ফিচার্ড বিশ্ব

অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাবাসন: ইইউকে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাবাসন: ইইউকে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে আশ্রয় পাওয়ার অযোগ্য বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ঢাকার কর্তৃপক্ষ গত তিন বছরে ইতিবাচক সহযোগিতা করেছে। ইইউর দুই কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। খবর রয়টার্সের।

ইইউর অভিবাসনমন্ত্রীরা তাদের আওতাধীন অঞ্চলে আশ্রয় পাওয়ার অযোগ্য লোকজনকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ভিসাসংক্রান্ত কড়াকড়ি আরোপ এবং অধিকতর সমন্বয়ের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে অংশ নেন। যেসব দেশ নিজেদের লোকজনকে ফেরত নেয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করবে না, তাদের ওপর বাড়তি ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের লক্ষ্যে তিন বছর আগে ২৭টি দেশের জোট ইইউর নেতারা একমত হয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত শুধু গাম্বিয়ার বিরুদ্ধে ইইউ এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ইরাক, সেনেগাল ও বাংলাদেশের ওপরও ইইউর নির্বাহী সংস্থা হিসেবে পরিচিত ইউরোপীয় কমিশন এমন পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব করেছিল। তবে এ ব্যাপারে ইইউর সঙ্গে সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখিয়ে বাংলাদেশ এমন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ এড়াতে পেরেছে।

ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইইউ ২০২১ সালে ২১ শতাংশ আশ্রয়প্রার্থীকে ফেরত পাঠাতে পেরেছে। ইইউর একজন কর্মকর্তার মতে, এটা খুবই কম। সদস্যদেশগুলো এই সংখ্যাকে অগ্রহণযোগ্য মনে করে।

ইইউ অঞ্চলে অভিবাসন একটি অত্যন্ত রাজনৈতিক সংবেদনশীল বিষয়। জোটের সদস্যদেশগুলো অভিবাসনের অযোগ্য লোকজনকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতি চায়। পাশাপাশি তারা ইউরোপে ইতিমধ্যে চলে আসা লোকজনকে কীভাবে দেখভাল করা যায়, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে পুরোনো বিরোধপূর্ণ সমস্যাগুলো পুনরুজ্জীবিত করার চাইতে বরং অনিয়মিত অভিবাসন কমানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে চায়।

ইইউর অভিবাসনমন্ত্রীদের উদ্দেশে এক লিখিত বক্তব্যে ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ইইউতে একটি অভিন্ন ও কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে তা একটি বিশ্বাসযোগ্য ও ফলপ্রসূ আশ্রয়ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

জাতিসংঘের হিসাবে ২০২২ সালে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মানুষ যুদ্ধবিগ্রহ ও দারিদ্র্য থেকে বাঁচার জন্য ইউরোপে পাড়ি দিতে ভূমধ্যসাগরকে মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করে। এদিকে প্রায় ৮০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে।

ইইউর নেতারা দুই সপ্তাহ পরে ব্রাসেলসে অভিবাসন নিয়ে বৈঠকে বসবেন। সেখানেও আরও বেশি সংখ্যায় অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর দাবি তোলা হবে। তার আগেই দেশগুলোর অভিবাসনমন্ত্রীরা এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা সেরে নিচ্ছেন। তাদের যৌথ বিবৃতির খসড়ায় লেখা আছে, ‘অবৈধ অভিবাসীদের ইইউ থেকে নিজ নিজ দেশে কার্যকরভাবে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে অবিলম্বে ইইউর নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’

ইউরোপীয় কমিশন মনে করে, আশ্রয় পাওয়ার অযোগ্য কোনো ব্যক্তিকে নিজ দেশে কার্যকরভাবে ফেরত পাঠানো নিশ্চিত করার ব্যাপারে ইইউর দেশগুলোর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি ওই ব্যক্তির নিজ দেশের সহযোগিতার ঘাটতিও এ ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা হিসেবে কাজ করে। যেমন: তাদের নাম-ঠিকানাসংবলিত পরিচয়পত্র ও ভ্রমণ নথিপত্র পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো কোনো দেশ সহযোগিতা করতে চায় না।

তবে এমন দেশগুলোকে ভিসাসংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করে শাস্তি দেয়ার জন্য অভিবাসনমন্ত্রীদের পক্ষ থেকে চাপ দেয়া হলেও তাতে অনেক সময় ইইউর পররাষ্ট্র ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রীদের সাড়া মেলেনি কিংবা ইউউর একাধিক দেশের বিরোধপূর্ণ অন্যান্য বিষয়ের আড়ালে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। এখন গাম্বিয়া বাদে অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ভিসা কড়াকড়ি আরোপ করার বিষয়ে ইইউর দেশগুলো মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি। গাম্বিয়ার নাগরিকরা এখন আর ইইউর দেশগুলোতে একাধিকবার প্রবেশের অনুমতি (মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা) পান না।

অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরির মতো ইইউভুক্ত দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা মুসলিম অভিবাসীদের গ্রহণের বিষয়ে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে জার্মানি এখনো ইইউর বাইরে থেকে আসা অভিবাসীদের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে। সূত্রঃ দৈনিক বাংলা

 

সংবাদটি শেয়ার করুন