সাহিত্য ও কবিতা

প্রিয় পদরেখা |||| পুলক বড়ুয়া


পুলক বড়ুয়া

প্রিয় পদরেখা


আমার বাবার একটি বাড়ি আছে
ঠিকানা দরকার নেই

ওখানে এখন কেউ আমাদের খুঁজতে যায় না,
              এমন কি ডাকপিওনও না;
আমাদের বাড়ির সঙ্গে কারও কোনো যোগাযোগ নেই;
            এমন কি ডাকযোগাযোগও না—

ওখানে কেউ থাকে না বললে ভুল হবে;
                     বাড়ি থাকে,
তার কাছে আমাদের থাকতে ইচ্ছে হয়
কিছুতে আসতে ইচ্ছে করে না
বাড়িকে দ্যাখলে ভালো লাগে

আমার বাবার প্রতি মুহূর্তের যত্নে
আমার মায়ের কষ্টের দামে
তিলে তিলে গড়া এই প্রিয় বাড়ি

একদিন গভীর রাতে ঘোর-লাগা অন্ধকারে
আশাজাগানিয়া সোহাগমাখা-স্বরে মা শুধু
অশেষ  উচ্চারণ করেছিলেন
                ‘আমি বাড়ি যাব
                 ঘরের দুয়ারে বসে থাকব’

আমি অসম্ভব জেনেও
প্রবোধ দিয়ে বলেছিলাম, এখন রাত্রি তো …
শেষবিন্দুর মতো—শেষদিকে—তাঁর শেষ ইচ্ছের
সেই রাত রাতই থেকে গেল
এ বাড়িতে আর তার সকাল দেখা হল না
এক বেহুঁশ নাগরিক রাত্রি তার আততায়ী

ভালোলাগা ভালোলাগাকে ভালোবাসে

তিনি আমাকে বলেছিলেন, তোর বাবাকে কষ্ট দিস না
আমার কাছে বাবাকে বাড়ি মনে হয়,
আমার কাছে এই বাড়িকে আমার মায়ের নাড়ি মনে হয়

এই বাড়িটিকে নিজের বুকে আগলে রেখেছিলেন
                  আমার মা কতভাবে
এই বাড়ি সারাজীবন আগলে রেখেছিলেন
                  আমার বাবা কতভাবে

এখন পিতৃমাতৃহীন সংসারের মতোন
এখন এতিম সন্তানের মতোন
শূন্য, একাকী সে বসে বসে ঝিমোয়, কাঁদে—কার জন্যে

অথচ একদা—
              এখনো যেখানে পৃথিবীর মতোন
                              প্রতিদিন সূর্য ওঠে
আকাশে চাঁদ জাগে, নক্ষত্র আসে, নামে
যার ভিটেমাটি উঠোন আমার বড়ো প্রিয় কুহক;

সেখানে আমার সবচেয়ে প্রিয়
             তাদের
                             দুজোড়া
                                          পদচুম্বন—

        পদরেখাগুলি,
        পদধূলিগুলি ।

 


সংবাদটি শেয়ার করুন