নিজের দিকে এক বার তাকিয়ে দেখো ;
এক বার আকাশের দিকে …
তার পর দেখো অন্যেকে ;
তা হলে দেখবে তোমার পৃথিবীটা কত সুন্দর ;
কত আপন …
কেন জানি না মানুষ আজকাল নিজের দিকে তাকাতে
কেমন যেন ভয় পায় ;
কেমন যেন গুটিয়ে নিচ্ছে …
গুটিয়ে নিচ্ছে লাটায়ের সুতো ;
অথচ, তার মধ্যেও ভোঁ-কাট্টা হয়ে যাচ্ছে
সময়ের রঙিন ঘুড়ি;
প্রায় সকলের হৃদয়ের দরজা, জানালা
বন্ধ হয়ে গেছে;
বাইরে বসে কে যেন বজায় দোতারা;
যদিও উঠান জুড়ে মাটির সুর, মাটির ঘ্রাণ
খেলা করে বেড়ায়;
আর সেখানেই নেচে ওঠে শিশু এক মন;
গান্ধারী জানতো শত পুত্র শেষ হয়ে যাবে
পিতার হাড়ের তৈরি পাষাতে;
এক দিকে পিতা, আরেক দিকে পুত্র;
এ এক ধর্ম যুদ্ধ, এ এক ভবিতব্য …
আর ভাই শকুনি সময়ের সাক্ষী;
এতো যন্ত্রণা কি ভাবে বুকের মধ্যে জমিয়ে
রেখেছে আজও!
এক সময় ফিরে আসতে চায়,
মুখ ফিরিয়ে নেওয়া প্রেমিকা;
শুরু করতে চায় নতুন আরেক অধ্যায়;
সেখানে কোনও থাকবে না ফেলে আসা
দিনের বর্ণ পরিচয়;
কেবল মাত্র কাটাকুটি অঙ্ক সকল;
যারা নিজেকে নিজেকে বারবার আয়নার সামনে
দাঁড় করায়, বার বার দেখে,
তারা কি নিজেকে দেখতে পায়!
নাকি নিজেরই প্রতিবিম্ব দেখে;
দেখে আয়নার দাগ গুলো।
গ্রীষ্মের উত্তাপে আবাদি জমির বুক
ফুটিফাটায় ভরে গেলে,
ফাটলে ফাটলে জন্ম নেয় ঘাম;
সেখানে জন্ম নেয় গরল .…
ঠিক যে ভাবে জন্ম নেয় সভ্য সমাজে
অসভ্য মানুষ গুলো;
আকাশে কোথাও কালো কালো মেঘ নেই;
নেই বৃষ্টির ভেলা;
যেখান থেকে পাড়ি দেওয়া যায় লৌকিক রূপকথায়;
সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে একটা চাপা গুঞ্জন
ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে বাতাসে;
যারা বাতাসে কান পাততে জানে
তারাই কেবল মাত্র শুনতে পায়
মিছিলের পদধ্বনি;
এ দিকে এখনও কোনও চাতক পাখি উড়ে আসেনি;
আসেনি রাগ মেঘ মল্লার …
অথচ , রোদে পুড়ে যাওয়া সবুজ পাতা গুলো
নীরবে উত্তপ্ত বাতাসে প্রহর গুনছে;
এই বুঝি এসে যাবে গান্ধার কন্যা;
এখনও কুরুক্ষেত্র প্রান্তর শুনিয়ে চলেছে
চিতাকাঠের ধোঁয়ার গল্প;
মৃত প্রায় মানুষ গুলোকে পর পর শুয়িয়ে দিলে
বেরিয়ে আসবে সভ্যতার কঙ্কাল,
সময়ের স্তব্ধ হৃৎপিণ্ডটা;
সেখানে যদিও কেউ থাকবে না বসে;
কেউ শোনাবে না মাটির গান;
চারিদিকে কেবল শোনা যাবে শকুনের ডানার শব্দ;
ভেঙে পড়া ভাস্কর্যের টুকরো টুকরো ইতিহাস;
সদ্যজাত প্রেমিকার চোখে চোখ রাখলে
গলে গলে পড়ে মেরুপ্রদেশেরও বরফ;
শুরু হয় উষ্ণায়ন .…
তবুও, রাজপথের মিছিল লম্বা হয়;
ঘরেতে ভিক্ষার পাত্রও চকচক করে ;
নৈঃশব্দে কোথায় যেন হারিয়ে যায় শুভবুদ্ধির
মানুষ গুলো ;
কোথায় যেন হারিয়ে গেল বাড়ির সদ্য যুবতী মেয়েটা ;
কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘোরা ছেলেটাও ;
প্রেমিকারও ওড়না হারিয়ে গেছে অনেক দিন
অন্ধকার নির্জন বাগান-বাড়িতে ;
পড়ে থাকে কেবল অসহায় চাপা কন্ঠ স্বর ;
দু একটা ভোঁ-কাট্টা ঘুড়ি আকাশের বুকে
ভেসে বেড়ায় , বেশ কিছুটা লাটায়ের সুতো নিয়ে ;
হৃদয়ের বাইরে বসার যে দোতারা বাজাচ্ছিল
সে নাকি কোনও রকমে শ্বাস নেয়
নড়বড়ে সংসারটা কে টিকিয়ে রাখার জন্য;
দিন দিন সৎ ও সাহস হারিয়ে গেলে
শব্দ গুলো লজ্জাবতী হয়;
একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে যায় লতা গুল্মের মতো;
বলিষ্ঠ কণ্ঠে সে যেন এক কোকিলের কুহু তান;
অথচ, কোথাও কোনও চাতক পাখির ডাক
শুনতে পাওয়া যাচ্ছে না এখনও;
মিছিলের পায়ে অস্পষ্ট এক শিকল বাঁধা;
সকলেই শিকল টেনে টেনে চলেছে সামনে
গভীর এক খাদের দিকে;
সে খাদ জুড়ে ধোঁয়াশার চাদর মোড়া;
কাছ থেকেও বোঝার কোনও উপায় নেই;
আকাশের বুকে জুড়ে উড়ে চলেছে
সাদা সাদা বক , সাদা সাদা ছোট ছোট মেঘ,
আর অজস্র রূপকথার প্রতিচ্ছবি;
এক বার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখো;
নিজের দিকে এক বার তাকিয়ে দেখো;
তা হলে দেখতে পাবে তোমারই ভিতরে
কোথাও না কোথাও ভিতরের ভালো মানুষটা এখনও বেঁচে আছে;
মস্তিষ্কে জেগে আছে সুন্দর এক পৃথিবী।