কানাডার সংবাদ

আমস্টারডাম থেকে এথেন্স, ট্রেন যোগে উন্নত জীবনের সন্ধানে !!

আমস্টারডাম-থেকে-এথেন্স

প্রবাসী জীবন ! আমস্টারডাম থেকে এথেন্স, ট্রেন যোগে উন্নত জীবনের সন্ধানে !!

পর্ব – এক

১৯৮২ সালের জুন মাসের প্রথম দিকে  আমি আর আমার সঙ্গী সিরাজ ঢাকা থেকে ফ্লাই করি আমস্টারডামের উদ্দেশ্যে, ৮২ তে জার্মান থেকে চলে যাবার পর, আবার প্রবাসে পাড়ি জমাই। ৮২-এর জুনে আমর পাসপোর্টে  ভিসা ছিল ইতালি, ফ্রান্স ও হল্যান্ডের! উদ্দেশ্য  ছিল গ্রীসে গিয়ে আবার জাহাজে উঠবো, তাই হল্যান্ড থেকে গ্রীসের ভিসা সংগ্রহ করি। দু’জনই ভিসা পাই। সিরাজ ছিল নতুন,ওকে আমার গাইড করতে হয়েছিল!

আমরা দুজনে ট্রেনের টিকেট করি আমস্টারডাম থেকে এথেন্স । এটা ছিল বলতে গেলে পুরো ইউরোপ যা ইষ্ট টু ওয়েষ্ট ! মজার ব্যাপার ট্রেন যাবে জার্মানির একটি ছোট শহর Stuttgart এর উপর দিয়ে, এক সময় এ শহরে আমি ছিলাম পাঁচ বছর, তখন আমার ভাই ছিল Stuttgart শহরে। দেশে থেকে আমার মা, ভাইয়ের জন্য খেজুর গুড়ের মুড়ি খিলি মিঠাই  আর নারিকেলের নাড়ু দিয়েছিল, এথেন্স যাবার পথে ট্রেন Stuttgart আধাঘন্টাথামবে, মনটা আনন্দে ভরে গেল, মার দেওয়া এ নাড়ু মুড়ি মিঠাই ভাইকে দিতে পারব, সে কি আনন্দ! ট্রেনে উঠার আগে ভাইকে ফোনে বলে দিয়েছিলাম এত টার সময় ট্রেন Stuttgart পৌঁছবে। স্টেশনে মাত্র ৩০ মিনিট ট্রেনটি থাকবে। সত্যি এটা ছিলো একটি মিরাক্যাল ঘটনা, সেদিন আজকের মতো সেল ফোন ছিলোনা যে সহজেই স্টেশনের কে কোথায় অবস্থানটা জেনে নেওয়া যাবে! ট্রেন থামলো, বিরাট লম্বা ট্রেন, অনেক বগী ছিল ট্রেনে। ট্রেন থেকে নেমে গেলাম, দুজন ভাইকেকে খুঁজতে, অলৌকিকভাবে খুব সহজেই পেয়ে গেলাম, বুকে বুক মিলালাম, মায়ের দেওয়া নাড়ুর প্যাকেটটা দিলাম। মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য ভাইকে পেয়ে বিদায় নেওয়ার সময় এলো, ভাইকে বিদায় দিয়ে ট্রেনে সিটে বসলাম, মনটা খারাপ লাগছিল, কোন কিছু করার ছিল না !

সারা রাত জার্মানির উপর দিয়ে দ্রত গতিতে আমট্রাক ট্রেন চলছে, আমরা দু’জন ঘুমিয়ে ছিলাম, ট্রেনের সব যাত্রিই তখন ঘুমে, কখন যে সকাল হয়ে এলো বুঝতেই পারিনি। ব্রেকফাস্ট আসলো, শেষ না হতে হতেই, জার্মান আর অষ্টেরিয়ার বর্ডার চেকপোষ্ট এর কাছাকাছি, দু’জন ইয়ং ট্রেনপুলিশ কে দেখতে পেলাম। আমরা একটু ঘাবরিয়ে গেলাম, আমাদের  পাসপোর্ট  চাইলো , প্রশ্ন করলো জার্মানির ভাষায় পাস, পাস! আমরা পাসপোর্ট দিলাম। হ্যাভেন জী  অষ্টেরিয়ান ভিসা? এটা জার্মানী ভাষা, আমি বলে ছিলাম  নো কাইনে ভিসা, ‘নিস ভিসা, আমাদের পাসপোর্টের পাতা উল্টাতে উল্টাতেই আমার পাসপোর্টে দেখতে পেল  জার্মান বড় করে একটা সিল লাগানো আছে। আমি যখন জার্মানী ছিলাম প্রথম আমার পাসপোর্টে ঐ ধরনের সিল মারে ! যাহোক, আমাকে জার্মানী ভাষায় জিজ্ঞাসা করেছিলো তুমি কি এখনো জার্মানী আছো না চলে গেছো?  তখন আমি বলেছিলাম ‘ইনসোগেন বিটে’, তার মানে সরি, বুঝতে পারছিনা ! ‘নো , আমি চলে গেছি, সিরাজের পাসর্পোটও দেখলো। তারা দুজন পুলিশ অফিসারই ছিলো অনেক ভদ্র !

তারপর অলমোষ্ট বর্ডারের কাছে চলে এলাম, দেখতে পেলাম আরও দুজন পুলিশ আসতেছে চেকিং করতে, ঐ কম্পাটমেন্টে শুধু আমরা দুজন ব্রাউন কালারের মানুষ ছাড়া আর সবই ছিল সাদা ইউরোপিয়ান আর অন্য দু’জন ছিল অষ্টেরিয়ান পুলিশ , ওরা যখন আমাদের নিকট আসলো জার্মানী পুলিশ আমাদের পাসপার্ট ওদের হাতে দিয়ে দিল!

ট্রেন চেকপোষ্টে থামলো, জার্মানী পুলিশ দু’টি আমাদের হ্যান্ডসেক করে বললো ‘গোটেন মরগেন’, বাই বলে বিদায় নিল, আর অষ্টেরিয়ান পুলিশ দুটি আমাদের চেকপোষ্টের একটা কামরাতে বসালো, তারপর দেখতে পেলাম ট্রেনটি ধীরগতিতে চলতে শুরু করল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেনটি দ্রত গতিতে চোখের আড়াল হয়ে গেল !

আমরা দুজন বসে রইলাম কয়েদি হয়ে মনে হলো এটাও একটা ছোট জেলখানা। একটুপর আমাদের জন্য আবার নাস্তা আসলো, সাথে কফি! শেষ করার পর বললো  ‘কমেনজি’, তারমানে হলো আস, জার্মানী আর অষ্টেরিয়ান একই ডয়েচ ভাষা, যখন আসতে বললো তখন ভেবেছিলাম এখনই বুঝি ধরে নিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিবে! কিন্তু না, এরা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্যজাতি, আমরা হলাম অসভ্য জাতি, এজন্য আমি সব সময় বলি আমরা এখনো ১০০ বছর পিছনে আছি, আমরা যতই চাপাবাজি করি আমাদের এখনো অনেক কিছু শিখার আছে এই ইউরোপিয়ানা আর আমেরিকানদের কাছ থেকে !

তারপর কি হলো  আমাদের দুজনের পাসপোর্টে অষ্টেরিয়ান তিন মাসের ভিসা দিয়ে বললো খুবই সুন্দর বিনয়ের সঙ্গে বললো, শহরে চলে যাও, সন্ধ্যায় আর একটা ট্রেন আসবে, সেই ট্রেনে  তোমরা চলে যাবে গ্রীসে। এই সুযোগে আমরা শহরে ঘুরে নির্ধারিত সময় চলে এলাম চেকপো্ষ্টে, রাতে আমাদেরকে  তাদের পরিবেশনায় খাবার খাওয়ার পর  ট্রেনে বসিয়ে দিল, আমাদের ক্রস করতে হবে চেক রিপাবলিক, যুগোস্লাভিয়া, বুলগেরিঁয়া তারপর আমরা পৌঁছবো গ্রীসের বর্ডারে , মনে নেই কত সময় লেগ ছিলো! হয়ত এ তিনটি দেশ ডিসকভার করতে আমাদের একরাত একদিন সময় লেগেছিল! আজ থেকে ৩৮ বছর আগেও ট্রেনগুলো এত আরামদায়ক ও দ্রত ছিল, আর এখনত বলার অবকাশ নেই,কত উন্নত হয়েছে বিশ্ব জীবন যাত্রা !

তারপর আমট্রাক ট্রেন যখন চলে এলো  গ্রীসের রাজধানী এথেন্সের বোর্ডারে তখন সকাল। গ্রীক ইমিগ্রেশন সব সময়ই একটু কড়া, ওরা জানে আমাদের মত ব্রাউন বা কালো রংগের মানুষরা গ্রীসে আসে জাহাজে চাকুরীর জন্য ! ট্রেনের এটাই ছিল শেষ স্টেশন।  ট্রেন থেকে নামলাম, সব যাত্রী চলে গেল , আমাদের দু’জনকে জিজ্ঞাসা করল একের পর এক প্রশ্ন! কঠিন গ্রীক ভাষায় “মালাকা “ এটা গ্রীকদের কমন ভাষা কথায় কথায় বলে “MALAKA” যদিও সেটা একটি বন্ধুত্বের খারাপ শব্দ মানে গালি।

আমাদেরকে মোটা পেটুক তার মানে ‘ক্রদ্র হলো গ্রীক ভাষায় মোটা লোকদের বলে, এক সময় গ্রীক শীপে ছিলাম মোটামোটি ভালই গ্রীক ভাষা আয়ত্বে এনছিলাম,মোটু আমারদের বললো পাসপোর্ট  দিলাম পাসপোর্ট দেখে ভিসা দেখে  রাগে বললো  কে দিয়েছে তোদের ভিসা মালাকা ?  আমি উলটো বললাম মালাকা আমাষ্টাডাম গ্রীক দুতাবাস দিয়েছে ভিসা, ও আমার কথা শুনে আমার দিকে কড়া নজরে তাকালো! আমিতো জানি, মালাকা কি, ওতো বুঝতে পারছে, তারপর আমাদের ছেড়ে দিল। ওখান থেকে আমরা আর একটা Local Train এ গ্রীসের Sea port Parious এ চলে যাই , যাবার পথে দেখে ছিলাম গ্রীসের অবাককরা সৌন্দর্য।  জার্নি ছিল ১৩/১৪ ঘন্টার।  উঁচু পাহাড়ের কাছ দিয়ে ট্রেনের রাস্তা গভীর নিচে নদী বা সাগর হবে , যদিও জার্নিটা ছিল জীবিকা অর্জনের তবুও জীবনের অভিজ্ঞতা না ভুলার মত!  ….

আমস্টারডাম থেকে এথেন্স…

চলবে….

 

রশিদ খানঃ ব্যবসায়ি ও সমাজসেবক

 

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন