বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাস (COVID-19) |||| বিদ্যুৎ ভৌমিক
বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে । কো।ভিড-১৯ এর বিশ্বজোড়ে মহামারীর মধ্যে অনেক দেশই লকডাউন শিথিল করেছে। কেউ কেউ পুরোপুরি করোনা মুক্ত বলেও দাবি করেছে। কিন্তু এমন দাবি খুব বেশি ফলপ্রসূ হওয়ার আশা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন ভাইরাসটি আবার ফিরে আসতে পারে। হতে পারে দ্বিতীয় পর্যায়ের মহামারী। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিল করাতে করোনা ফিরে আসতে দেখা গেছে। সঙ্গত কারণে বিশ্লেষকরা মনে করছেন কার্যকর টিকা আবিষ্কারের আগে করোনা থেকে নিরাপদ নয় গোটা বিশ্ব। বিধি নিষেধ তুলে নিলে সংক্রমণের হার বাড়তেই থাকবে। তবে এজন্য বিকল্প কিছু পন্থা ভেবে রাখতে হবে। যা সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে। কার্যকর এবং সবার হাতে পৌঁছানোর মতো টিকা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা সবাই ঝুঁকিতেই থাকব। তবে ভাইরাসটির দ্বিতীয় পর্যায়ের এই সংক্রমণ নিয়ে সারাবিশ্ব এখন শঙ্কিত। অতীতে যেসব মহামারী দেখা গেছে সেখানেও দ্বিতীয় পর্যায়ের এই সংক্রমণ দেখা গেছে। চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় সেকেন্ড ওয়েভ বলতে মহামারী একবার কমে যাওয়ার পর আবার নতুন করে ছড়ানোকে বোঝায়। একই বিষয়ে হুঁশিয়ার করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তারা বলছে ভাইরাসটি কখনও নির্মূল হবে না । হয়তো সাধারণ ফ্লুর মতো এটি আমাদের মাঝে ফিরে আসবে । এটিকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে । সেক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ের যে ধাক্কা অর্থাৎ মহামারী সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভাইরাসটি মোকাবেলা করতে হবে । তবে অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থার সঙ্গে ভাইরাসটির জন্য একটি কার্যকর প্রতিষেধক আবিষ্কারের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।
বৈশ্বিক মহামারী কোভিড ১৯ এ আক্রান্তের দিক থেকে প্রথম ২০ টি দেশের তালিকা এখানে দেওয়া হল । বৈশ্বিক মহামারী কোভিড ১৯ এ বিশ্বের মোট মৃত্যুর ৯০% মৃত্যু নিম্নের দেশগুলোতে হয়েছে । যদিও বাংলাদেশ, সৌদি আরব ও কাতার আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে হলেও মৃত্যর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম । বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু কোনোভাবেই যেন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না । দিন দিন বেড়েই চলেছে । এক দেশে কমছে তো বাড়ছে অন্য দেশে । ইউরোপের পর দক্ষিন আমেরিকা এখন করোনাভারাসের Epicenter হয়ে দাড়িয়েছে ।
গত ১১ জানুয়ারি করোনার সংক্রমণে প্রথম মৃত্যু দেখেছিল বিশ্ব । গত ২৪ ঘণ্টায় গোটা পৃথিবীতে নতুন রোগী পাওয়া গেছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৬৮ জন । ২৭ জুন সন্ধা ৭ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১০০ লক্ষ বা ১ কোটি ছাড়িয়েছে এবং বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ লক্ষ ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি সুখবর হল এই যে, বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫৪ লাখের অধিক মানুষ। অক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে এখনও শীর্ষ দেশের তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র । ২৭ জুন সন্ধা ৭ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ক্যানাডার নিকটতম প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৫ লক্ষ ৯৩ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে এবং এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে সুস্থ হয়েছেন ১০ লক্ষ ৭৮ হাজারের অধিক মানুষ। আক্রান্তের দিক থেকে বর্তমানে ২য় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল । ব্রাজিলে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৩ লক্ষ ১৩ হাজার ৬৬৭ জন, ব্রাজিলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৭ হাজার ৭০ জন এবং এবং ব্রাজিলে সুস্থ হয়েছেন ৭ লক্ষ ১৫ হাজারের অধিক মানুষ । এরপরের ৩য় অবস্থানে রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে দাড়িয়েছে ৬ লক্ষ ২৭ হাজার ৬৪৬ জন, রাশিয়ায় মৃতের সংথ্যা ৮ হাজার ৯৬৯ জন এবং রাশিয়ায় এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩ লক্ষ ৯৩ হাজারের অধিক মানুষ । ৪র্থ স্থানে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে দাড়িয়েছে ৫ লক্ষ ২৯ হাজার ৫৭৭ জন, ভারতে মৃতের সংথ্যা ১৬ হাজার ১০৩ জন এবং ভারতে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩ লক্ষ ১০ হাজারের অধিক মানুষ । ৫ম স্থানে বৃটেন বা যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৩ লক্ষ ১০ হাজার ২৫০ জন এবং যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৩ হাজার ৫১৪ জন । ৬ষ্ঠ স্থানে পেরুতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯৮৯ জন, পেরুতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৯ হাজার ১৩৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ লক্ষ ৬৪ হাজারের অধিক মানুষ। ৭ম স্থানে চিলিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭৬৬ জন, চিলিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫ হাজার ৩৪৭ জন এবং এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২ লক্ষ ২৮ হাজারের অধিক মানুষ । ৮ম স্থানে স্পেনে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ২ লক্ষ ৪৮ হাজারের অধিক মানুষ, স্পেনে মারা গেছেন এ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৩৪১ জন এবং এ পর্যন্ত স্পেনে সুস্থ হয়েছেন ১ লক্ষ ৫০ হাজারের অধিক মানুষ। । ৯ম স্থানে ইতালিতে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ২ লক্ষ ৪০ হাজার ১৩৬ জন, ইতালিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৪ হাজার ৭১৬ জন এবং এ পর্যন্ত ইতালিতে সুস্থ হয়েছেন ১ লক্ষ ৮৮ হাজারের অধিক মানুষ। ১০ম স্থানে ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ২০ হাজার ১৮০ জন, ইরানে মৃতের সংখ্যা এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৩৬৪ জন এবং ইরানে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লক্ষ ৮০ হাজারের অধিক মানুষ । একাদশ স্থানে মেক্সিকোতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ লক্ষ ৮ হাজার ৩৯২ জন , মেক্সিকোতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৫ হাজার ৭৭৯ জন এবং মেক্সিকোতে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লক্ষ ৫২ হাজারের অধিক মানুষ । দ্বাদশ স্থানে জার্মানিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লক্ষ ৯৪ হাজার ৬৮৩ জন, জার্মানিতে মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ৩১ জন এবং জার্মানিতে সুস্থ হয়েছেন ১লক্ষ ৭৮ হাজারের অধিক মানুষ । এয়োদশ স্থানে তুরষ্কে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৮৮৩ জন , তুরষ্কে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫ হাজার ৮২ জন এবং এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লক্ষ ৬৯ হাজারের অধিক মানুষ । চতুর্দশ স্হান পাকিস্তানে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লক্ষ ৯৮ হাজার ৮৮৩ জন , এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ হাজার ৩৫ জন এবং পাকিস্তানে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮৬ হাজারের অধিক মানুষ । ১৫তম স্থানে সৌদি আরবে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫০৪ জন , সৌদি আরবে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৫০১ জন এবং এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লক্ষ ২২ হাজারের অধিক । আক্রান্তের দিক থেকে ১৬তম ফ্রান্সে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৯৩৬ জন, এ পর্যন্ত ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে এবং ফ্রান্সে সুস্থ হয়েছেন ৭৫ হাজারের অধিক মানুষ । ১৭ তম স্থানে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড -১৯-এ আক্রান্তের দেশ বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৯৭৮ জন, বাংলাদেশে এ এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৬৯৫ জন এবং বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫৪ হাজারের অধিক মানুষ। ১৮তম স্হান সাউথ আফ্রিকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৩১ হাজারেরও অধিক, সাউথ আফ্রিকায় মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৪১৩ জন এবং এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৬৭ হাজারের অধিক মানুষ । ১৯তম স্থানে ক্যানাডায় এ পর্যন্ত আক্রানত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ১ লক্ষ হাজার ৩ হাজার ছাড়িয়েছে, ক্যানাডায় এ পর্যন্ত মৃতের সংথ্যা মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ৫১৬ জন এবং এ পর্যন্ত ক্যানাডায় সুস্থ হয়েছেন ৬৫ হাজারের অধিক মানুষ । ক্যানাডার ক্যুইবেক প্রদেশেই আক্রান্ত হয়েছে ৫৫ হাজার ৭৯ জন যা ক্যানাডার অর্ধেক থেকেও বেশী এবং ক্যুইবেকে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫ হাজার ৪৪৮ জন যা ক্যানাডার ৬০% অধিক । ক্যানাডার মধ্যে ক্যুইবেক প্রদেশ ও মন্ট্রিয়ল হয়ে গেছে Epicenter of COVD-19 Pandemic. অন্টারিও প্রদেশে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৩৪ হাজার ৪৭৬ জন এবং অন্টারিও প্রদেশে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৭০১ জন । ২০তম স্থানে কাতারে আক্রান্ত হয়েছে ৯৩ হাজার ৭৩০জন, কাতারে এ পর্যন্ত মারা গেছে ১১২ জন
আগামীকাল এ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেড়েও যেতে পারে । যদি Miraculously আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আর না বারতো, কত না খুশী হতাম । ।প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কবলে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বানিজ্য, চাকুরী, অর্থনীতি, পর্যটন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা-সবকিছুতেই একধরনের ভয়াবহ সুনামী বা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে । অনেক দেশই জীবিকার তাগিদে Lock down তূলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু শুরু করেছে । তবে সতর্কতার সহিত কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই Factory, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ অবশ্যই সহজ হবে। এতএব করোনাভাইরাস প্রতিরোধে Vaccine বের হওয়ার আগে ও এর কার্যকরী ঔষধ বের হওয়ার আগে সতর্কতার সহিত কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলতে হবে । আসুন আমরা বৈশ্বিক মহামারীর এহেন উৎকন্ঠিত ও বিপর্যস্ত পরিসহিতিতে নিজে বেঁচে থাকি এবং অপরকেও বাঁচতে দেই। কোনভাবেই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার বা জনসচেতনতার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অতএব আসুন আমরা বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দয়াকরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে চলি ও নিজ নিজ সরকারের ও স্বাস্থ্যদফতরের নিয়ম বা Guidelines মেনে চলি ।
সূত্র: Worldometer data ও করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম
বিদ্যুৎ ভৌমিক, কলামিষ্ট, লেখক ও সিবিএনএ’এর উপদেষ্টা । মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা । ২৭ জুন ২০২০
সিএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন