আমার চোখ ভিজে গিয়েছিল কান্নায়
কাজল ঘোষ || লতিফা অবিশ্বাস্য রকমের পরিশ্রম করছিল। একইরকম পরিশ্রম করেছে ‘ব্যাক অন ট্র্যাকের’ শিক্ষার্থীরাও। একটি রাতের কথা আমি কখনই ভুলতে পারবো না। ঐ কর্মপ্রচেষ্টার সম্মিলিত ফল আমরা সকলেই ভাগাভাগি করেছি। টিম, লতিফা এবং আরো অনেকেই আদালতের প্রাত্যহিক কাজ শেষে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল সেদিনের অনুষ্ঠানে। আমরা সকলে বিচারকদের সম্মেলন কক্ষের দিকে রওনা হলাম। সেই সম্মেলন কক্ষে তখন ফুল আর বেলুন হাতে লোকে লোকারণ্য। আনন্দ আর হুড়োহুড়িতে কক্ষটিকে ঠিক সাধারণ বিচার কক্ষ মনে হচ্ছিল না।
কিন্তু এটা কোনো সাধারণ রাত ছিল না। আমি সম্মেলন কক্ষের সামনে অগ্রসর হলাম এবং প্রথম ব্যাক অন ট্র্যাক গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করলাম।
মূল দরোজা দিয়ে আঠার জন নারী ও পুরুষ হেঁটে তাদের আসনে বসে। কিছু ব্যতিক্রম ঘটনাও ছিল। এটা ছিল তাদের জীবনের প্রথম দিন যেখানে তারা গ্রাজুয়েশন পোশাক পরে এসেছে। এর মধ্যে অল্পকিছু সংখ্যক ছিলেন যারা খুব কম সময়ই এমন অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্যদের আনতে পারতো। এটা এমন এক অনুষ্ঠান যেখানে প্রিয়জন আপনার আনন্দ দেখে কেঁদে ফেলতে পারে। এই অনুষ্ঠানটি ছিল কঠিন এক জয়ের। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এই জয়ের দাবিদার ছিল তারা।
যে বছর তারা কর্মসূচি শুরু করে তখন থেকে তাদের প্রতিজন ন্যূনতম পক্ষে জিইডি অর্জন করে এবং চাকরির পথ তৈরি করে নেয়। তারা সবাই সমাজসেবায় কাজ করেছে। এর জন্য মাসে অন্তত দুশো ঘণ্টা তাদের কাজ করতে হয়েছে। এদের প্রত্যেকের পিতা তার সন্তানের ভরণপোষণের জন্য বড় রকমের খরচ বহন করেছেন। তারা সবাই ছিলেন মাদকমুক্ত। তারা প্রমাণ করেছিলেন তারা এটা করতে পারেন এবং এটাই করা উচিত।
তাদের এই প্রচেষ্টা এবং সফলতার ফলে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছি। যারা ডিপ্লোমা অর্জন করেছে তাদের বিষয়ে একজন বর্তমান বিচারপতি কর্তৃক সাফাই রেকর্ড রাখার ব্যবস্থাও ছিল।
গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে বিচারকগণ ছাড়াও আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সান ফ্রান্সিসকোর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বছর সমাজসেবা দেয়া জন ডিয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বিচারক থেলটন হ্যান্ডার সন। এই থেলটন হ্যান্ডারসন হলেন নাগরিক অধিকার নিয়ে লড়াইয়ের এক আইকন। ১৯৬৩ সালে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের নিজের গাড়িটি ভেঙে যায়। এ সময় তিনি যাতে সেলমা যেতে পারেন এ জন্য তাকে থেলটন নিজের গাড়িটি ধার দেন।
ব্যাক অন ট্র্যাক কর্মসূচি খুব দ্রুতই সফল হয়। দু’বছর পর ব্যাক অন ট্র্যাকের গ্রাজুয়েটদের শতকরা মাত্র দশভাগ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছিল। একই রকমের অপরাধের অভিযোগ শতকরা পঞ্চাশ ভাগের বিরুদ্ধে রয়েছে। এর ফলে আয়করদাতাদের অর্থ যথাযথভাবে এবং কার্যকরভাবে ব্যবহার হয়েছে। আমাদের কর্মসূচিতে প্রতিজন অংশগ্রহণকারীর পেছনে খরচ হয়েছে পাঁচ ডলার। তূলনামূলকভাবে একটি ঠুনকো মামলায় বিচার করার ক্ষেত্রে খরচ হয় দশ হাজার ডলার। অন্যান্য ক্ষেত্রে কোনো অপরাধীকে জেলে রাখতে বছরে খরচ হয় চল্লিশ হাজার ডলার বা তারও বেশি।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের জাতীয়ভিত্তিক নীতি প্রণয়নে কোনো দক্ষতা ছিল না। তাদের আওতার বাইরে কিছুই করণীয় ছিল না। কিন্তু তাদেরও ভালো কিছু করার আইডিয়া ছিল। আর তা যত ছোটই হোক তারা তা করতে পারতো এবং অন্যেরা তা অনুসরণও করতে পারে। ‘ব্যাক অন ট্র্যাক’ সৃষ্টির পেছনে এটাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা তা প্রতিটি রাজ্যের নেতাদের দেখাতাম যে আমাদের নেয়া উদ্যোগ কীভাবে কাজ করছে। ওবামা প্রশাসনের আইন মন্ত্রণালয় যখন ‘ব্যাক অন ট্র্যাককে’ একটি মডেল কর্মসূচি হিসেবে স্বীকৃতি দিলো তখন আমরা সবিশেষ আনন্দিত হয়েছিলাম।
আমি যখন অ্যাটর্নি জেনারেল পদে কাজ করছি তখন তা বিভিন্ন রাজ্যে এই কর্মসূচি সম্প্রসারণেও কাজ করেছি। আমরা লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টি শেরিফ ডিপার্টমেন্টের সহ অংশীদারিত্বে সৃষ্টি করেছি ‘ব্যাক অন ট্র্যাক লস অ্যাঞ্জেলস’। এটি ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে বড় কারা নীতিমালা।
একদিনের কথা আমার মনে আছে। যেদিন আমি আমার দুজন বিশেষ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সাই এবং ড্যানিয়েল সুভকে সঙ্গে নিয়ে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের একটি গ্রুপ পরিদর্শনে যাই। আমরা সেখানে পৌঁছে শুনতে পারি সেখানকার একজন ব্যক্তি একটি মিউজিক্যাল গ্রুপ তৈরি করেছে আর তারা আমাকে উদ্দেশ্য করে একটি গান লিখেছে।
‘দারুণ। তাদের কি নামে ডাকা হয়?’ আমি জানতে চাইলাম। উত্তর শুনে আমি হাসলাম, ‘কন্ট্রাব্যান্ড’। তারা সত্যিই ছিল খুব সুন্দর। এর মধ্যে ছিলেন একজন বয়স্ক লোক এবং অন্যজন হ্যাংলা ধরনের। হ্যাংলা গড়নের মানুষটি মাইকেল জ্যাকসনের মতো পোশাকে ছিলেন। আরো ছিলেন একজন গিটারিস্ট। তিনি নিশ্চয়ই সানতানা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। এই দলে আরো ছিলেন একজন কি-বোর্ড বাদক। যিনি ঈগলের গান বাজাচ্ছিলেন। ব্যাক অন ট্র্যাক গানটি তারা বাজানো শুরু করলো। সমস্বরে তারা গাইছিল ‘আই অ্যাম ব্যাক অন ট্র্যাক, অ্যান্ড আই অ্যাম নট গোয়িং ব্যাক।’
আমরা সকলেই করতালি দিয়ে তাদের অভিবাদন জানালাম। আমি হাসছিলাম তবে আমার চোখ ভিজে গিয়েছিল কান্নায়। আমার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল তাদের আন্তরিকতা দেখে। আমি একইরকমের আন্তরিকতা দেখতে চেয়েছিলাম অন্যদের মধ্যেও। সেখানে অসম্ভবকে সম্ভব করার সত্যিকার সৌন্দর্য দেখতে পেয়েছিলাম।
আমি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি থাকার সময় যখনই ‘ব্যাক অন ট্র্যাক’ গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান হয়েছে তখন এটা নিশ্চিত করেছি যে, বর্তমান কর্মসূচিতে যারা আছে তারা যেন উপস্থিত থেকে দেখতে পাই তাদের ভবিষ্যৎ কি? এসব অনুষ্ঠানে যখনই আমি বক্তব্য রেখেছি তখনই আমি বলেছি, আমি সত্য বলতে জানি। আর তা হলো আমাদের চেয়ে তাদের ওপরই এ কর্মসূচি বেশি নির্ভরশীল। এই অর্জন তাদের জন্য এবং আমি এটা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেছি তারা এ বিষয়টি যেন বুঝতে পারে। আমি এটা তাদেরকে আরো বুঝাতে চেষ্টা করেছি যে, বিষয়টি তাদের থেকেও অনেক বড়। আমি তাদেরকে বলতাম মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা আপনাকে দেখছে। যখন তারা আপনার সফলতা দেখবে তখন তারা ভাববে আমরাও তো এটা করতে পারি। বাড়িতে আমাদেরও এটা করার চেষ্টা করা উচিত। বিশেষ কারও সফলতার কথা জেনে তাতে আপনাদের উৎসাহিত হওয়া উচিত। যেখানে কেউ একজন আপনার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে যা দেশের কোথাও আপনার এর আগে দেখা হয়নি।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন