কোভিড ভ্যাকসিন এবং বাংলাদেশ |||| ডঃ শোয়েব সাঈদ
করোনা/কোভিড সংকটকালের এই মুহূর্তে জুন মাস শুরুর প্রাক্কালে বাংলাদেশের অবস্থা ভীষণ উদ্বেগজনক। কোভিড নিয়ে বাংলাদেশের পত্রিকায় আমার অনেকগুলো লেখাতে সংক্রমণের উচ্চহার নিয়ে বরাবরই শংকা প্রকাশ করেছি। কতজনের টেস্ট করা হয়েছে এবং এর মধ্যে কতজনের পজিটিভ হয়েছে এর হার বাংলাদেশে কখনো ১২% কখনো ১৭% দেখেছি। সম্প্রতি টেস্টের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে পজিটিভের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এবং এই হার দৈনিক ভিত্তিতে কখনো কখনো ২০% এ চলে যাচ্ছে। বিভিন্ন জেলা শহরের যে চিত্র তাতে করোনার বিস্তার সর্বব্যাপী। সংক্রমণের এই পিক অবস্থা্য লকডাউনের শিথিলতায় পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। যে দেশে দুই কোটি মানুষ দিনে এনে দিনে খায়, দীর্ঘদিনের লকডাউন সহ্য করার ক্ষমতা তো তাঁদের নেই। অর্থনীতির স্বাস্থ্য বনাম জনসাধারণের স্বাস্থ্য ক্রমশই একে অপরের সাথে অবাঞ্চিত তীব্র প্রতিযোগিতায় “রেললাইন বহে সমান্তরাল” এর চাইতে প্রাধান্যে থাকবে কে সেটিই মুখ্য হয়ে উঠছে। রাষ্ট্র পরিচালনা যারা করেন তাঁদের জন্যে এটি কঠিন এক চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশে সরকারীভাবে না শুনা গেলেও মাঝে মধ্যেই হার্ড ইমুইনিটির কথা শুনতে পাই। প্রশ্ন উঠছে আমরা কি পরিকল্পিতভাবে হার্ড ইমুইনিটির দিকে এগুচ্ছি? হার্ড ইমুইনিটির ব্যাপ্তি নিয়ে আমাদের অনেকেরই কোন ধারণা নেই। Herd অর্থাৎ পশুর পাল বা মূলত ভেড়ার পালের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ধারণা থেকে হার্ড ইমুইনিটির উৎপত্তি এবং প্রচলন। ভেড়ার পালের মোটামুটি ৮০% এর টিকা বা সংক্রমণের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে পালের সবাই অর্থাৎ বাকী ২০% সহ নিরাপদে থাকে। এখন এই বিবেচনায় সতের কোটি জনসংখ্যার একটি দেশে প্রায় ৮০- ৯০% জনগণের মধ্যে সংক্রমণ ঘটার সুযোগ করে দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির ধারণা শুধু উচ্চাভিলাষী নয়, ভ্যাক্সিনের অভাবে অসম্ভবও বটে। এতে আমরা বিপুল সংখ্যক সিনিয়র সিটিজেনদের হারাতে পারি। হার্ড ইমুইনিটি অর্জনের মূল অস্ত্রটা হচ্ছে ভ্যাক্সিন। ভ্যাক্সিন ছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কোটি কোটি মানুষের বেঁচে থাকার বেপরোয়া ধারণা বুমেরাং হতে বাধ্য। বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের ক্ষেত্রে একটি বিপদজনক ধারা হচ্ছে কোভিডে বহু শিশুর মৃত্যু। উন্নত বিশ্বে এটি দেখা যাচ্ছে না কিন্তু বাংলাদেশ,পাকিস্থান এবং ভারতে এটি দৃশ্যমান। পাকিস্থানের শুধু সিন্ধু প্রদেশে ১০ বছর বয়সের নীচে প্রায় হাজার খানেক শিশু কোভিডে মারা গেছে। বাংলাদেশে ২০ বছর বয়সের নীচে মৃত্যুর হার ১০%, ১০-২০ বছর বয়স পর্যন্ত ৭%। বাচ্চাদের ইমিউনিটি বেশী থাকার কারণে বড় ধরণের অসুস্থতা না থাকলে SARS-CoV-2 তাদের কাবু করার কথা নয়। অথচ উপমহাদেশে বাচ্চারা কাবু হচ্ছে এবং এর কারণ বের করাটা জরুরী। স্কুল কলেজ খোলার পর শিশু স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবস্থা কি দাড়ায় দুর্ভাবনার বিষয়। এরকম ভয়ংকর পরিসংখ্যানের পর ভ্যাক্সিন ছাড়া হার্ড ইমুইনিটির পথে হাঁটতে যাওয়া প্রকৃতির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ মাত্র।
আমরা অনেক বলছি, শুনছি, বিশ্লেষণ করছি অথচ অসহায়ত্বের জায়গাটুকুতে উল্ল্যেখযোগ্য অগ্রগতি নেই, আমরা কেবল আশায় আশায় আছি। কোভিডে গুরুতর রোগীদের ড্রাগ নিয়ে আমরা প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশে নতুন নতুন সুখবর দেখতে পাচ্ছি। আমাদের দেশের ফার্মা কোম্পানিগুলো উৎপাদনের জন্যে পরিচিত; গবেষণা বা উদ্ভাবনের জন্যে একেবারেই নয়। এদেশের অনেক ফার্মা মালিক পত্রিকারও মালিক, ফলে অনেক প্রিম্যাচুউর প্রচারণার সুবিধে নেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিকে বলা হওয়া ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সের মক্কা। নিউ জার্সিকে ভিত্তিক ফার্মা কোম্পানিগুলো কোভিড ড্রাগ উদ্ভাবনে অপেক্ষাকৃত নীরবতার মাঝে বাংলাদেশে কোভিড ড্রাগ নিয়ে একের পর এক তথ্য আমাদের উৎসাহিত করে বটে, কিন্তু উৎসাহ আবার অকালেই মিয়ে যায় যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ইউএসএফডিএ বা প্রভাবশালী রেগুলেটরী বডির কাছ থেকে সাড়া না মেলে। একথা ঠিক কিছু ড্রাগের কম্বো সংকটাপন্ন রোগীর বেলায় বিভিন্ন কৌশলে ক্ষতিগ্রস্ত অর্গানের কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে এনে জীবনরক্ষাকারী ভূমিকা নিচ্ছে বটে, কিন্তু কোভিডকে টার্গেট করে লক্ষ্যবেদী ড্রাগের দেখা বিশ্ব এখনো পায়নি।
“কোভিড যুদ্ধে আশা নিরাশা” শীর্ষক আমার আগের একটি লেখায় ড্রাগ আর ভ্যাক্সিন নিয়ে বিস্তারিত লিখেছি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ভ্যাক্সিন নিয়ে আমরা নানা কথা শুনছি। ভ্যাক্সিন বের হলেও বাংলাদেশের এই ভ্যাক্সিনে এক্সেস পেতে কতদিন লাগতে পারে আমাদের ধারণা নেই। ভাগ্যগুনে সামারের শেষ নাগাদ কোভিডাক্রান্ত বিশ্ব ভ্যাক্সিন পেয়ে গেলে উৎপাদন শুরু হতে বছরের শেষ নাগাদ হয়ে যাবে। উন্নত দেশগুলো এখন থেকেই লগ্নির চুক্তি করে রাখছে যাতে ভ্যাক্সিন বের হলে তৎক্ষণাৎ তাদের জনগণের জন্যে ব্যবহারের জন্যে পাওয়া যায়। বিশ্বব্যাপী শত শত কোটি ভ্যাক্সিন চাহিদা ওভারনাইট মিটানো সম্ভব নয়। অর্থ, প্রভাব সর্বোপরি করিৎকর্মা নীতিনির্ধারণী সক্ষমতা ভ্যাক্সিন পাবার বড় যোগ্যতা। যারা ভাবছেন বিল গেট্স বা জ্যাক ম্যা এর অর্থ সাহায্যে ভ্যাক্সিন বের হলে সবার জন্যে সহজলভ্য হবে, তাঁদের প্রথমত বুঝা উচিত উনাদের অর্থ সাহায্য সংশ্লিষ্ট ঐ সকল নির্দিষ্ট প্রোজেক্টগুলো থেকে ভ্যাক্সিন উদ্ভাবন হবেই এমন নিশ্চয়তা নেই। দ্বিতীয়ত বিশাল পরিমানে উৎপাদনে যাবার পর বন্টন ব্যবস্থায় ঘুরেফিরে প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রভাব। বিশ্বব্যাপী ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনের কর্মযজ্ঞে বাংলাদেশের সংশ্রবের নির্দিষ্ট কোন তথ্য এখন পর্যন্ত জানা নেই। কানাডার কথিত বেগম পাড়া, বা বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোমের বাংলাদেশী ধনী শ্রেনী কিংবা বিশ্ব মিডিয়া দৃষ্টি আকর্ষণকারী দ্রুত বিকশিত বাংলাদেশী অতি ধনীদের মানব কল্যাণে আগ্রহ বরাবরই কম, ফলে কোভিড সংকটে উনাদের গুটিয়ে থাকা হাত ভ্যাক্সিন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবার আশা না করাই ভাল। বরং বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনের পর দ্রুততার সাথে বাংলাদেশে নিয়ে আসার বিষয়ে এখনই কর্মপন্থা নির্ধারণ ভীষণ জরুরী। পিপিই, কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র, আরটিপিসিআর টেস্ট, প্রবাসীদের ঠিকমত কোয়ারেন্টাইন ইত্যাদি নানাবিধ অব্যবস্থাপনা থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার আলোকে ভ্যাক্সিন বিষয়ে সরকারের ভাবনা আর কর্মপন্থার বিষয়ে আগে থেকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া আর জনগণকে জানিয়ে রাখা উচিত।
করোনা সংকটে পিক পার হয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার পর আস্তে আস্তে উন্মুক্ত হচ্ছে অনেক দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম। ভিয়েতনাম, নিউজিল্যান্ড, কোরিয়া, জাপানের প্রশংসনীয় সফলতা, গ্রীস, ইতালি, স্পেনের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার পর পরিস্থিতির উন্নতি, ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ করে নিউ ইয়র্কের আগামী সপ্তাহ থেকে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবার চেষ্টা সহ বিশ্বের বহু দেশ আস্তে আস্তে সুস্থতায় ফিরে যেতে যাচ্ছে। কানাডার মন্ট্রিয়লে সামারে হাইওয়েতে সারি সারি গাড়ীর সেই চেনা পরিবেশ ফিরে আসার কাহিনীর মধ্যে আছে সঙ্কট উত্তরণে কঠোর তপস্যার অবসানে কিছুটা এগিয়ে যাবার প্রয়াস। ভারতে অব্যাহত লকডাউন জুনের শেষতক পর্যন্ত আপাতত বর্ধিত।
কিন্তু বাংলাদেশে সফলতা আসার আগেই আমাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবার চেষ্টাটি ভিন্ন আঙ্গিকে, অনেকটা হাসপাতালে অসুস্থ রোগীর অবনতিশীল অবস্থার মাঝে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবার ঝুঁকি নেবার মত। এই ঝুঁকি নেবার লক্ষ্য যদি থাকে হার্ড ইমুউনিটি, তবে তার জন্যেও দরকার ভ্যাক্সিন। ভ্যাক্সিনে বাংলাদেশের এক্সেস করার কথা আগেই বলেছি, এখন দেখা যাক ভ্যাক্সিন জয়ের সাম্প্রতিক হালহকিকত। কোভিড ভ্যাক্সিনে বিশ্বব্যাপী ব্যস্ত শতাধিক প্রোজেক্ট। প্রতিদিনই কোন না কোন প্রোজেক্টের সফলতার খবর পত্রপত্রিকায় আসছে। কে আগে বের করতে পারে এই প্রতিযোগিতার তীব্রতায় নিউজ না হবার বিষয়ও নিউজ হচ্ছে, প্রিম্যাচুউরভাবে খবর দিয়ে মাঠে থাকতে চাচ্ছে সবাই। আবার বিজ্ঞান সাংবাদিকতায় অদক্ষতার কারণে গুরুত্বহীন খবর গুরুত্ব পাচ্ছে। এরকম অবস্থায় ওয়াকিবহাল মহল যেখানে বিভ্রান্ত, সেখানে সাধারন জনগণের পক্ষে প্রকৃত অবস্থা বুঝা কঠিন। সুখবরের জন্যে সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। আমার কাছে ৩-৪ টি প্রোজেক্ট খুব সম্ভাবনাময় মনে হচ্ছে। ইঁদুরের শরীরে এন্টিবডি তৈরির সফলতা পাবার প্রাথমিক খবরে আমার আপাতত আগ্রহ নেই, এখন গুরুত্বপূর্ণ মানব ট্রায়ালের খবরাখবর এবং এর অগ্রগতি। যে প্রোজেক্টগুলো এই মুহূর্তে মানব ট্রায়ালের ধাপ অতিক্রম করছে সফলতার সাথে তাদের খবর শুনতে আগ্রহী বৈশ্বিক জনগোষ্ঠী। কোভিড নিয়ে নানা রকম হতাশার মাঝে প্রবল সম্ভাবনাময় কিছু প্রোজেক্টের আশার আলো বিচ্ছুরণের আশা জাগানিয়া কিছু তথ্য শেয়ার করতে চাচ্ছি।
ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এসট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত প্রোজেক্ট বিপুল আশা জাগিয়েছে। পরীক্ষামূলক ভ্যাক্সিন ChAdOx1 nCoV-19 আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছে। এপ্রিলের শেষের দিকে ৫০০ মানুষের উপর ট্রায়াল শুরু করে এখন ১০ হাজার মানুষের উপর ট্রায়াল শুরু করতে যাচ্ছে। অক্সফোর্ডের ভাষ্য অনুসারে সফল হবার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরের দিকে ভ্যাক্সিনটি পাওয়া যেতে পারে। SARS-CoV আক্রান্ত হবার পর এন্টিবডি তৈরি, এর স্থায়িত্ব এরকম নানা জল্পনা কল্পনায় এমন সংশয়ও আছে অন্য অনেক ভাইরাল রোগের মত কোভিডেও আদৌ ভ্যাক্সিন পাওয়া যাবে কিনা? ফলে রক্ষণশীল আশাবাদে সফলতার বিষয়ে অনেকেই ৫০-৫০ চান্স আছে বলে করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক অগ্রগতি উৎসাহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে এসট্রাজেনেকা সাথে ১.২ বিলিয়ন ডলারের ডিলে আসতে প্রফেসর হিলসের এই অক্সফোর্ড প্রোজেক্টে ৪০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাক্সিন উৎপাদনে। ব্রিটিশ সরকারও ১০০ মিলিয়ন ডোজের চুক্তি করেছে। একক ডোজের ZD1222 (ChAdOx1 nCoV-19) ভ্যাক্সিনটিকে উদ্ভাবন প্রতিযোগিতায় ফ্রন্ট রানার ভাবা হচ্ছে।
চীনাকোম্পানি CanSino Bilogistics এর ভ্যাকসিন AdV5-nCov এর জন্যে কানাডা সরকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে মাস খানেক আগে। কানাডার আগে চীন শুরু করেছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটি এবং ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ধাপে আছে। চীনের উহানে ১০৮ জন বয়স্ক ব্যাক্তির উপর প্রয়োগে কাঙ্ক্ষিত এন্টিবডি হয়েছে। সম্প্রতি ল্যান্সেট জার্নালে প্রাথমিক মানব ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। কানাডা অনুমোদন দিয়েছে ভ্যাক্সিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নোভাস্কশিয়া প্রদেশের হ্যালিফেক্স শহরের ডালহৌসী বিশ্ববিদ্যালয়ের কানেডিয়ান ভ্যাক্সিনোল জি সেন্টারে। ডালহৌসী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রায়ালে প্রথমে ১০০ জনের কম সংখ্যায় ১৮-৫৫ বছর বয়সের ব্যাক্তির উপর ভ্যাক্সিন প্রয়োগ শুরু করে তা ৫০০ জনে উন্নীত করা হবে এবং এই ৫০০ জনের মধ্যে ৬৫-৮৫ বয়সের মানুষদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সফলতার ধারাবাহিকতায় চীনা কোম্পানিটি আরো ব্যাপক পরিসরে মানব ট্রায়ালে যাচ্ছে এবং চেষ্টা করছে সামারের শেষ নাগাদ চূড়ান্ত ট্রায়াল শেষে উৎপাদনে যাবার অবস্থায় নিয়ে যেতে। সফল হলে কানাডা উৎপাদনে যাবে প্রথমে নিজ দেশের চাহিদা মেটাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল ভিত্তিক কোম্পানি মডার্না ম্যাসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাক্সিন mRNA-1273 নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে গত মার্চে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) থেকে দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালের অনুমোদন পেয়েছে এবং আশা করা যাচ্ছে বছরের মাঝামাঝি ধাপ তিনের ট্রায়াল শুরু হবে। তৃতীয় ধাপে সফল হলে দ্রুত অনুমোদন দিতে এফডিএ তৎপর রয়েছে।
ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজার জার্মান বায়োটেক ফার্ম বায়ো এনটেকের সাথে যৌথভাবে লিপ্ত ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনে। প্রথম এবং দ্বিতীয় ফেজে মানব দেহের উপর প্রয়োগকৃত ফলাফলে সন্তোষজনক হওয়ায় ফাইজার আশা করছে বছরের শেষ নাগাদ বানিজ্যিক উৎপাদনে। এটিও আরএনএ ভ্যাক্সিন।
ভ্যাক্সিন নিয়ে আমাদের সব আশাবাদ সফল হলেও ভ্যাক্সিনের মুখ দেখতে উন্নত দেশগুলোর অপেক্ষা করতে হবে এই বছরের শেষার্ধ নাগাদ। বাংলাদেশের অপেক্ষা হবে আরো দীর্ঘ। এই পর্যন্ত লক্ষ্যভেদী কোন ড্রাগ না পাওয়া না গেলে আমাদের নির্ভর করতে হবে কেবল কোভিড ব্যবস্থাপনার উপর। বাংলাদেশে আর্থ সামাজিক, বোধ-বুদ্ধি আর ধর্মীয় বিবেচনায় কঠোর লকডাউন অরণ্যে রোদন মাত্র। এমতাবস্থায় বাইরে যাবার সময় সঠিকভাবে মাস্ক পরা, যথা সম্ভব শারীরিক দূরত্ব বজার রেখে চলা, সেনিটাইজার ব্যবহারে হাত পরিষ্কার রাখা বা সাবান দিয়ে ধৌত করা, বাইরে থেকে ফিরে এসে পরা কাপড় ধুতে দেওয়ার আকুতি জানানো ছাড়া আর কিইবা করার আছে। বাংলাদেশে সংক্রমণের তীব্রতায় প্রতিদিনই শুনতে হচ্ছে অসংখ্য পরিচিত জনের সংক্রমণের খবর আর বেশ কিছু না ফেরার দেশে চলে যাবার বেদনা বিদূর সংবাদ। সাতসাগরের পার থেকে আজকাল আমাদের প্রতিটি সকালের শুরু বাংলাদেশের খবরে এক রকম উৎকণ্ঠা নিয়ে।
লেখকঃ কলামিস্ট এবং মাইক্রোবিয়াল বায়োটেক বিষয়ে বহুজাতিক কর্পোরেটে ডিরেক্টর পদে কর্মরত এবং সিবিএনএ-এর উপদেষ্টা।
সি/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন