দেশের সংবাদ ফিচার্ড

রাজধানী ঢাকায় চলছে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব

ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ছয় জেলায় আরও দুইজনসহ এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকায় চলছে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে প্রাণহানি বেড়ে ১২

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজধানী  ঢাকায় সোমবার (২৭ মে) সকালই থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিকেলে ঘূর্ণিঝড় রেমাল প্রবেশ করে রাজধানীতে। এরপরই বিভিন্ন জায়গায় চলতে থাকে তাণ্ডব। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন পর্যন্ত ১০ জন নিহতের ঘটনাও ঘটেছে।

এদিকে, টানা বৃষ্টিতে এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে মানুষের চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবারও এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে রাজধানীর উত্তরার জসীমউদ্‌দীন সড়কে একটি গাছ উপড়ে প্রাইভেট কারের ওপর পড়েছে। গ্রিন রোডে আড়াআড়িভাবে গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়েছে গেছে। এছাড়া, রাজধানীর আরো বিভিন্ন স্থানে ‘রেমাল’ এর তাণ্ডবে গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। পানিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় তীব্র জানযটেরও সৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বিকেলে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল রবিবার রাতে উপকূলে আঘাত হানার পর সেটি শক্তি হারিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। সেটি এখন স্থল নিম্নচাপ হিসেবে যশোরে অবস্থান করছে। এর একটি অংশ ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের ওপরে অবস্থান করছে। আর তাতেই  ঢাকায় দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আজ সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত  ঢাকায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মৌসুমে ঢাকায় এটাই সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বেগে দমকা হাওয়া বয়ে গেছে আজ সকাল ছয়টার দিকে, ঘণ্টায় ৫৯ কিলোমিটার।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. শামীম আহসান বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি স্থল নিম্নচাপ হিসেবে আগামীকালের পর সিলেটের ওপর দিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবে। এটি ওপরে উঠে এবং এর প্রভাবে উজানে ভারতের আসাম ও মিজোরামে বৃষ্টি ঝরবে।

ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল রবিবার রাত আটটার দিকে মোংলার দক্ষিণ–পশ্চিমের পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এরপর দেশে সবচেয়ে বেশি গতিতে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে গেছে দিবাগত রাত দেড়টা থেকে দুইটা পর্যন্ত পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার। -জনকন্ঠ
সড়কে একটি গাছ উপড়ে প্রাইভেট কারের ওপর পড়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে প্রাণহানি বেড়ে ১২

ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ছয় জেলায় আরও দুইজনসহ এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এসব জেলা হলো: খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রাম।

রোববার (২৬ মে) থেকে সোমবার (২৭ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ উপকূলীয় এলাকা। ঘরবাড়ি ভেঙে বিধ্বস্ত জনপদ। ৫ থেকে ৬ ফুট জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। গাছপালা উপড়ে পড়ে বিভিন্ন জেলায় বন্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা।

ভোলা: ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে গাছ ও ঘরচাপায় নারী ও শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোররাতের দিকে লালমোহন, দৌলতখান ও বোরহান উদ্দিন উপজেলায় তাদের মৃত্যু হয়।

লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাহবুব উল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ঘরের নিচে চাপা পড়ে মনেজা খাতুন নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মনেজা খাতুন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এ সময় তার স্বামী ও ৫-৭ বছর বয়সি নাতিনও তার সঙ্গে একই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ঝড়ের সময় তার স্বামী ও ছোট নাতিন বের হতে পারলেও মনেজা ঘরের নিচে চাপা পড়েন। পরে প্রতিবেশীরা গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেন।

দৌলতখান উপজেলায় ঝড়ের মধ্যে ঘর চাপা পড়ে মাইসা নামের একজন মারা গেছে বলে দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সত্য রঞ্জন খাসকেল জানান। এছাড়া বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন ফকির বলেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে জাকির নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে দ্বীপজেলা ভোলায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

খুলনা: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও বৃষ্টিতে গাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে লালচাঁদ মোড়ল নামে এক যুবক মারা গেছেন। রোববার রাতে উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের গাওঘরা গরিয়ারডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

সুরখালী ইউপির চেয়ারম্যান এস কে জাকির হোসেন বলেন, ঝড়ের রাতে নিজের ঘরে শুয়ে ছিলেন লালচাঁদ। ঘরের পাশে একটা বড় জামগাছ ছিল। ঘরের অবস্থা খুব বেশি ভালো ছিল না। ঝড়ে জামগাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে। সোমবার সকালে লোকজন গিয়ে গাছ কেটে মৃত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল হুসেইন খাঁন বলেন, রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন লাল চাঁদ মোড়ল। পরে রাতেই তিনি বাড়ি ফিরে যান। বাড়ি গেলে গাছচাপায় তিনি মারা যান।

বরিশাল: ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে দেয়াল ধসে ও গাছের ডাল ভেঙে পড়ে জেলায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম জানান, রোববার (২৬ মে) রাতে ও সোমবার (২৭ মে) বরিশাল নগরের রুপাতলীতে দেয়াল ধসে দুজনের মৃত্যু হয় এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ জানায়, রোববার থেকে চলমান ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন লিলি পাম্পের দক্ষিণ পাশের একটি বিল্ডিংয়ের ৪র্থ তলার দেয়াল ধসে পড়ে লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান (৫৫) ও মোকসুদুলের মৃত্যু হয়। এ সময় সাকিব (২০) নামে এক যুবক আহত হন। তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। এদিকে বাকেরগঞ্জ উপজেলায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।

অপরদিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে গোটা বরিশাল বিভাগে লন্ডভন্ড হয়েছে অসংখ্য গাছপালা। শহর ও গ্রাম মিলিয়ে পানিবন্দি আছেন অনেক মানুষ। ফসলি জমি, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সাতক্ষীরা: শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকত মোড়ল (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

মৃতের ভাতিজা নুর মোহাম্মদ জানান, বিকেলের পর থেকে প্রচণ্ড ঝড় ও নদীতে তুফান উঠলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। চাচা শওকত মোড়ল নাপিতখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য জামাকাপড়সহ স্ত্রীকে নিয়ে বের হন। বাসা থেকে বাঁধের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে মারা যান তিনি। মরদেহ এখন বাসায় রয়েছে।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় অসুস্থ এক বৃদ্ধ মারা গেছে বলে শুনেছি।’

পটুয়াখালী: কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল থেকে ফুপু ও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে মো. শরীফ (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৬ মে) দুপুরে ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে দুমকির নলদোয়ানি গ্রামে ঘরের ওপর গাছ পড়ে বৃদ্ধ জয়নাল হাওলাদারের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, বাউফলের নাজিরপুরে পরিত্যক্ত ঘরে গাছ পড়ে করিম নামের আরেক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীফের ফুপু মাতোয়ারা বেগম কাউয়ারচর এলাকায় বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিলেন। দুপুর ১টার দিকে অনন্তপাড়া থেকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুপাকে নিয়ে বোন এবং ফুপুকে উদ্ধার করতে যান। এ সময় সমুদ্রের পানিতে কাউয়ারচর এলাকা ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে প্লাবিত ছিল। সাঁতার কেটে তারা ফুপুর ঘরে যাওয়ার সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে শরীফ হারিয়ে যান। একঘণ্টা পর ওই স্থান থেকে শরীফের মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।

মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন তালুকদার জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে নগরীতে একটি নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৭ মে) সকালে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামীর চন্দ্রনগর তালতলার জেডএ আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, সকালে কাজে যাওয়ার সময় বায়েজিদ তারা গেইট এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে ওই যুবকের ওপরে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান। মাদ্রাসার জন্য ওই ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছিল। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাতে দেয়ালটি আলগা হয়ে পড়ে যায়। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। -বাংলাদেশ জার্নাল


এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন