দেশের সংবাদ ফিচার্ড

ছেলেদের চুরির দায়ে দুই মাকে নাকে খত দিলেন বিএনপি নেতা

mayeder-nake-khoto

ফেনীতে দুই কিশোরের কবুতর ও মুরগি চুরির অপরাধে গ্রাম্যসালিশি বৈঠকে বিএনপি নেতার নির্দেশে জনসম্মুখে নাকে খত দিতে বাধ্য করলো দুই মাকে। ফেনী সদর উপজেলার পাঁছগাছিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুর নেতৃত্বে এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে।

সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। রোববার বিকেলে অভিযুক্ত বিএনপির নেতার সকল পদ স্থগিত করেছে উপজেলা বিএনপি।

প্রত্যক্ষদর্শী, নির্যাতিত নারী, স্থানীয় সূত্র জানায়, ফেনী সদর উপজেলার পাঁছগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের খালুর দোকান এলাকায় গত ১লা মে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রাম্যসালিশি বৈঠক বসে। সালিশে আশপাশের চার এলাকার মানুষকে ডাকা হয়। এসময় কবুতর ও মুরগির মালিক জাহাঙ্গীর তার প্রাণী চুরির বিষয়টি সালিশদারদের অবগত করেন। শালিসের পূর্বে অভিযুক্ত কিশোরদের মারধর করে পুলিশে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা শুনতে পেয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান কিশোররা। রাতে শালিসে কিশোরদের না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে দুই কিশোরের মায়েদের ডেকে আনা হয়। সবার সামনে তাদের নানাভাবে হেনস্তা করে নাকে খত দেয়ান ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলু।

সালিশের ১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রোববার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল সেই ভিডিওতে দেখা যায়, কবুতর ও মুরগি চুরির অপবাদে দুই কিশোরের মা দেরকে দোষী সাব্যস্ত করায় নাকে খত দিচ্ছেন। সালিশি বৈঠকের সামনে মাটিতে লাঠি দিয়ে দাগ দেন দেলোয়ার হোসেন দেলু। এ সময় সালিশি বৈঠকে উপস্থিত চার এলাকার মানুষের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে প্রকাশ্যে নাকে খত দেন দুই মা। এসময় হেনস্তা হওয়া দুই মায়ের স্বজনারা এমন ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। তবে বিএনপি নেতার এমন কর্মকান্ডে তাৎক্ষণিক মুখ খুলতে সাহস পাননি কেউ।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলু নাকে খত দেওয়ার বিষয়ে বলেন, অভিযুক্ত কিশোরদের না পাওয়ায় পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এমন ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।

ফেনী জজ আদালতে অতিরিক্ত জেনারেল প্রসিকিউটর (এজিপি) ও ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি রহিমা খাতুন হেলপী বলেন, সালিশি বৈঠকের নামে জনসম্মুখে এমন নির্যাতন অপরাধযোগ্য। নারীদের প্রতি এমন ধরনের জঘন্য নির্যাতনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কারো নেই। কারো প্রতি কোনো অভিযোগ থাকলে আইনের দ্বারস্থ হতে পারতো।

এদিকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুর এমন ঘটনায় বিব্রত বিএনপির নেতৃবৃন্দ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ।
ফেনী সদর উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ফজলুর রহমান বকুল ও সদস্য সচিব আমান উদ্দিন কায়সার সাব্বির স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুর বিএনপির সকল পর্যায়ে পদ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান বলেন, সালিশ বিচারে দুই মাকে নাকে খত দেওয়ার বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। বিয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্র: মানবজমিন

এফএইচ/বিডি
সংবাদটি শেয়ার করুন