বিশ্ব

করোনায় ইরানে মৃত্যুর মিছিল, খোঁড়া হচ্ছে বিশাল আকৃতির গণকবর!

করোনায় ইরানে মৃত্যুর মিছিল, খোঁড়া হচ্ছে বিশাল আকৃতির গণকবর! ।।অস্ট্রিয়ায় রেস্টুরেন্ট, বার ও দোকানপাট বন্ধের ঘোষণা ।।করোনা আতঙ্কে কানাডা ও  ফ্রান্সের সকল স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা।। মন্ত্রীর গালে চুমু, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত স্পেনের রানি

করোনা সংক্রমণে ধুঁকছে ইরান। কোভিড-১৯ জীবাণু সংক্রমণে বিশ্বের চারটি দেশ কার্যত মৃত্যু মিছিল শুরু হয়েছে। এর মধ্যে চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়া পরিস্থিতি সাময়িক সামলানো গেলেও ইরান ও ইতালিতে মৃত্যু মিছিল চলছেই।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ইরানের পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে সেখানে বিশাল-বিশাল গণকবর খোঁড়া হচ্ছে। সেই ছবি মহাকাশ থেকে ধরা পড়েছে।

শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২৯। মধ্যপ্রাচ্যের আর কোনও দেশে এতো খারাপ পরিস্থিতি এখনও হয়নি।

ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিয়ানুশ জাহানপুর জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭৫ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আপাতত দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০, ০৭৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪২৯ জনের।

পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের কাছে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য চেয়েছে দেশটি।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির অবস্থা এতোটাই শোচনীয় যে মরদেহের সৎকারের জন্য বিশাল আকারের গণকবর খোঁড়া হচ্ছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি, সেই সমস্ত গণকবর মহাকাশ থেকেও দেখা যাচ্ছে। ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন করে গণকবর খোঁড়া শুরু হয়েছে। যার আয়তন প্রায় ১০০ ইয়ার্ডস বা প্রায় ৯২ মিটার। এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পরই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। চীনের পর ইরানই যে করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, গণকবরের ছবিতে তা স্পষ্ট হয়েছে। স্পষ্ট হয়েছে দেশের মানুষের অসহায়তা আর মৃত্যুর ভয়াবহতাও। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট

অস্ট্রিয়ায় রেস্টুরেন্ট, বার ও দোকানপাট বন্ধের ঘোষণা

অস্ট্রিয়াতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১ জন মারা গেছেন। আজ ভোররাতে ভিয়েনার ফ্রান্স যোসেফ হাসপাতালে ৬৯ বছর বয়স্ক ওই ব্যক্তি মারা যান। অস্ট্রিয়াতে এই প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন রোগীর মৃত্যু হল।

অস্ট্রিয়াতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দেশটিতে সকল স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি ব্যাপক জনসমাগমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অস্ট্রিয়া সরকার।

করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। সোমবার থেকে সকল রেস্টুরেন্ট, বার এবং দোকানপাট বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাংক ফার্মেসি ও সুপারমার্কেট খোলা থাকবে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অস্ট্রিয়াতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২৮ জন।

করোনা আতঙ্কে কানাডা ও  ফ্রান্সের সকল স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা

করোনাভাইরাসের কারণে ফ্রান্সে গত এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ স্বাস্থ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্য দেয়া এক ভাষণে ফান্সের প্রেসিডেন্ট বৈশ্বিক করোনাভাইরাস প্রেক্ষিতে সতর্কতা মূলকভাবে দেশটির সকল ধরনের স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার এই ঘোষণা দেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার প্রেক্ষিত বর্ণনা করে দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেন, ‌এটি ফ্রান্সের এ যাবৎকালের সবচেয়ে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি।

এ ছাড়া ফরাসি প্রেসিডেন্ট দেশটির সকল ৭০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, বিনা প্রয়োজনে বাইরের কারও সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, করোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতন হতে হবে এবং এ ভাইরাস মোকাবেলায় ফ্রান্সের হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করা হবে।

দেশটির আসন্ন স্থানীয় মিউনিসিপালিটি নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া ও দেশের গণপরিবহনগুলো উন্মুক্ত থাকবে এবং সকল যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। মরণঘাতী এ ভাইরাস মোকাবেলায় প্রয়োজন হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সমন্বয় করে সমস্ত বর্ডার বন্ধ করে দেয়া হবে।

মন্ত্রীর গালে চুমু, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত স্পেনের রানি

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ইউরোপের দেশ স্পেনের রানি লেতিজিয়া। স্পেন সরকারের এক মন্ত্রীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই মন্ত্রীর সংস্পর্শে এসেই করোনায় আক্রান্ত হন রানি। কেননা, সম্প্রতি রানি লেতিজিয়া ওই মন্ত্রীর গালে চুমু খেয়েছিলেন।

এদিকে, স্পেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার এক লাফে বেড়েছে ৮০ শতাংশ। এরপর প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আরও মানুষের সংক্রমণ ঠেকাতে সোমবার থেকে দেশটির সব স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কাতালোনিয়া এবং গ্যালিসিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শনিবার থেকে বন্ধ হচ্ছে। বাকিগুলো বন্ধ হবে সোমবার থেকে। আর মাদ্রিদ ও লা রিওজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তত দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে বন্ধের এ মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে।

পর্তুগালের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও সোমবার বন্ধ হচ্ছে বলে খবর রয়েছে এবং গোটা মার্চ মাসই তা বন্ধই থাকবে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার স্পেনের ৪টি শহর অবরুদ্ধ করা হয়েছে। স্পেনে এটিই প্রথম এ ধরনের পদক্ষেপ। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের কারণে সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেয়া হবে সে বিষয় দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। সাম্প্রতিক এ পরিস্থিতিকে সুনামি আখ্যা দিয়েছেন দেশটির হোটেল ব্যবসায়ীরা। এ ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।

গেল শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে স্পেনের মন্ত্রী আইরিন মনতেরোর সঙ্গে করমর্দন করেছিলেন রানি লেতিজিয়া। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে ওই অনুষ্ঠানে রানি ও মন্ত্রী একে অপরের গালে ঐতিহ্যবাহী ‘স্প্যানিশ কিস’ দিচ্ছেন।

বৃহস্পিতিবার রাত থেকে যেভাবে চারটি শহর অবরুদ্ধ করেছে স্পেন, এরআগে ইতালিও একই ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছিল। আপাতত ওই চার শহরে বাইরের কেউ ঢুকতে পারছেন না, আবার ভেতর থেকে কেউ বের হতে পারছেন না। অবশ্য বিশেষ ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতি নিয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত শহর থেকে বের হওয়া যাবে। এ চার শহরই বার্সেলোনা প্রদেশের ভেতর পড়ে। শহর চারটিতে প্রায় ৭৬ হাজার মানুষের বাস। সূত্র : ডেইলি মেইল

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − one =