সাহিত্য ও কবিতা

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৭ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৭ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

পূর্ব  প্রকাশের পর। পর্ব- ৭

আর সেই সঙ্গে ওর পুরনো মটর হার, দুটো বাউটি , কানের জন্য বাউটি রিঙ আর রমলার বিয়ের সময় মামাতো ননদ সে আঙটিটা দিয়েছিল, সব গয়না গুলো নিয়ে ইরার কাছে এসে একে একে পরিয়ে দিয়ে বলল, মেয়েদের বিয়ে ঠিক হলে হাত, কান, গলা খালি রাখতে নেই মা৷ আজ থেকে এগুলো সব তোর৷

একটু  পরে আমি আর তোর মেসো বেড়োব তোর বিয়ের কাপড় চোপড় কিনতে৷ আর মাসি ঠাকুর মশাইকে বলা আছে , উনি লিস্ট করে নিয়ে আসবেন৷ তুমি আর ইরা মিলে সব দেখেশুনে কথা বলে নিও৷

ছবিমাসি বলল, বৌমা আমার সাক্ষাত লক্ষী৷ সব দিকে নজর৷  ইরা ছবিমাসি আর রমলার পা ছুঁয়ে প্রনাম করল৷

প্রাণতোষ আর রমলা গাড়ি নিয়ে সোজা গড়িয়াহাটের ইন্ডিয়ান সিল্ক হাউজে গেল৷ ইরার জন্য একটা লাল টুকটুকে বেনারসী এবং তার সঙ্গে আরও অনেক দামী কাপড় কিনল৷ গোবিন্দর জন্য ধাক্কাপাড় ধুতি, কারুকাজ করা পাঞ্জাবী আরও কিছু জামা কাপড় কিনল৷

তারপর বাড়ি ফেরার পথে আসবাবপত্রর দোকান থেকে সেগুন কাঠের খাট, কাঁচ লাগানো আলমারি, আলনা এসব অর্ডার দিল৷ ফার্নিচারের দোকানের মালিক গণেশ বলল, দাদা একটা রেডিমেড খাট আছে, একজন অর্ডার দিয়ে আর নেয়নি৷ আপনি দেখুন যদি পছন্দ হয় ৷

প্রাণতোষ বলল, চল দেখি৷

প্রাণতোষ আর রমলাকে ভেতরে গুদাম ঘরে নিয়ে গেল গণেশ৷ খাটটা সত্যিই পছন্দসই৷ প্রাণতোষ বলল, গণেশ তুমি আগামী শণিবার খাটটা আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিও৷ আর তার সঙ্গে টাকাও নিয়ে যেও৷ আর আলনা আলমারি বানাতে তোমার কতদিন সময় লাগবে?

গণেশ বলল, দিন পনেরো লাগবে৷

প্রাণতোষ আর রমলা এরপর বিছানার দোকানে গিয়ে গদি, বালিশ, তোষক, বিছানার চাদর,, মশারি, লেপ এসবের অর্ডার দিয়ে তারপর বাড়িতে ঢুকল৷

রাত্রিবেলা খেতে বসে রমলাকে বলল, জানো তো আজকে আমার মনটা বড় হাল্কা লাগছে৷ সেই কোন ছোটবেলা থেকে গোবিন্দকে দেখছি৷ আর ইরা মায়ের প্রতিও এই কদিনে কেমন মায়া পরে গেছে৷ গোবিন্দ আর ইরার বিয়ের ব্যবস্থা করতে পেরে মনের দিকে যে আনন্দ পাচ্ছি, তা এতদিনে এত কাজ করেও পাইনি৷

রমলা বলল, শুধু কি তোমার৷ আমারও তাই হচ্ছে৷ আমার একটা মেয়ের শখ বরাবরই ছিল৷ আজকে ইরাকে পেয়ে আমার সেই শখ পূরণ হল৷

প্রাণতোষ বলল, সত্যি তুমি যদি আমার সব কাজে সমর্থন না করতে আমি কোনও কাজই করতে পারতাম না৷ তুমি আমার সার্থক অর্ধাঙ্গিনী৷

রমলা বলল, নাও নাও হয়েছে৷ অনেক রাত হল৷ এবার শুতে চল৷ কালকে আবার ইরার বাবাকে আনতে যেতে হবে তো না কি ?

প্রাণতোষ কলঘরে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে শোবার ঘরে গেল৷ রমলাও এঁঠো বাসনপত্তর কলঘরে রেখে, এঁঠো জায়গা মুছে, হাত, পা ধুয়ে শোবার ঘরে ঢুকে দরজায় খিল দিল৷

রবিবার সকাল হতেই গোবিন্দ প্রাণতোষের বাড়িতে চলে এল৷ তখন রান্নার ঠাকুর অমলের সঙ্গে প্রাণতোষ আর রমলা বিয়ে বাড়ির রান্নার ফর্দ তৈরি করছেন৷ বাঙালী বিয়ে বাড়িতে যা হয় তাই৷ সকালের টিফিনে লুচি, আলুর তরকারি৷ দুপুরে ভাত, আলুভাজা, মাছের মাথা দিয়ে মুগ ডাল, রুই মাছের কালিয়া, দই , মিষ্টি৷ রাতে দুপুরের সব কিছুই থাকবে শুধু যোগ হবে কচি পাঠার মাংস আর পান৷

গোবিন্দর দিকে তাকিয়ে প্রাণতোষ বলল, কি সব ঠিক আছে তো? না আরও কিছু লাগবে৷

গোবিন্দ বলল, না না সব ঠিক আছে৷

একটু পরে রতন গাড়ি নিয়ে এল৷ সকালের জলযোগে লুচি, আলুর দম সবাই খেয়ে নিল৷ তারপর প্রাণতোষ তৈরি হয়ে গোবিন্দকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে উঠলেন ইরার বাবাকে আনতে৷

কিছুক্ষণ পরে দেবতোষ রমলার কাছে এল৷ রমলা বলল, তুই এত ব্যস্ত থাকিস৷ সব শুনেছিস তো?

দেবতোষ বলল, হ্যা ছবি ঠাকুমার কাছে সব শুনেছি৷  রমলা বলল, তাহলে তো সব জানিসই৷ এই রবিবার কিন্তু কোথাও বেড়োবি না৷

দেবতোষ বলল, আচ্ছা মা৷ প্রাণতোষ আর রমলার ছোট ছেলে দেবতোষের উপর সমস্ত আশা ভরসা৷

বড় ছেলে মনোতোষকে ঠিক মতন মানুষ করতে পারলেন না বলে প্রাণতোষ আর রমলার সব সময়েই আক্ষেপ হয়৷ কলেজে ঢুকেই কুসঙ্গে পরে গেল৷ আর গ্রাজুয়েটই হল না৷ দিন, রাত মদ খায়৷ রেসের মাঠে যায়৷ মেয়েদের সঙ্গে রাত কাটায়৷ প্রাণতোষ কঠোর হয়ে ওকে বাড়ির সব সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছেন৷

যখন বাড়ি থাকে বাড়ির পেছন দিকের একটা ঘরে থাকে৷ প্রাণতোষ টাকা পয়সা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল বলে বাবার গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করেনি মনতোষ৷

তখন ছবি মাসিই বলেছিল, আলিপুরে যে তিনতলা বাড়িটা আছে৷ সেটা একটা সরকারী অফিস ভাড়া নিয়েছে সেই ভাড়ার টাকাটা ওকে দিয়ে দিবি প্রত্যেক মাসে৷ এর বাইরে ওর আর কোনও অধিকার নেই৷

প্রাণতোষও এখন তাই করে৷ প্রত্যেক মাসের ভাড়ার টাকাটা ছবি মাসির কাছে দিয়ে দেয়৷ ছবি মাসিই ওর হাতে টাকাটা দিয়ে দেয়৷

অথচ এই মনোতোষ ছোট্টবেলায় ছবিঠাম্মি অন্ত প্রাণ ছিল৷ ছবিঠাম্মির আঁচল ধরে ঘুরে বেড়াত৷  ছবিঠাম্মি না খাওয়ালে সে খাবে না৷

রাতের বেলা ছবি ঠাম্মির কাছে রাক্ষস খোক্ষসের গল্প শুনে ঘুমাতো৷ সেই মনোতোষ কলেজে ভর্তি হয়ে আস্তে আস্তে বদলে গেল৷

প্রথমে মাঝে মাঝে মদ খাওয়া শুরু করল তারপর সেটা রোজ শুরু হল৷

প্রাণতোষের চিৎকার কানে আসতো ছবি মাসির৷ মনোতোষকে শাসন করতেন প্রাণতোষ৷ একদিন সকালবেলা ছবিমাসি মনোতোষের ঘরে গিয়েছিলেন৷ তখনও মনোতোষের ঘুম ভাঙেনি৷

মনোতোষের মাথায় হাত বুলাতেই মনোতোষ চোখ খুলে উঠে বসল, ঠামি তুমি কখন এসেছো?

এই তো এখন বাবা৷ তা তুই নাকি আজকাল পড়াশুনা করিস না৷ তাই আমি জানতে এলাম৷

মনোতোষ বলল, ছাড়ো তো ঠামি৷ পড়াশুনা করে কি হবে? আমি জীবনটা এখন অন্যভাবে কাটাবো৷

——— অন্যভাবে কাটাবি মানে? ওসব ছাইপাশ খেয়ে৷

মনোতোষ বলেছিল, ছাড়ো তো ঠাম্মি তুমি ওসব বুঝবে না৷ তুমি যাও কানের কাছে বকবক কোরো না৷

ছবিমাসি আর কিছু বলেনি৷ মনোতোষের কথাগুলো তার কানের সঙ্গে বুকেও বিঁধছিল৷ ভগবানকে মনে মনে স্মরণ করেছিলেন৷ ভগবান তুমি উদ্ধার কোরো৷

কিন্তু সেই উদ্ধার মনোতোষ আর হয়নি৷ ক্রমশঃ অবনতিই হয়েছে৷ প্রথমে মদ্যাসক্ত তারপর মেয়েদের প্রতি আসক্ত৷ প্রাণতোষের অর্থ ধ্বংস৷ কলেজ থেকেও পত্রপাঠ বিদায় করে দিয়েছিল৷ মদের নেশা ওকে আস্তে আস্তে বিপথে নিয়ে গেল৷ আর এখন তো বাড়ির সঙ্গে কোনও সম্পর্কই নেই৷ শুধু মাস ফুরালে ভাড়ার টাকাটা ছবি মাসির কাছে এসে নিয়ে যায়৷ একবার মুখ ফুটেও জিজ্ঞাসা করে না, ঠাম্মি তুমি কেমন আছো?  ছবিমাসি প্রথম প্রথম জিজ্ঞাসা করত, কেমন আছিস বাবা?

লাল চোখে মনোতোষ বলত, দেখতেই তো পারছো বেঁচে আছি৷ মরে গেলে খবর পাবে৷

ছবিমাসি এখন আর কিছু জিজ্ঞাসা করে না৷ প্রাণতোষের গাড়ি ইরাদের বাড়ির সামনে পৌছতেই ইরার জেঠতুতো দাদা এগিয়ে এল৷ প্রাণতোষ বললেন, কেমন আছেন তোমার কাকা?

ইরার দাদা বলল, ভাল আছে ৷ গোবিন্দকে দেখে ইরার দাদা বলল, কেমন আছো জামাই ?

গোবিন্দ মাথা নেড়ে বলল, ভাল৷ প্রাণতোষ বললেন, সব কথা দরজার সামনেই বলবে, বাড়ির ভিতরে ঢোকাবে না৷  ইরার দাদা বলল, এমা কি বলছেন৷ আসুন আসুন  বাড়ির ভিতরে আসুন৷

প্রাণতোষকে দেখে ইরার বৌদি ছুটে এল৷ প্রাণতোষ সোজা গিয়ে ইরাদের ঘরে ঢুকল৷ প্রাণতোষ এসেছে শুনে পাশের বাড়ি থেকে ইরার পিসিও ছুটে এল৷

প্রাণতোষ ইরার বাবার কাছে গিয়ে বলল, কেমন আছেন? ইরার বাবার দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল৷

প্রাণতোষ বললেন, আপনাকে নিতে এসেছি৷ আপনি এখন থেকে আমার বাড়িতেই থাকবেন৷  ইরার বাবা অসহায় চোখে প্রাণতোষের দিকে তাকালেন৷

ইরার পিসি বলল, সেটাই ভাল হবে৷ ইরা চলে যাবার পর দাদা খাচ্ছেও না৷ আর এই বিছানায় পরা লোককে কে দেখবে বলুন? আপনি বড়লোক আপনার লোকজনও আছে, আপনাদের কোনও সমস্যা নেই৷ প্রাণতোষ মৃদু হেসে বলল, বড়লোক কি টাকা থাকলেই হয়? মনের দিকে যে বড় সেই প্রকৃত বড়লোক৷

ইরার বৌদির দিকে তাকিয়ে প্রাণতোষ বলল, বৌমা ইরা এই কাগজে সব লিখে দিয়েছে, তুমি এখানে যা লেখা আছে সব গুছিয়ে দাও৷  ইরার বৌদি কাগজটা হাতে নিয়ে দেখল, সেখানে ইরার বাবার প্রেসক্রিপশন, ওষুধপত্তর, আর আলমারিতে রাখা ইরার মায়ের হার, ওদের বাপ মেয়ের কিছু জামা কাপড়, তার সঙ্গে সোয়েটার, চাদর আর ওর মায়ের হাতের সেলাই করা কাঁথা, ওর মায়ের বাঁধাই করা ছবি, ওদের পুরোনো এলবাম আর ঠাকুরের আসনে রাখা বাঁধানো তারা মায়ের ছবি৷

ইরার বৌদি সব একে একে গুছাতে লাগল৷ দুটো কাঠের চেয়ারে প্রাণতোষ আর গোবিন্দ বসে রইল৷ ইরার পিসি দুটো কাঁচের প্লেটে মিষ্টি নিয়ে এল৷ প্রাণতোষ বলল, ডাক্তারের বারণ আছে আমি মিষ্টি খাই না৷

আসলে ইচ্ছে করেই খেলেন না৷ যে বাড়ির এমন মিষ্টি ব্যবহার সেই বাড়িতে মিষ্টি খাবেন কি করে?  গোবিন্দও খেতে চাইছিল না ৷ তখন প্রাণতোষ বলল, গোবিন্দ তুমি খাও৷ হাজার হোক তুমি এই বাড়ির হবু জামাই৷ তুমি না খেলে ওনারা কষ্ট পাবেন৷

গোবিন্দ তখন চামচে করে একটা মিষ্টি মুখে নিয়ে বলল, আর পারবো না৷ এইমাত্র টিফিন খেয়ে এসেছি৷

ইরার বৌদির সব জিনিসপত্তর এক জায়গায় জড়ো হয়ে গেছে৷ প্রাণতোষ বাড়ি থেকে একটা বড় চটের বস্তা নিয়েই এসেছিলেন৷ গোবিন্দ লিস্ট দেখে দেখে জিনিসগুলো সব বস্তায় পুরলো৷ ইরার মায়ের সোনার হারটা প্রাণতোষ পাঞ্জাবীর পকেটে রাখল৷ আর ফটো দুটো গোবিন্দ কাগজে মুড়ে নিল৷

প্রাণতোষ এবার সকলকে বলল, আমরা এবার উঠি৷ আপনারা আগামী রবিবার সন্ধেবেলা আমাদের বাড়িতে সবাই যাবেন এবং মেয়ে জামাইকে আশীর্বাদ করে রাতের খাবার খেয়ে আসবেন৷

গোবিন্দ তুমি জিনিসপত্তরগুলো নিয়ে গাড়ির পিছনের ডিকিতে রাখো৷ আর মেসোমশাইকে নিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে শুইয়ে তুমি ওখানে বসো৷ আমি সামনে বসছি৷ আর রতনকে বলো, মেসোমশাইকে যেনো পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে আসে৷

ইরার দাদা বলল, আমিই গিয়ে কাকাকে পেছনের সিটে দিয়ে আসছি৷

ইরার দাদা পাঁজাকোলা করে ইরার বাবাকে নিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে শুইয়ে দিল৷

প্রাণতোষ গিয়ে গাড়ির সামনের সিটে বসল৷ রতন  গাড়ি স্টার্ট দিল৷

ইরার বাবাকে নিয়ে গাড়ি বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই ইরা ছুটে এল৷ ইরার বাবার ঘরে খাটের উপর বিছানা আগেই ইরা গুছিয়ে রেখেছিল৷

ইরার বাবাকে গোবিন্দই পাঁজাকোলা করে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিল৷

রতন পেছন পেছন জিনিসপত্তরের বস্তাটা বয়ে নিয়ে এল৷ আর ইরা ছবিদুটো এনে বাবার ঘরে দেওয়ালে যে তিনটে তাক ছিল সেখানে আগে থেকেই রমলার থেকে নতুন টুকরো কাপড় চেয়ে নিয়ে তাকের উপর পেতেছিল, তার উপর ওর মায়ের ছবি আর তারা মায়ের ছবিটা আর এক টুকরো নতুন কাপড় জলে ভিজিয়ে ছবিদুটো মুছে ফটোর সামনে ধুপকাঠি জ্বালিয়ে দিল৷

রমলাই ওকে এক প্যাকেট ধুপকাঠি, দেশলাইয়ের বাক্স আর একটা পিতলের ধুপদানি দিয়েছে৷

বাড়িতেও রমলা প্রতিদিন তাই করত৷ কাজে বেড়োবার আগে ফটোদুটো মুছে একটা ধুপকাঠি জ্বালিয়ে দিত৷

ইরা গিয়ে ওর বাবার পাশে বসল৷ ধবধবে পরিষ্কার বিছানা৷ চাদরের তলায় রাবার ক্লথ দেওয়া৷ ইরা ওর বাবার হাতটা শক্ত করে ধরল৷

ওর বাবা ইরাকে দু চোখ ভরে দেখতে লাগলেন৷ কিছুক্ষণ পরে রমলা, ছবিমাসি আর গোবিন্দ এল৷ ইরা গোবিন্দ ছাড়া রমলা আর ছবিমাসিকে পরিচয় করিয়ে দিল৷ ওর বাবা হাত দুটো অতি কষ্ট করে কপালে ঠেকালো৷

ছবি মাসি বলল, দাদা আপনার আর চিন্তা রইল না৷ আপনার মেয়ের একজন সৎ পাত্রর সঙ্গে বিয়ে হতে চলেছে৷ আপনার মেয়েও এখানে থাকবে ৷ আপনার দেখাশুনার আর অসুবিধা হবে না৷ আপনিও মেয়েকে সব সময়ে দেখতে পাবেন, আর ইরাও আপনাকে৷

ছবিমাসির কথা শেষ হতেই কল্পনা ঢুকল৷ কল্পনা এই বাড়িতে প্রায় দশ বছর ধরে আছে৷ বিয়ের পর বাচ্চা হয়নি বলে স্বামী ওকে তাড়িয়ে দিয়ে আর একটা বিয়ে করেছে৷ মসলন্দপুরে ওর শ্বশুরবাড়ি ছিল৷ রতনের সম্পর্কে মামাতো শালী৷ রতনই তখন এই বাড়িতে ওকে কাজের ব্যাবস্থা করে দেয়৷

ছবিমাসি কল্পনাকে বলল, এখন থেকে ইরার বাবাকে দেখাশুনা করার দায়িত্ব তোমার থাকল কল্পনা৷

কল্পনা বলল, তুমি চিন্তা কোরোনা মাসি, আমি সব সামলে নেব৷

গোবিন্দ একটু অবাকই হল বিয়ের পরে এখানে থাকার ব্যাপারে প্রাণতোষবাবুতো আগেতো কিছু বলেনি৷

একটু পরে প্রাণতোষ এল৷ সে ঘরে ঢুকে পকেট থেকে ইরার মায়ের সোনার চেনটা ইরার হাতে দিল। ইরা চেনটা রমলা আর ছবিমাসিকে দেখিয়ে বলল, মায়ের আরও গয়না ছিল, সব বাবা, মায়ের চিকিৎসার জন্য বিক্রি হয়ে গেছে৷ এই হারটুকুই মায়ের স্মৃতি হিসাবে রেখে দিয়েছি৷

রমলা বলল, বাঃ খুব সুন্দর মটর হার৷ তুমি এটা গলায় পরে নাও ইরা৷ তাহলে মায়ের ছোঁয়া পাবে৷

ইরা রমলার কথা মতন হারটা গলায় পরে নিল৷

কল্পনা বালতির জলে ডেটল ফেলে গামছা ভিজিয়ে ইরার বাবাকে পরিস্কার করে মুছিয়ে , ধোওয়া লুঙ্গি আর সাদা হাফ হাতা গেঞ্জি পরিয়ে দিল৷ তারপর ভাত , শিঙ মাছের ঝোল দিয়ে চটকে নরম করে খাইয়ে মুখ মুছিয়ে জল খাইয়ে দিল৷

এরমধ্যে দেওয়াল আলমারিতে ইরাও ও বাড়ি থেকে আনা জিনিসপত্তর গুছিয়ে , স্নান করে খেয়ে বাবার কাছে বসল৷ বাবা হাতের ইশারায় আর জড়ানো গলায় বললেন, ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্য৷

তুই অনেক কষ্ট করেছিস আমার জন্য এবার ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন৷ দেখবি তোর আর কোনও কষ্ট হবে না৷

ইরা বলল, জানো বাবা এনারা ভগবান৷ আমি কি করে ভালো থাকবো , সেই নিয়েই ওনাদের চিন্তা ৷ আমাদের নিজেদের আত্মীয়স্বজনও যা কোনওদিনই ভাবেনি৷

বাবা বললেন, আজ তোর মা বেঁচে থাকলে খুবই আনন্দ পেতো৷

ইরা আর কিছু বলল না৷ চুপ করে রইল৷

চলবে…

কৃষ্ণা গুহ রয়- উপন্যাসিক, কবি। পশ্চিমবঙ্গ


অন্যান্য পর্বগুলো পড়তে হলে

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব -১ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব -২ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব -৩ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব -৪ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৫ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৬ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

 

 





সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন