প্রাপ্তবয়স্কদের বিনোদন জগতে মিয়া খলিফার (Mia Khalifa) নাম বিতর্ক ও খ্যাতি দু’টিতেই বেশ জনপ্রিয়। মিয়া খলিফা লেবাননের একটি রক্ষণশীল পরিবারে লালিত-পালিত হয়ে পর্ন জগতে প্রভাবশালী তারকা হওয়া অসংখ্য বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই পোস্টে আমরা মিয়া খলিফার ইতিহাস, পর্নস্টার হয়ে ওঠার গল্প, মিয়া খলিফার ধর্ম, মিয়া খলিফার খেলা, পড়াশুনা ও তার ব্যক্তিগত জীবনী সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য এবং তাকে নিয়ে বিতর্কগুলির উপর আলোচনা করব।
মিয়া খলিফার ইতিহাস
মিয়া খলিফার ধর্ম, জন্ম, বসবাস ও শিক্ষা :
মিয়া খলিফা ফেব্রুয়ারী ১০, ১৯৯৩ সালে লেবাননের বৈরুতে একটি রক্ষণশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যপ্রাচ্যে জন্মগ্রহণ করায় অনেকের মনে প্রশ্ন, মিয়া খলিফা কি মুসলিম? না, তিনি মুসলিম বা ইসলাম ধর্মের নয়। তবে, মিয়া খলিফার ধর্ম কি? মিয়া খলিফা খ্রিস্টান ধর্মের, তিনি লেবাননের একটি খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম নেন।
লেবানন এবং দক্ষিণ লেবানন সংঘাতের কারণে মিয়ার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। সেখানে তারা মেরিল্যান্ডের মন্টগোমেরি কাউন্টিতে থাকতেন। বর্তমানে তিনি লস অ্যানঞ্জেলেসে বসবাস করছেন।
মিয়া খলিফা টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Texas, El Paso) ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ডিল বা নো ডিল -এ ব্রিফকেস গার্ল হিসাবে কাজ করেছিলেন।
তিনি লেবাননের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং রক্ষণশীল পরিবার ও সমাজে বসবাস করার চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করেছেন। যদিও তিনি কিশোর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন তবুও তার পরিবারে তাদের নিজ দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও রক্ষণশীলতা বজায় ছিলো।
মিয়া খলিফার পর্নস্টার হয়ে ওঠার গল্প :
পর্ন জগতে প্রবেশ মিয়া খলিফার ইতিহাস এর সবচেয়ে কৌতুহলী বিষয়। অনেকেই এ ব্যাপারে জানার জন্য বেশ কৌতুহলী। তবে জানুন পর্ন তারকা হয়ে উঠার পেছনে মিয়া খলিফার ইতিহাস–
২১ বছর বয়সে মিয়া যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে মন দিয়ে স্নাতক পড়ছিলেন। তিনি ক্যাম্পাসে নিজেকে গুটিয়ে রাখতেই পছন্দ করতেন। একসময় মিয়ার মনে হলো তার মধ্যে আত্ম-সম্মান বোধের ঘাটতি রয়েছে এজন্য তিনি আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না। এর সমাধানে ব্যায়াম করা শুরু করলেন এবং ৫০ পাউন্ড ওজন কমালেন। তাতেও সন্তুষ্ট হতে না পেরে সার্জারি করিয়ে স্তনের আকার বড় করলেন। তবুও মনে হচ্ছিলো কোনো উন্নতি হয়নি।
এরপর ২০১৪ সালে, একটি স্থানীয় ফাস্ট ফুড রেঁস্তোরায় কাজ করার সময় একটি মার্কিন বিশিষ্ট পর্ন ফিল্ম প্রডাকশন সংস্থার একজন প্রতিনিধি মিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি পর্নো ছবিতে কাজ করতে আগ্রহী কি না। সেই পর্ন প্রতিনিধি মিয়াকে এমন একটি সুযোগ অফার করেছিলেন যা তার জীবনকে চিরতরে পরিবর্তন করবে।
কৌতূহল, স্বাধীনতা ও অর্থ লোভে মিয়া খলিফা পর্ন ফিল্মে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি মিয়া ক্যালিস্তা (Mia Callista) এই ছদ্মনামে নীল ছবির দুনিয়ায় যুক্ত হয়েছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যেই মিয়া খলিফা তার সরল চেহারা, কিশোরী মনোভাব এবং অন-স্ক্রিন পারফরম্যান্সের জন্য পর্ন তারকা হিসেবে প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
মিয়া খলিফার হিজাব বিতর্ক এবং প্রতিক্রিয়া :
মিয়া খলিফার কিছু বিতর্কিত পর্ন ফিল্মে জড়িত থাকা, বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়বস্তু নিয়ে, তা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। হিজাব সহ বিভিন্ন ইসলামিক চিহ্ন যুক্ত পর্ন ভিডিও গুলো রক্ষণশীল ধর্মীয় ব্যক্তি ও সংগঠনের কাছে তীব্র সমালোচনার কারণ হয়েছিল।
এর ফলে মিয়া খলিফা তার নিরাপত্তার জন্য হুমকির সম্মুখীন হন। তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় এবং নিজ দেশ লেবাননে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। বিতর্ক সত্ত্বেও তিনি তার যৌনতা প্রকাশ করার এবং তার নিজের শরীরের বিষয়ে নিজের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করার জোর দিয়েছিলেন।
মিয়া খলিফার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিতর্ক ছিল হিজাব পরে পর্ন ছবি করা। এই দৃশ্য অনেকের মধ্যেই ক্ষোভ জন্ম দেয়। এটি ইসলামী বিশ্বাস এবং এর প্রতীককে অসম্মান করেছে বলে মনে করেন ইসলাম ধর্মপ্রাণ মানুষেরা।
তবে, মিয়া খলিফা একজন অমুসলিম এবং তিনি বলেছেন, দৃশ্যের সময় হিজাব পরিধান করা শুধুমাত্র ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে ছিল। যাইহোক, দৃশ্যটি সমালোচনার ঝড় তুলেছিলো, যার ফলে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
মিয়া খলিফার জীবনী এবং সম্পর্ক :
মিয়া খলিফার ব্যক্তিগত জীবনী সবসময়ই তার ভক্ত এবং সমালোচকদের জন্য কৌতূহলের বিষয় ছিল। মিয়া তার ব্যক্তিগত জীবনে গোপনীয়তা বজায় রাখতে পছন্দ করে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি তার বিবাহ সম্পর্কে খোলামেলা এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে তার ব্যক্তিগত জীবনের ঝলক শেয়ার করছেন। সম্প্রতি তিনি বিয়ে করে সংসার শুরু করার প্রস্তুতিও নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মিয়া খলিফা ২০১১ সালে তার হাইস্কুল জীবনের বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করেছিলেন কিন্তু ২০১৬ সালে তাদের ডিভোর্স হয়। এরপর ২০১৯ সালে মিয়া সুইডিশ শেফ রবার্ট স্যান্ডবার্গের সাথে আংটি বদল করেন। তারপর ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে তারা পরিকল্পনাটি পরিবর্তন করেন এবং রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড অনুসারে বাগদানের কয়েক মাস পর ঘরোয়াভাবে স্যান্ডবার্গকে বিয়ে করেছিলেন। স্যান্ডবার্গও তার অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একই খবর ঘোষণা করেছিলেন। বিয়ের দুই বছর পর তিনি ও তার স্বামী তাদের বিচ্ছেদ নিশ্চিত করেছেন। বর্তমানে তিনি অবিবাহিত আছেন, এবং তার সোশ্যাল মিডিয়া অনুসারে তিনি এখন অন্য কারো সাথে ডেট করছেন, তবে তার নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
মিয়া খলিফার খেলা :
মিয়া ছোট থেকেই খেলাধুলার প্রতি বেশ আগ্রহী। তিনি স্কুল জীবনে ল্যাক্রোস খেলতেন, এটি আমেরিকানদের একটি জনপ্রিয় খেলা। নীল ছবিতে কাজ ছেড়ে দেয়ার পর তিনি মূলধারার মিডিয়াতে কাজ করার পাশাপাশি স্পোর্টস প্রেজেন্টার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করছেন।
মিয়া খলিফার পছন্দের খেলা ফুটবল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের জনপ্রিয় দল ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের বিশাল ভক্ত তিনি। প্রায়ই মাঠে চলে যান লাইভ ম্যাচ দেখতে। সমসাময়িক ফুটবলারদের নিয়ে প্রিমিয়ার লীগের সেরা একাদশও বাছাই করেছিলেন তিনি। যেখানে জায়গা পেয়েছিলেন মোহাম্মদ সালাহ ও হ্যারি কেইন দের মত খেলোয়াড়রা।
আরো পড়ুনঃ বারাসাত কলেজে ভর্তি হচ্ছেন সানি লিওন ও মিয়া খলিফা! নাম এসেছে মেধাতালিকায়
মিয়া খলিফার রহস্যময় চশমা :
মিয়া খলিফাকে বলা হয় চশমিশ সেক্সি। তার এই চশমাতেই যেন লুকিয়ে আছে তার আবেদনময়তা ও কিশোরী সুলভ সরল চেহারার সকল রহস্য। চশমা ছাড়া মিয়া খলিফা একদম বেমানান। তাই তার চশমাকে বলা হয় রহস্যময় চশমা।
২০২০ সালের ৪ আগস্ট লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিধ্বংসী এক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নিজ দেশের পাশে দাঁড়াতে অর্থসংগ্রহের মিশনে নেমেছিলেন তিনি। সেজন্য পর্ন ভিডিওতে ব্যবহার করা তার বিখ্যাত ও রহস্যময় চশমাটি নিলামে তুলেছেন তিনি। চশমাটি বিক্রি করে যে অর্থ পেয়েছিলেন তা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত লেবাননের রেড ক্রসের ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন।
আরো পড়ুনঃ এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কী জিনিস এবং বৈরুত বিস্ফোরণের কারণ কি?
পর্ন জগত ছাড়ার পরের জীবন : মানবিক ও সক্রিয় কাজ
২০১৫ সালে মিয়া খলিফা পর্ন জগতকে পিছনে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব বুঝতে পারেন এবং তিনি অন্য কাজে মনোনিবেশ করেন। তারপর থেকে তিনি মূলধারার মিডিয়া, ক্রীড়া ভাষ্য এবং জনহিতৈষী মূলক কাজ করছেন।
পর্ন জগতের ক্যারিয়ারের বাইরে মিয়া খলিফা নিজেকে মানবিক এবং সক্রিয় কাজে নিবেদিত করেছেন। তিনি তার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নারীর অধিকার, নারীদের ক্ষমতায়ন এবং নারীদের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা দূরীকরণের জন্য কাজ করেছেন। মিয়া খলিফার সংবেদনশীল বিষয়ে কথা বলার ইচ্ছা তাকে নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং সামাজিক নিয়মগুলো প্রচারে একটি সক্রিয় কণ্ঠস্বরে পরিণত করেছে।
মিয়া খলিফার মোট সম্পদ :
আমেরিকান লেখক এবং টেলিভিশন প্রযোজক মেগান অ্যাবটের সাথে একটি সাক্ষাৎকারের সময়, মিয়া খলিফা তার উপার্জন সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, পর্ন ছবিতে অভিনয় করে কত পারিশমিক পেতেন। তিনি দাবি করেন নীল ছবির অভিনেত্রী হিসাবে তিনি মাত্র ১২ হাজার ডলার পেয়েছিলেন। ২০২১ সালে মিয়া খলিফার মোট সম্পদ ৪ মিলিয়ন ডলার বলে তিনি দাবি করেন।
মিয়া খলিফার মৃত্যুর গুজব ও ভুল ধারণা :
মিয়া খলিফাকে ঘিরে বেশ কিছু ভুল ধারণা এবং গুজব রয়েছে যা বেশ কয়েক বছর ধরে প্রচারিত হয়েছে। মিয়া খলিফার জীবন ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য এই ভুল ধারণাগুলির কিছু স্পষ্ট করা দরকার।
অনেক মানুষ বিশ্বাস করে মিয়া খলিফাকে পর্ন জগতে প্রবেশ করতে বাধ্য করা হয়েছে, তবে এটি ভুল ধারণা বা গুজব। এই জগতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত ছিল তার আর্থিক স্বাধীনতা এবং কৌতূহল সহ বিভিন্ন কারণের একটি ব্যক্তিগত পছন্দ।
কয়েক মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গুঞ্জন ওঠে মিয়া খলিফা মৃত্যুবরণ করেছেন। ভক্তদের সঙ্গে মাইক্রো ব্লগিং সাইটে চ্যাট করার সময় মিয়ার চোখে পড়ে সেই ট্যুইট: “শকিং মিয়া খালিফা আত্মঘাতী হয়েছেন – RIP #miakhalifa!” এরপরই পাল্টা ট্যুইট করেন মিয়া। মজা করেই তিনি লেখেন, ‘দয়া করে এটা ভেবো না, যে কোন বন্ধুরা শোকবার্তা পাঠাচ্ছে না, তার কোনও ট্র্যাক রাখছি না’!
উত্তরাধিকার এবং প্রভাব :
পর্ন ফিল্ম জগতে মিয়া খলিফার প্রভাবশালী অবস্থান একটি দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকার রেখে গেছে। তার খ্যাতি ও বিতর্কগুলি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সামাজিক বিচার, ধর্ম ও যৌনতার ছেদ-এর মতো বিষয়গুলিতে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পর্ন ফিল্ম জগতে তার কর্মজীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও এই জগতে মিয়া খলিফার প্রভাব অস্বীকার করা যায় না।
মিয়া খলিফা একটি রক্ষণশীল পরিবারে লালিত-পালিত হয়ে পর্ন জগতে তার বিতর্কিত কর্মজীবনের যাত্রা বিশ্বকে বিমোহিত করেছে। তিনি এই জগতে কাজ করে যেমন জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেছেন, তেমনি এই জগতের কিছু কাজের জন্য তিনি একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষদের ধর্মীয় অনুভুতিতে প্রচন্ড আঘাত হেনেছেন। সেই সাথে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন তার দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে।
তবে এই সকল কিছুকে পাশ কাটিয়ে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন তার ব্যাক্তি স্বাধীনতা, শারীরিক চাহিদার স্বাধীনতা ও কৌতুহলী মনোবাসনাকে। সবশেষে তিনি পর্ন জগতের বাহিরে এসে তার অর্জিত বিতর্কিত খ্যাতি ব্যবহার করছেন মানবিক ও নারী অধিকারমূলক বিভিন্ন কাজে।
CBNA24 অনলাইন ডেস্ক প্রতিবেদন (FH/BD)
আমাদের ফেসবুক পেজ ভিজিট করতে ক্লিক করুন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে ক্লিক করুন