আমার নতুন জন্ম হয়েছে: ইউক্রেন পেরিয়ে আসা বাংলাদেশি
নানা ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে ইউক্রেন পেরিয়ে বাংলাদেশি ও ভারতীয়রা পোল্যান্ড সীমান্তে প্রবেশ করছেন। দেশটিতে অবস্থানরত ডয়চে ভেলের কাছে বেশ কয়েকজন সীমান্ত পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।
পোল্যান্ডে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী শহর শেমিসেলের রেল স্টেশনে তিল ধারণের জায়গা নেই। তীব্র ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে আসা অভিবাসীরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। ইউক্রেনীয়রাও ছাড়াও আছেন বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তাদের একজন আরিফ চৌধুরী। দুইদিন আগেই তিনি কিয়েভ থেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সেখানকার পরিস্থিতি বর্ণনা করেছিলেন।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ১৩জন বাংলাদেশিসহ তিনি পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে পৌঁছান। রেল স্টেশনে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে ১৩ জন প্রবেশ করেছেন। তাদের ছয়জন নারী, দুইজন শিশু। বাকিরা শিক্ষার্থী ছিল ওরা পার হতে পারেনি। ওদের জন্য আমি অপেক্ষা করছি।
নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ যাত্রা ছিল। আমার নতুন জন্ম হয়েছে। মৃত্যু যে কত কাছ থেকে দেখেছি, মৃত্যু যে কত প্রকার হতে পারে, সেটা এই পরিস্থিতিতে না গেলে বলে বোঝানো সম্ভব না। আমরা ঠিক এমন পরিস্থিতি দেখে আসছি। ঘুমিয়ে গেছি এর মধ্যেই বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি।… রাশিয়া বাড়ি ঘরে হামলা শুরু করেছে৷ বাসা বাড়িতে ঢুকে গুলি করছে। যার জন্যই সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি।
আরিফ জানান, পোল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাসের কাছ থেকে তারা সহায়তা পাচ্ছেন। ইউক্রেনে বাংলাদেশের কনস্যুলারও তাদেরকে সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। ইউক্রেন সীমান্তে নানা সংকট হলেও পোল্যান্ডে ঢুকতে তাদের কোন সমস্যা হয়নি।
দেশটি সীমান্ত অঞ্চল থেকে বিনা টিকেটে অভিবাসীদের গণপরিবহণে যাতায়াতের সুযোগ দিচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরাও নানাভাবে অভিবাসীদের সহায়তা দিচ্ছেন। এমনকি স্থানীয় অনেকে অভিবাসীদের তাদের থাকার জায়গাও দিচ্ছেন।
রেল স্টেশনটিতে অবস্থান করা আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, আমি কিয়েভে থাকতাম। কিয়েভের পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। আমরা জীবনের নিরাপত্তার জন্য দূতাবাসের জন্য যোগাযোগ করি। আমার পাসপোর্টসহ সব ডকুমেন্টসই আছে। তখন ওরা (পোল্যান্ড) আমাদের ১৫ দিনের ট্রাভেলিং ভিসা দিয়ে দিয়েছে।
এদিকে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা মানুষের ঢলের কারণে দেশটির বিভিন্ন সীমান্তে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। যার কারণে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার হেঁটে পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে হচ্ছে তাদেরকে। মেডিকা সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে আসা বাংলাদেশের মোশাররফ হোসেনও এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০০ অভিবাসীর সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় সীমান্ত অতিক্রম করেন।
আরেক বাংলাদেশি শেখ নাসের উদ্দিন বলেন, ইউক্রেনীয়দের আলাদা লাইনে ইমিগ্রেশনে নেয়া হয়। সেখানে ওদের ডকুমেন্টও পরীক্ষা করা হয় না। আমরা যারা বিদেশি আছি তাদেরকে আলাদাভাবে ডকুমেন্ট পরীক্ষা করা হয়। সীমান্তে খুবই ভোগান্তি। আমি ছয় দিন ছয় রাত থেকে… খাওয়া দাওয়া ঘুম নাই, ঠান্ডার মধ্যে থেকে এসেছি। এই ছয়দিন রাস্তাতেই ছিলাম লভব সীমান্তের অংশটুকুতে। উন্মুক্ত জায়গায় ছিলাম।
শুধু বাংলাদেশি নন এমন দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়েছেন মেডিকায় পৌঁছানো ভারতীয় শিক্ষার্থী শীতল। তিনি বলেন, সীমান্ত অতিক্রমে ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে। ভারি ব্যাগ নিয়ে আসাটা ছিল খুবই কষ্টকর। আমি হাঁটতেও পারছিলাম না ঠিকমতো।
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান