বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী

শুভ জন্মদিন জাতির পিতা, তোমাকে ভালোবাসে বাংলাদেশ

শুভ জন্মদিন জাতির পিতা, তোমাকে ভালোবাসে বাংলাদেশ

মুক্তির মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকী আজ: আলোকসজ্জা, আতশবাজির মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষের উদ্বোধন রাতে

শুভ জন্মদিন জাতির পিতা, তোমাকে ভালোবাসে বাংলাদেশ , ভালোবাসে বিশ্ব।    সেদিন ছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, মঙ্গলবার। রাত ৮টার দিকে মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে আসেন ইতিহাসের মহানায়ক; বাঙালি ও বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ বাংলার সেই অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জন্মশতবার্ষিকী’।

ইতিহাসের খরস্রোতায় ১৯২০ সালের সেদিনের মতো শত বছর পর আজকের দিনটিও মঙ্গলবার। দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে বর্ণিল আলোকসজ্জা, আতশবাজি আর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ‘বিশ্ববন্ধুর’ জন্মদিন উদযাপন করবে পুরো জাতি।

আজ বাঙালি জাতির আনন্দে পুলকিত হওয়ার দিন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির জন্মদিনে দেশের ১৬ কোটি মানুষ বিনম্র শ্রদ্ধা, সালাম আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা জানাতে উদগ্রীব।

আজ থেকে শুরু হচ্ছে বহুল কাঙ্ক্ষিত ‘মুজিববর্ষ’। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শুরু হয়েছিল ক্ষণগণনা। গণনা শেষে আজ রাত ৮টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উদ্বোধন করা হবে জাতির পিতার ‘জন্মশতবার্ষিকী’। অনুষ্ঠানটি দেশের সব গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সম্প্রচার করা হবে। শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে। এরপর জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাণী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার অনুভূতি প্রকাশ ও তার লেখা কবিতা প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে পাঠ, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা প্রধানদের ভিডিওবার্তা প্রচার করা হবে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনটি জাতীয় শিশু দিবস বিধায় শত শিশুর কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীতের পরিবেশনা থাকবে। শত শিল্পীর পরিবেশনায় যন্ত্রসঙ্গীত, মুজিববর্ষের থিম সং, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মকে তুলে ধরে একটি থিয়েট্রিকাল পারফরম্যান্স ও বিশ্বখ্যাত কোরিওগ্রাফার আকরাম খানের পরিবেশনা থাকছে প্রোগ্রামে।

প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান শেষে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে পিক্সেল ম্যাপিংয়ের লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে। সারা দেশেও আলোকসজ্জা, আতশবাজি আর বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বছরব্যাপী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল।

কিন্তু ‘করোনাভাইরাস’ বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করায় এ সংক্রান্ত সব কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে- জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে দেড় লাখ মানুষ নিয়ে মুজিববর্ষের বর্ণিল উদ্বোধনী আয়োজন, টুঙ্গিপাড়ার শিশুমেলা ও আলোচনা সভা। জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিশ্বনেতাদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। তাও বাতিল করা হয়েছে।

এছাড়া সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ঘোষিত যেসব কর্মসূচিতে লোকসমাগম হবে এমন অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে আজ সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা চিঠি পাঠের অনুষ্ঠানও ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। আজ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এছাড়া বড় আকারে আনন্দ আয়োজন, সেবা ও উন্নয়নের বিষয়গুলো, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা, বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন, গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণ, বাংলা ও ইংরেজিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জন্মশতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের মতো কর্মসূচিগুলো সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।

তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুন। তাদের চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়।

দিবসটি উপলক্ষে আজ সব সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে থাকছে নানা আয়োজন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

সকাল ১০টায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া যাবেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মহান এ নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০-২১ সালকে মুজিববর্ষ ঘোষণা করে সরকার। মুজিববর্ষ ঘিরে এরই মধ্যে মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

জাঁকজমকপূর্ণভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদযাপনে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ১০২ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি।’ অপরটি ৬১ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।’ কমিটি দুটি বছরব্যাপী কর্মসূচি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে কাজ করবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গিপাড়ার চিরায়ত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আবেগ-অনুভূতি শিশুকাল থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করত। শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজজীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা পীড়ন দেখে চরমভাবে ব্যথিত হতেন। গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সম্প্রীতির সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িক চেতনার।

শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা, যিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। জনসাধারণের কাছে তিনি ‘শেখ মুজিব’ ও ‘শেখ সাহেব’ হিসেবে বেশি পরিচিত এবং তার উপাধি ‘বঙ্গবন্ধু’।

শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি ও বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে কালজয়ী নাম। বিশ্ববাঙালির গর্ব- মৃত্যুঞ্জয়ী মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।

তিনি বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটে বেড়িয়ে বাঙালির কাছে পৌঁছে দেন পরাধীনতার শিকল ভাঙার মন্ত্র। সে মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে স্বাধীন দেশে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল। তার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে।

সেদিনের টুঙ্গিপাড়ার অজপাড়াগাঁয় জন্ম নেয়া ‘খোকা’ ডাকনামের সেই শিশুটি পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারি। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণেই পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে- সমাজ ও রাজনীতি ‘নেতা’ বা ‘নায়ক’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে নিতে পারেন অনেকেই। মাঝে মাঝে অসাধারণ ক্যারিশমাসম্পন্নরা ‘বড় নেতা’ অথবা ‘মহানায়কের’ আখ্যায়ও ভূষিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। তবে তারা প্রায় সবাই সমসাময়িক কালের নেতা, চলতি পারিপার্শ্বিকতার প্রেক্ষাপটের নায়ক।

কিন্তু ‘ইতিহাসের নায়ক’ হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ সব কালে, সব যুগে সৃষ্টি হয় না। যুগ-যুগান্তরের পরিক্রমায় হাতেগোনা এক-আধজনই শুধু ‘ইতিহাসের নায়ক’ হয়ে উঠতে পারেন। ইতিহাস তার আপন তাগিদেই ‘নায়কের’ উদ্ভব ঘটায়, আর সেই ‘নায়ক’ই হয়ে ওঠেন ইতিহাস রচনার প্রধান কারিগর ও স্থপতি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন তেমনই একজন কালজয়ী পুরুষ।

কিশোর বয়সেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কৈশোরে তার রাজনীতির দীক্ষাগুরু ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ম্যাট্রিকুলেশন পাসের পর কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা একে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন।

ওই সময় থেকেই নিজেকে ছাত্র-যুবনেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন, যোগ দেন আওয়ামী মুসলিম লীগে, যা পরে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে আওয়ামী লীগ নাম নেয়।

গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে শেখ মুজিব প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর শুরু হয় তার আজীবন সংগ্রামীর অভিযাত্রা। তিনি তার ব্যক্তিজীবনের এক-চতুর্থাংশ সময় (১২ বছর ১০ মাস) কারাগারে বন্দি ছিলেন।

ইতিহাসের পাতায় পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পরপরই ঢাকায় ফিরে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করেন শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৪৮ থেকে ১৯৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৮-এর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬ দফা, স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারারুদ্ধ হন তিনি।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন বাঙালির অদ্বিতীয় নেতা। ১৯৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে জানায় অকুণ্ঠ সমর্থন।

১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর নাম চিরভাস্বর। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে তার ঐতিহাসিক ভাষণ- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’কে ইউনেস্কো বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে।

এরপর তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় বঙ্গবন্ধুকে সেখানে কারাবন্দি করে রাখা হয়। সে সময় প্রহসনের বিচার করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্যোগও নেয় পাকিস্তানি শাসকরা। যদিও পরে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন। এরপর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে মনোনিবেশ করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে বিশ্বাসঘাতকদের নির্মম বুলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুর বড় কন্যা শেখ হাসিনা বর্তমানে দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী খুনি স্বৈরশাসকরা স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবধারার বিকৃত ইতিহাস ও মূল্যবোধের বিস্তার ঘটানোর পাঁয়তারা চালায়। খুনিরা ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক-স্বৈরাচার তিন দশক ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ভুল ইতিহাস শেখানোর অপচেষ্টা চালায়। খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তার চেতনা ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির দূত- স্বাধীনতা ও শান্তির প্রতীক।

বাংলা ও বাঙালি যত দিন থাকবে, এ পৃথিবী যত দিন থাকবে, পৃথিবীর ইতিহাস যত দিন থাকবে তিনি একইভাবে প্রোজ্জ্বলিত হবেন প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে, প্রতিটি মুক্তিকামী, শান্তিকামী, মানবতাবাদীর হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে- পথ দেখাবে। বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ মহাপুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে।

 

 



 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 5 =