দেশের সংবাদ ফিচার্ড

এক জীবনের গল্প! ছেলের অনার্স শেষবর্ষ, মায়ের ডিগ্রি ফাইনাল

ছামিনা আক্তার

এক জীবনের গল্প! ছেলের অনার্স শেষবর্ষ, মায়ের ডিগ্রি ফাইনাল

শেখার কোনো বয়স নেই; এমন আপ্তবাক্যকে সত্যে পরিণত করতে চলেছেন নীলফামারীর ডোমারের ছামিনা আক্তার। মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণিতে থাকতেই  ১৪ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়। আর বিয়ের কিছুদিন পরই শুরু হয় সংসারে অশান্তি। বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া।  তাতেও রক্ষা হয়নি তার। শেষপর্যন্ত  দুই ছেলেকে নিয়ে স্বামীর ঘর ছাড়লেন তিনি।  নিলেন সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ। হয়ে উঠলেন স্বাবলম্বী। এখানেই শেষ হতে পারতো তার সংগ্রাম। কিন্তু না। এই অদম্য নারী  থেমে থাকেননি। বিয়ের পরপরই যে লেখাপড়ায় ছেদ পড়েছিল তার, সেখান থেকে আবারও শুরু করলেন তিনি। এবার তার বড় ছেলে দেবে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা। তিনিও থেমে নেই। তারও সামনে রয়েছে ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষা। সম্প্রতি ইত্তেফাক অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই নিজের সাফল্যগাথা বর্ণনা করলেন এই উদ্যোক্তা নারী। 

ছামিনা আক্তারের বাড়ি নীলফামারীর উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের সবুজপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম ছামছুল হক। বিয়ে হয়েছিল একই এলাকায় এক দরিদ্র পরিবারে। বিয়ের পর সংসারের অশান্তি ও স্বামীর ঘর ছাড়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নারী উন্নয়নমূলক সেমিনার ও প্রশিক্ষণে  অংশ নিতে থাকি। এরপর  যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সেলাই মেশিনে প্রশিক্ষণ নিয়ে  বাড়িতেই কাজ শুরু করি। এভাবেই নিজেই রোজগার করে আয় করি।’ তিনি বলেন,  ‘আমার প্রতিষ্ঠানে এই পর্যন্ত ৩০০জন প্রশিক্ষণ নিয়ে সেলাইয়ের কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছে।’

বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার প্রসঙ্গে তুলে ছামিনা আক্তার বলেন, ‘এখন নিজেই কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়ীতা পুরস্কার পেয়েছি।’ 

পারিবারিক জীবন প্রসঙ্গে ছামিনা বলেন, ‘কাগজে-কলমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিচ্ছেদ না হলেও আমার স্বামী আমার ও সন্তানের খোঁজ নেন না। আমি আমার মতো করেই সন্তানদের মানুষ করছি।’ 

এই নারী আরও বলেন, ‘এক বান্ধবীর অনুপ্রেরণায় গোমনাতী উম্মুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এরপর ২০১৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করি। ২০১৭ সালে দেবীগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে, উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসএস (পাস) কোর্সে ভর্তি হই।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আলাদা থাকি। আমার স্বামী ৭ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে তার বাড়িতেই সংসার করছেন। আমি স্বামী ও বাবার ওপর নির্ভশীল না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানো চেষ্টা করছি। নিজের উপার্জনে বাড়ি করেছি। দুই ছেলেকে লেখাপড়াসহ নিজের লেখাপাড়া চালিয়ে যাচ্ছি। এবারে বড় ছেলে অনার্স ফাইনাল পরিক্ষা দেবে। আমিও ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষা দেবো। মা-ছেলেই ফাইনাল পরিক্ষার্থী।’

নারী নেত্রী সহকারী অধ্যাপক ডেইজি নাজনীন মাশরাফি বলেন, ‘প্রতিকূল পরিবেশেও সফল নারী উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব। এটা ছামিনা প্রমাণ করেছেন। সামিনার মতো উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে তাদের ব্যবসা বড় করার সুযোগ দেওয়া উচিত।’

ডোমার পৌর মেয়র আলহাজ মনছুরুল ইসলাম দানু বলেন, ‘ছামিনা একজন আত্মবিশ্বাসী ও সফল নারী উদ্যোক্তা। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। এখন উজেলার অন্য নারীদেরও তিনি প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বালম্বী হওয়ায় সাহায্য করছেন। ছামিনার মতো নারী উদ্যোক্তাদের সাহায্যে পাশে পৌরসভা রয়েছে।’

-ইত্তেফাক

———————————————–

 




সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

 

 

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন