জয়িতা চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতাগুচ্ছ
মাঝরাত:
অনন্ত হৃদয় উজার করে
ছুটে যাচ্ছে পথ মাঝরাতে
কথার গভীরে কত সম্মোহন লুকিয়ে আছে
কতদিন জমেনি কথা হৃদয় গহ্বরে
দুটো হাত খালি শূন্যতায় ভরে
অবজ্ঞার কাছে রেখে যাই রাতের পতন
সে এসেছিল জলের উৎসের মতন
অন্ধকারে অঝোরে ঝরে কোমল বর্ষা
শুষে যায় রক্ত জল ভেজানো দরজা
হাহাকার সেদিনই থেমে গেল দ্রুত
মাঝরাত আমার মতোই কান্না ভেজা শুত।।
পারাপার:
অন্ধকার হলেই তোমার মিষ্টি বুনো গন্ধ আমার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে, ছায়া ছায়া নিঃশব্দ লোক
মাথায় আকাশ নিয়ে ফেরে ঘরে
তোমার উপগ্রহ সংকেত পাঠায়
আমার সাহস দিগন্তপার
বালি শুধু বালি সরিয়ে খুঁজছি দিগন্ত পারাপার।।
অভাবী সংসার:
তোমার অভাবে জেগে ওঠে পাঁজরে প্রবিষ্ট প্রেম
জেগে ওঠে তোমার পরাজিত মুখ
সংসারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তুমি
প্রত্যাখ্যানের কষ্ট আমার শিরায় শিরায় জেগে ওঠে
ভাবি মিথ্যে হোক সমস্ত অভাবী কষ্ট
বুকের কার্নিশে এসে বসো আমার প্রিয়তম
সেই কবে থেকে বুনছি তোমায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শুভ্র বীজে, নদীর পাড় ঢাকা পড়ে গভীর সবুজে
সময় খেয়ে নিচ্ছে আমাদের কুড়ে কুড়ে
বীজের অঙ্কুরে জমে উঠছে অমাক্রোধ
দাবাগ্নিতে পুড়ে যাচ্ছে ভালোবাসা জনিত প্রবোধ
সত্যবান পেয়ে ছিল প্রাণ যে ভাবে জীবকোষে
সে ভাবে পাথর প্রপাতে তোমার অতনু জুড়ে হবে প্রাণের সঞ্চার, আমি দুহাতে প্রেম নিয়ে আরও আরও পুরাতন হয়ে যাব,ক্ষমা করো ভালোবাসা আমার প্রিয় অপরাধগুলি, যদি কভু ঘুম ভাঙে পরবাসে, যদি আচ্ছন্ন স্বপ্নের ঘোরে উচ্চারণ করো এই প্রিয় নাম, রুদ্ধশ্বাসে ছুটে চলে যাব, ছুঁয়ে দেব তোমার সকল অভিমান।।
মনে নেই:
জল শাসনের ফলে মর্মর আমার ভেতরের নদী, আমি বাঁচতে চেয়েছি বারবার
কিন্তু আমার শরীর এক জায়গায়
আর আত্মা অন্যত্র, আমার সীমান্ত কাঁটাতার
পেরিয়ে সেখানে যেখানে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না, আজ ও আমার রক্তের ভেতর ঘুরে আগুন তুলে কেউ নাচে, যেদিন মৃত্যুর দোরগোড়ার থেকে ফিরে এলাম, জানলাম বিশ্বাস নেশার চেয়েও মারাত্মক
অবিশ্বাসের সেই রাত ফিরে আসে
গাড়ির ঝাঁকুনিতে বারবার, ফুসফুস মন্থন করা কার প্রার্থনা আমায় বাঁচিয়ে ছিল আজ আর মনে নেই।।