাংশ সুদ পাওয়া যেত। এখন ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে আছে। হাতেগোনা দু-একটি ছাড়া ৫-৬ শতাংশ সুদ দিতে পারছে না কোনো ব্যাংক। সাধারণত ব্যাংকগুলো তিন মাসের কমে স্থায়ী আমানত জমা নেয় না। মার্চের শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে যে পরিমাণ আমানত ছিল, তার ৪৫ শতাংশই ছিল স্থায়ী আমানত। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ ছিল এক-দুই বছর মেয়াদি। এসব আমানতে এখন মাত্র কয়েকটি ব্যাংক ৬ শতাংশ বা এর বেশি সুদ দিতে পারছে।
তবে বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন এবিবি’র সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিনের মতে, আমানতকারীদের না ঠকিয়ে ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় কমানো উচিত। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের চালিকাশক্তি আমানত। কিন্তু আমানতকারীদের আয় কমে গেলে ব্যাংক থেকে আমানত কমবে। কারণ ব্যাংকগুলোর হাতে ভালো বিকল্পও নেই। ’
গত বছর বাজারে তারল্য বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিআরআর কমানোসহ বিভিন্ন নীতি সহায়তা প্রদান করে। কিন্তু করোনাসহ বিভিন্ন কারণে আশানুরূপ ঋণ প্রবাহ না বাড়ায় জুন শেষে ব্যাংক খাতে দুই লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এ কারণেও এখন তারা আমানত নিতেও অনীহা দেখাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আমানত বেড়ে ১৩ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ঋণ চাহিদা আগের তুলনায় ব্যাপক কমেছে। জুন শেষে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ।
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান