সন্তানের চিকিৎসার টাকা নেই, কাঁদছেন অসহায় মা
তিন বছরের জুনাইদ ইসলাম সাগর। জন্মের পর থেকে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছিল। কিন্তু হঠাৎ এক বছর আগ থেকে শারীরিক পরিবর্তন আসে ছোট্ট এই শিশুর জীবনে। ফুটফুটে সাগরের শরীর ফেঁপে ফুলে যায়। সঙ্গে বড় হতে থাকে পেট। ঠিকমতো চোখ খুলতে না পারা, সঙ্গে হাঁটা–বসা বন্ধ। দিন যত যায় বাড়তে থাকে সাগরের রোগযন্ত্রণা। এ পরিস্থিতিতে দিনমজুর মা–বাবার সংসারে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা।
হতদরিদ্র মা-বাবা অবুঝ এ শিশুকে নিয়ে বিপাকে পড়েন। যে শিশুর একসময়ে ছিল হাসিভরা মুখ। একমাত্র সন্তানকে ঘিরে সংসারে ছিল সুখ। সেই শিশুর রোগে শোকে নিরুপায় বাকপ্রতিবন্ধী দিনমজুর বাবা বিপ্লব আলী। কী করবেন? কোথায় যাবেন? তা নিয়ে চোখের পানি ফেলে দিন কাটছে। কথা বলতে গেলেই নিজের সন্তানের চিকিৎসার জন্য ভিক্ষা চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অসহায় মা জেসমিন বেগম।
সন্তানের চিকিৎসার টাকা নেই, কাঁদছেন অসহায় মা ! তাদের কে আশা দেবে, কে ভরসা দেবে। এমন কেউ কি আছে…? কারণ অসুস্থ সাগরের চিকিৎসার জন্য একশ টাকাও খরচ করার সামর্থ্য নেই বিপ্লব-জেসমিন দম্পতির। তাদের নেই নিজস্ব কোনো ঘর-বাড়ি। নেই পরিবার চালানোর মতো কোনো উপার্জনের ব্যবস্থা। বাকপ্রতিবন্ধী বিপ্লবের ঘাম ঝড়ানো শ্রমে চালের হাড়ি চুলোয় উঠে। এজন্য এক বছর ধরে শুধু অর্থাভাবে সন্তানের উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা হয় ওই শিশুর পরিবারের সঙ্গে। সেখানকার তৃতীয় তলার আট নম্বর ওয়ার্ডের শিশু কিডনি বিভাগে অসুস্থ শিশু সাগরের চিকিৎসা চলছে।
গত সোমবার (০৯ আগস্ট) চিকিৎসকের পরামর্শে ঠাকুরগাঁও থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সাগরকে রংপুরে নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন। তাদের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মিডডাঙ্গী পাইকারবস্তি গ্রামে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশু সাগর কিডনিজনিত সমস্যা, প্রসাবের পথে ইনফেকশন, রক্তে ভাইরাস ও অ্যালার্জি রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘমেয়াদী ও উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। বর্তমানে শিশুটিকে হাসপাতালে অন্তত একমাস রেখে চিকিৎসা করাতে হবে। এরপর বাড়ি ফিরে গেলেও নিয়মিত ওষুধসেবন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এমন রোগে আক্রান্ত শিশুরা প্রায়ই অসুস্থ হতে পারে। দশ থেকে বারো বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
শিশু সাগরের মা জেসমিন বেগম জানান, গত বছরের দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে সাগর। এরপর বিভিন্ন মানুষের কাছে সাহায্য নিয়ে দিনাজপুর উত্তরা ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। এরপর হঠাৎ আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে। অর্থাভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারেননি।
সম্প্রতি রোগযন্ত্রণা বেড়ে যাওয়াতে শিশু সাগরকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পরে চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু রংপুর নিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না পরিবারটির। পরে দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে তাদের রংপুর পাঠানো হয়।
সংসারে আয়-রোজগারের বিকল্প পথ না থাকায় দিনমজুর বাবা বিপ্লব আলী সন্তানের চিকিৎসা খরচ যোগাতে পারছেন না। এজন্য সমাজের বিত্তবান ও দানশীল মানুষদের কাছে আর্থিক অসহায় চেয়ে প্রতিনিয়ত কাঁদছেন মা জেসমিন। চিকিৎসা সহায়তার আকুতি জানিয়ে সাগরের আত্মীয়রাও মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত বাড়াছেন।
শিশুটির ফুফু মামুনি আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সাগর অসুস্থ। আমার ভাইয়ের সামর্থ্য নেই চিকিৎসা করাবে। আমরাও অসহায়। মানুষের জমিতে থাকি। দিনমজুর করে সংসার চলছে। অসুস্থ সন্তানের সঠিক চিকিৎসা করানোর জন্য মানুষের সহযোগিতা খুব প্রয়োজন। সবাই যদি একটু এগিয়ে আসে সুচিকিৎসা করা সম্ভব হবে। সাগর সুস্থ হয়ে উঠবে। আমি আমার ভাতিজার জন্য সবার কাছে সহযোগিতা চাই।
শিশু সাগরের চিকিৎসার জন্য কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে তার মা জেসমিন বেগমের (০১৩০৪৮৩৮৩৪০) সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। এছাড়া শিশুটির মামাতো ভাই আলতাফুর রহমানের বিকাশ/নগদ ও রকেট নম্বরে (০১৭১৭২০০২২৩) সহায়তা করা যাবে।
# ফরহাদুজ্জামান ফারুক, ঢাকাপোস্ট
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান