’৭১ এর গণহত্যার জাতিসংঘের স্বীকৃতির দাবি
টরন্টোতে ‘৭১ এর গণহত্যার’ জাতিসংঘের স্বীকৃতির দাবীতে অনুষ্ঠান
কানাডার টরন্টোতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সন্ধ্যায় টরন্টোর ২৫৫০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র ইউনাইটেড হোপ চার্চ অডিটোরিয়ামে ‘কানাডিয়ান কোয়ালিশন ফর রিকগনিশন অব বাংলাদেশ জেনোসাইড ইন ১৯৭১’ এর আয়োজনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার জাতিসংঘের স্বীকৃতির দাবীতে এক আলোচনা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর ধারণকৃত বিভিন্ন টেলিভিশনের ফুটেজ এবং এ যুদ্ধের উপর নির্মিত বিভিন্ন প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের গণহত্যা সম্পর্কীত অংশের সম্পাদিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত। ৩০ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই প্রামাণ্যচিত্রটি সম্পাদিত করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা এনায়েত করিম বাবুল।
প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের পর ১৯৭১ সালের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ পর্যায়ে স্মৃতিচারণ ও বক্তব্য রাখেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাক্তার মোহাম্মদ মোর্তুজার কন্যা দ্যুতি অরনি।
উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম অধিবেশনে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবির বিষয়টি প্রথমবারের মত এজেন্ডাভুক্ত ও আলোচিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর পর এই প্রথম জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে বাংলাদেশে সংঘটিত ভয়াবহতম, বীভৎস ও বর্বর গণহত্যা নিয়ে আলোচনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী বাংলাদেশীরা এই গণহত্যার জাতিসংঘের স্বীকৃতির দাবীতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কানাডার টরন্টো শহরেও স্বাধীনতাকামী প্রবাসীরা এই দাবীর পক্ষে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী পালন করে আসছে।
বাংলাদেশের গণহত্যার জাতিসংঘের স্বীকৃতি বিষয়ক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাবেক ছাত্রনেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রাক্তন এজিএস নাসির উদ দুজা।
এছাড়াও এ দাবীতে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা আকবর কবির, মুক্তিযোদ্ধা ছানাউল ইসলাম খান, মুক্তিযোদ্ধা ডঃ আজিজুল হক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিপি ফায়জুল করিম, সাংস্কৃতিক কর্মী নওশের আলী, মিনারা বেগম, সুমন সাঈয়েদ, ম্যাক আজাদ, সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর, মানবাধিকার কর্মী আরমান রশিদ এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা এনায়েত করিম বাবুল।
বক্তারা তাঁদের আলোচনায় বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার যৌক্তিক দাবীর বিষয়ে আলোকপাত করেন, সেই সাথে এই প্রক্রিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে এক হয়ে কাজ করার আহবান জানান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের গান, নাচ ও কবিতা পরিবেশিত হয়। বাংলাদেশের কিংবদন্তী হাইওয়ান গিটারিস্ট এনামুল কবির গিটারে মুক্তিযুদ্ধের একটি গান পরিবেশন করেন। নৃত্য পরিবেশন করেন টরন্টোর সাংস্কৃতিক জগতের প্রিয় মুখ অরুণা হায়দার।
কবি শামসুর রাহমান এবং রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতা আবৃত্তি করেন যথাক্রমে দিলারা নাহার বাবু ও কামরান করিম। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন সুমন সাঈয়েদ, নাহিদ কবির কাকলী, মৈত্রেয়ী দেবী, ফারহানা শান্তা, শাপলা শালুক, ফারজানা বিন্দু, বিদিতা, নুজাত শারিন, মোহাম্মদ শফিক, ইভানা, ওমর, হিরা ও সোহানা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তবলায় সংগত করেন রাজীব ও মামুন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ’৭১ এর গণহত্যার জাতিসংঘের স্বীকৃতির দাবীর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মনিস রফিক।