বিশ্ব

এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কী জিনিস এবং বৈরুত বিস্ফোরণের কারণ কি?

এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট
বৈরুতে যে গুদাম বা ওয়্যারহাউসে বিস্ফোরণটি ঘটেছিলো। ছবিঃ ইন্টারনেট

এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কী জিনিস?

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে মঙ্গলবারের বিস্ফোরণের ভিডিও দেখে অনেকেই বলেছেন তারা জীবনে কখনো এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ দেখেননি।

বিস্ফোরণটি ঘটেছিল একটি গুদাম বা ওয়্যারহাউসে – যাতে বিপুল পরিমাণে একটি বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ মজুত করে রাখা ছিল, যারা নাম এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট।

আরোও পড়ুনঃ এমিল নাইট্রেট বা অ্যামিল নাইট্রাইট কি? এর ব্যবহার

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে প্রথম একটি বিস্ফোরণ ঘটেছিল যা থেকে সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলি আকাশে উঠছিল। লোকজন বৈরুতের নানা জায়গা থেকে সেই বিস্ফোরণের ভিডিও করছিল তাদের মোবাইল ফোনে।

আর ঠিক তখনই তাদের চোখের সামনে ঘটে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি যাতে প্রথম সৃষ্টি হয় একটি বিশাল আগুনের গোলা, তার পর বাতাসের ঝাপটায় তৈরি হয় ব্যাঙের ছাতার মতো আকারের পানি ও বাষ্পের সাদা মেঘ – কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই তা মিলিয়ে যায়, তার পরই দেখা যায় পাক খেয়ে উঠছে লাল রঙের ধোঁয়ার কুণ্ডলি।

পুরো ব্যাপারটা ঘটে মাত্র চার সেকেণ্ডের মধ্যে।

সেই লাল ধোঁয়া থেকেই বোঝা যায় যে সেখানে এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের বিস্ফোরণ ঘটেছে।

 

এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কী?

এটা এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা প্রধানত: সার উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয় – তবে আরো বহু শিল্প কারখানায় এটা কাজে লাগে।

আরোও পড়ুনঃ এমিল নাইট্রেট বা অ্যামিল নাইট্রাইট কি? এর ব্যবহার

খনিতে যে বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয় তারও অন্যতম একটি উপাদান এটি।

কিন্তু এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিজে কোন বিস্ফোরক পদার্থ নয়, তবে বিশেষ কিছু অবস্থায় তা বিস্ফেরকে পরিণত হতে পারে – বলছেন সাবেক ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফিলিপ ইনগ্রাম।

একে বরং বলা যায় ‍“অক্সিডাইজার” – অর্থাৎ যা আগুনে আরো অক্সিজেন টেনে আনে এবং আগুন আরো বেশি জ্বলে ওঠে।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএর শিক্ষক গ্যাবিয়েল ডা সিলভা ব্রিটিশ দৈনিক দি গার্ডিয়ানকে বলেন, এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটে আগুন ধরানো বা একটা বিস্ফোরণ ঘটার মতো অবস্থায় নিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন।

তবে ডা সিলভা বলছিলেন, তার ধারণা কোনভাবে এই এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট দূষিত হয়ে গেছে – হয়তো তেল বা অন্য কিছুর সংস্পর্শে এসে, এবং সেটাই এই বিস্ফোরণের কারণ।

আগুনের সংস্পর্শে এলে এটি অত্যন্ত সক্রিয় বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করে। আর বিস্ফোরিত হলে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং অ্যামোনিয়ার মত বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়।

এ কারণে এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ করে রাথার জন্য কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয় – বিশেষ করে মজুদ করার জায়গাকে এমনভাবে নিরাপদ করতে হয় যেন আগুন না লাগে।

এছাড়া লক্ষ্য রাখতে হয় যেন কোনো নালা বা ড্রেইনে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জমা হয়ে বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি না করতে পারে।

এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট
বিস্ফোরণের পর লাল রঙের ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখে বোঝা যায় এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে বিস্ফোরণ ঘটে

অনিরাপদ অবস্থায় ৬ বছর ধরে পড়ে ছিল এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট

সংবাদদাতারা বলছেন ওয়্যারহাউসটিতে ২৭০০ টন এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছিল, এবং তা ছয় বছর ধরে অনিরাপদ অবস্থায় সেখানে পড়ে ছিল।

ধারণা করা হচ্ছে ২০১৩ সালে একটি জাহাজে করে এই এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বৈরুত বন্দরে এসেছিল।

কিন্তু কিভাবে তাতে আগুন লাগলো তা এখনো স্পষ্ট নয়।

গ্যাব্রিয়েল ডা সিলভা বলছিলেন, এ বিস্ফোরণের ফলে বাতাসে যে রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছে তা অপসারিত হতে বেশি সময় লাগবে না কিন্তু যদি তা বৃষ্টির পানিতে এসিডের কণা সৃষ্টি করার মতো কিছু ঘটায় – তাহলে তা পরবর্তীকালে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

 

এমন বিস্ফোরণ আগেও ঘটেছে

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস সিটিতে ১৯৪৭ সালের ১৬ই এপ্রিল এক এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণ ঘটেছিল যাতে ৫০০ জন নিহত হয়, আহত হয় ৪ হাজার লোক।

টেক্সাস সিটি বন্দরে একটি জাহাজ থেকে ২,৩০০ টন এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট খালাস করার সময় ওই বিস্ফোরণ ঘটে।

তাতে পুরো ডক এলাকা ধ্বংস হয়, আশপাশে থাকা অন্য কয়েকটি জাহাজে কয়েকদিন ধরে আগুন জ্বলতে থাকে, এমনকি আকাশে উড়ন্ত দুটি ছোট বিমানও ধ্বংস হয়।

ওই বিস্ফোরণের ঝাপটায় সাগরে ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছাস হয়েছিল।

সংবাদটি শেয়ার করুন