মুক্তিযুদ্ধ

২৬ মার্চ, বাংলাদেশের ৪৯তম মহান স্বাধীনতা দিবস

২৬ মার্চ

 

২৬ মার্চ, বাংলাদেশের ৪৯তম মহান স্বাধীনতা দিবস । আজ ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের ৪৯তম মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে অনন্যসাধারণ একটি দিন। বীরত্ব ও সৎসাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় এ দিনটি।

 

ব্রিটিশ শাসনাধীন দুইশ বছরের উপনিবেশিক শোষণ ও শাসন এবং পাকিস্তানী দুঃশাসনের ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজেকে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়ার দিন হল গৌরবউজজল ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস । বিশ্বাসঘাতক ও নরঘাতক  কাপুরুষ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তাদের সব মূল্যবোধ ও ন্যায়নীতি লঙ্ঘন করে মধ্যরাতে গণহত্যার নিষ্ঠুরতম নীলনক্সা ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ এর নামে তাদের ভয়ংকর মৃত্যুক্ষুধা মেটাতে  দানবীয় নিষ্ঠুরতায় ঝাঁপিয়ে পড়লো নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালীর ওপর । পাকিস্তানী নরঘাতকরা অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে পিলখানা, ইপিআর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রাবাস ও শিক্ষকদের বাসস্থানে হামলা চালায় এবং বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে ভয়ংকর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। সর্বএই এরা চালালো বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তান্ডব চালিয়েছিল রাস্তায় রাস্তায় ।

 

সেদিন ‘যার যা আছে তাই নিয়ে’ বাংলাদেশের কৃষক,শ্রমিক ও ছাএ জনতা আমাদের প্রানপিয় মাতৃভূমিকে রক্ষা করার বলিষঠ চেতনায় উদবুদধ হয়ে স্বা‌ধীনতার মশাল ও অস্ত্র হাতে নিয়ে রক্তলিপ্সু পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার আগেই মহান স্বাধীনতার মহান স্হপতি  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তৎকালীন ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন । স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার এই সময়টি ২৬ মার্চ জাতি নিবিড় আবেগের সঙ্গে স্মরণ করে । কিন্তু এবার এমন এক দুঃসময়ে ৪৯তম স্বাধীনতা দিবস সামনে এল, যখন বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশ, ভারত ক্যানাডা, আমেরিকা,ইউরোপসহ সারা বিশ্ব আক্রান্ত, আতংকিত ও উৎকন্ঠিত । এই কারণে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোসহ লোক সমাগমের সব জাতীয় কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে । ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও স্বাধীনতা দিবসের সব কর্মসূচি বাতিল করেছে । প্রবাসেও স্বাধীনতা দিবসের সকল কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে । ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার আগেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ইংরেজীতে স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেটির বাংলা অনুবাদ হলো ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন, বাংলাদেশের জনগণ তোমরা যে যেখানে আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্যবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি । চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে । সেই সঙ্গে তিনি বাংলার যে ভাষণটি দিয়েছিলেন সেটি হলো ‘পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিয়ার ঘঁাটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে । আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি ।’ এর আগে জাতির পিতা ৭ মার্চে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) দাঁড়িয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’।   বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ৭ই মার্চ বাংগালী জাতির প্রতি  ভাষণের মাধ্যমে  স্বাধীনতার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন । আর স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলো ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ বাংলার গণমানুষের সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে । নিজস্ব রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তথা চূড়ান্ত লড়াই ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ থেকেই শুরু হয় । ২৬ মার্চ হল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস । ভারতের সাহায্য ও সহযোগীতায় দীর্ঘ নয় মাসের নিরন্তর মুক্তির লড়াইয়ের পর বিজয়ী হয় বাঙালী জাতি। অবশেষে ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন ও দুলক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা চূড়ান্ত বিজয় সূচিত হলো একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর। আমার প্রাণপ্রিয় পিতাও মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ হয়েছিলেন ।আমরা ছিনিয়ে এনেছি আমাদের মহান স্বাধীনতা, আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ । একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

আমাদের ৪৯তম মহান স্বাধীনতা দিবসে আসুন আমরা শপথ করি, যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, জীবনপণ শপথ নিয়েছিল, ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা -তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকার সহ আমাদের সবার । মহান স্বাধীনতার ৪৯তম বার্ষিকীতে আমাদের আরও শপথ হউক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ করা, ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাপ্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, সর্বোপরি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ,  আমাদের বীরগাথা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে নূতন প্রজন্মকে জানানোর দায়বদ্ধতা আমার আপনার অর্থাৎ আমাদের সকলের  । বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপন করছি মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের প্রতি । আপনাদের সকলের প্রতি রইলো ৪৯তম মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা ।

বিদ্যুৎ ভৌমিক, কলামিষ্ট, লেখক ও সিবিএনএ’এর উপদেষ্টা

মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা, ২৬ মার্চ, ২০২০

 

সি/এসএস



 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 2 =