ইউক্রেন দখল!
দৃশ্যত ইউক্রেন দখল করে নিচ্ছে রাশিয়া! তাদের সেনাবাহিনী পৌঁছে গেছে রাজধানী কিয়েভে। সেখানে রাশিয়ার ট্যাংক টহল দিচ্ছে। চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, হোস্টোমেল বিমান ঘাঁটিও এখন রাশিয়ার হাতে। রাজধানী থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর চারনিহিভ ঘিরে রেখেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেন সরকার, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।
রাশিয়াকে থামানোর জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কাছে কাতর মিনতি জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। এতে ফুটে উঠেছে তার অসহায়ত্ব। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ অবশ্য ইউক্রেন দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, কেউই ইউক্রেন দখল করার পরিকল্পনা করছে না।
মস্কো শুধু সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে চায়। তাদেরকে অস্ত্রমুক্ত করতে চায়। তারা চায়, ইউক্রেনের সেনারা অস্ত্র সমর্পণ করুক। সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, মস্কো শুধু এই আলোচনার জন্য প্রস্তুত যে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে কিনা।
সেনারা অস্ত্র সমর্পণে রাজি হলে তারপর কি হবে তা বলেননি ল্যাভরভ। যুদ্ধক্ষেত্রে এসব আলামত কোনো ভালো লক্ষণ নয়। তার ওপর যে গতিতে কেজিবি’র সাবেক বস ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী অগ্রসর হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে তাদের সামনে কোনো বাধা কাজ করছে না। কিয়েভে পৌঁছে যাওয়ার পরও বিষয়টি স্পষ্ট নয় যে, তারা ইউক্রেনের সরকারকে উৎখাত করতে চায়, নাকি ইউক্রেন দখল করতে চায়। পুতিন বাহিনী যখন ঝড়োগতিতে অগ্রসর হচ্ছে, তখন পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েই ক্ষান্তি দিচ্ছে। দীর্ঘ সময় নিয়ে পুতিন এই আগ্রাসন চালিয়েছেন। বিষয়টি পশ্চিমারাই অনুধাবন করে বিশ্বের কাছে খোলাসা করেছে। বার বার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। বলেছে, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালালে রাশিয়াকে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে। আগ্রাসন চালালে এমন জবাব দেয়া হবে, বিশ্ব যা এ যাবৎ দেখেনি। কী তাদের সেই জবাব!
ইউক্রেন সরকার দেশমাতৃকাকে রক্ষার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি ছোট-বড় সবাইকে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ তার। ইউক্রেন যখন রাশিয়ার বারুদে জ্বলছে, তখন পশ্চিমারা নীরব। শুক্রবার তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা নিশ্চিত করেছেন। ন্যাটোর পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা সমর্থন আহ্বান করেছেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগেরদিন তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের ভেতরে কমপক্ষে ১৩৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩১৬ জন। তার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয়েছে বয়স কোনো ফ্যাক্টর নয়।
চাইলেই অস্ত্র দেয়া হবে। তা নিয়ে দেশ রক্ষায় লড়াই করতে হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের তথ্যমতে, এরইমধ্যে ইউক্রেনে কমপক্ষে ১২৭ জন বেসামরিক ব্যক্তি হতাহত হয়েছেন। এরমধ্যে নিহত হয়েছেন ২৫ জন। আহত হয়েছেন ১০২ জন। রাশিয়ার গোলা ও বিমান হামলায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বৃটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসের মতে, ৪৫০ জন সেনা সদস্যকে হারিয়েছে রাশিয়া। কৃষ্ণ সাগরে একটি দ্বীপে ১৩ জন সীমান্তরক্ষী রাশিয়ানদের কাছে আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানান। তারা সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করার পর তাদেরকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়েছে। রাজধানী কিয়েভের মধ্যাঞ্চলে বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। শহরের উত্তরাঞ্চলে ভারী লড়াই চলছিল।
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। রাশিয়া যাতে আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের সুইফট ব্যবস্থা ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ওদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দমিত্র কুলেবা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা দেয়া থেকে বিরত এমনটাই দৃশ্যমান বলে মনে করেন দমিত্র কুলেবা। তাই ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যদি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতারা ভয়াবহ কঠোরতম নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যান, তাহলে ইউরোপিয়ান ও মার্কিন রাজনীতিকদের হাতে রক্ত লেগে থাকবে।
ক্ষয়ক্ষতির হিসাব: এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নানা রকম তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কমপক্ষে ১০০০ রাশিয়ান সেনা হত্যার দাবি করেছে। অন্যদিকে রাজধানী কিয়েভের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটি হোস্টোমেল (যা আন্তোনভ বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত) দখল করার সময় ইউক্রেনের ২০০ সেনা সদস্যকে ‘নির্মূল’ করার দাবি করেছে রাশিয়া। সেখানে অভিযানে অংশ নিয়েছে রাশিয়ার ২০০ হেলিকপ্টার। বৃটেনের সশস্ত্র বাহিনী বিষয়ক মন্ত্রী জেমস হিপ্পে বলেছেন, লড়াইয়ে ৪৫০ জন রাশিয়ান সেনা নিহত হয়েছে। ইউক্রেনের কমপক্ষে ১৯৪ জন নিহত হয়েছে। এরমধ্যে ৫৭ জন বেসামরিক ব্যক্তি।
সংলাপে প্রস্তুত ক্রেমলিন: ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ বলেছেন, বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে ইউক্রেনের সঙ্গে সংলাপে বসতে প্রস্তুত রাশিয়া। রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তিকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। তবে ওই মুখপাত্র বলেছেন, এই আলোচনা হতে হবে ইউক্রেনকে একটি ‘নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মর্যাদা’ নিয়ে। এরমধ্যে দেশটিকে নিরস্ত্রীকরণের বিষয় থাকতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে চাইছে। কিন্তু তাতেই রাশিয়ার বাধা। দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সংলাপ আহ্বান করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি।
তবে কিসের ভিত্তিতে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে যখন ক্রাইমিয়াকে কেড়ে নেয় রাশিয়া তখনও ওই মিনস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা তখনকার সংঘাত বন্ধে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করায়। কিন্তু ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে সেই চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন রাশিয়ার নেতারা। এর আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ইউক্রেনের সব সেনাদের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানান। বলেন, তারা অস্ত্র সমর্পণ না করা পর্যন্ত কোনো সংলাপ হতে পারে না। -মানবজমিন
আরও পড়ুন
ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের জন্য হেল্পলাইন নম্বর প্রকাশ
ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ কার্যকরভাবে শুরু! বিশ্বব্যাপী নিন্দা
ইউক্রেন-রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি হামলায় ১০০ সৈন্য নিহত