Uncategorized ফিচার্ড

আলো নিভিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিলেন নাসির মাহমুদ

মাদক মামলায় নাসির মাহমুদ ও অমি রিমান্ডে

মানবপাচারে সিন্ডিকেটে অমি

আলো নিভিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিলেন নাসির মাহমুদ 

আমাকে ডিবি পুলিশ ডাকেনি, আমি নিজ থেকেই এখানে এসেছি। আমাকে কাজে ফিরতে হবে এটা এতোদিন কেউ বলেনি। কিন্তু এখানে আসার পর তারা (পুলিশ) আমাকে বলেছে, সবকিছু পেছনে ফেলে কাজে ফিরতে হবে। একইসঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করেছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারও করেছে। পুলিশ এতোটা ম্যাজিকের মতো কাজ করবে, জানা ছিল না। এখন বিশ্বাস করতে পারছি, আমি ন্যায়বিচারও পাব।’- মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার কথোপকথনের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। এ সময় ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশিদ ও গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বিকাল সাড়ে চারটার দিকে পরীমনি যান ডিবির যুগ্ম কমিশনারের কার্যালয়ে। সেখানে ঢাকা বোট ক্লাবে ঘটে যাওয়া বিষয়াদি নিয়ে আলাপ করেন তিনি। এ সময় পরীমনির সঙ্গে ছিলেন তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি এবং নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী।

পরীমনির বরাত দিয়ে ডিবির একটি সূত্র জানায়, ঘটনার রাতে বোট ক্লাবের ভেতরে পরীমনিকে মারধর করার সময় নাসির ইউ মাহমুদ বারবার লাইট বন্ধ করে দিতে বলছিলেন যেন অন্ধকারে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা যায়। তবে সেখানে উপস্থিত

বোট ক্লাবের ওয়েটাররা নাসির ইউ মাহমুদের কথা না শুনে লাইট বন্ধ করেননি। পরীমনিকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমির গলায় শার্ট পেচিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন মদ্যপ নাসির। এ সময় তুহিন সিদ্দিকী অমি নাসির ইউ মাহমুদকে নিবৃত না করে উল্টো পরিমনির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এই অমিই পরীমনিকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। পরীমনি ও জেমি পুলিশকে বলেছেন তারা এর আগে কখনো বোট ক্লাবে যাননি। তারা এও বলেছেন, ঘটনার সময় তারা সবাইকে মদ্যপ অবস্থায় দেখতে পান। অনেকটা অলৌকিকভাবেই তারা সেখান থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরেন।

ডিবি কার্যালয়ে পরীমনি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ এতোটা তাড়াতাড়ি ম্যাজিকের মতো আমাকে সহযোগিতা করবে সেটা আমি ভাবতে পারিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার একমাত্র ভরসা আইজিপিই (ড. বেনজীর আহমেদ) ছিলেন। কিন্তু সে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কাছে আইজিপির সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে বলেছিলাম। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাইনি। পরে বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলাম। আইজিপি কিন্তু বিষয়টি শোনার পরে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন মেন্টালি শক্তি পাচ্ছি। আশা করি দ্রুতই কাজে ফিরতে পারব। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য।

যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি জানার পর আইজিপি স্যার নির্দেশ দেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জন্য। আমরা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনেছি। পরীমনি আমাদের জানিয়েছে, শিল্পী সমিতি ও প্রযোজক সমিতির মাধ্যমে আইজিপির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দেখা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সংগঠন দুটি সে সুযোগ করে দেয়নি। এজন্য কিছুটা ক্ষোভ জম্মেছিল তার মধ্যে। পাশাপাশি বনানী থানার বিষয়ে জানিয়েছে, সে যখন থানায় গিয়েছিল তখন ভোর ৪টা বাজে। সে সময় থানায় ওসি ছিলেন না বলে আমাদের জানিয়েছেন। একইসঙ্গে পরীমনি বলেছেন, যারা তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন তারা যত বড় শক্তিশালী হোক যেন উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করা হয়। আমরাও আশ্বাস দিয়েছি, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। সে যত বড় শক্তিশালী হোক।

মাদক মামলায় নাসির মাহমুদ ও অমি রিমান্ডে

নায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণের চেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার আসামি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি আসামি লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা আমিন বৃষ্টির (২৪) তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ তিনজনের রিমান্ড মহিলা পুলিশের উপস্থিতিতে করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি গুলশান জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক উদয় কুমার মুল আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড আবেদনের পক্ষে এবং আসামি পক্ষে ঢাকা বার সভাপতি আব্দুল বাতেন, সেক্রেটারি খোন্দকার হযরত আলী, এ এইচ এম ইমরুল কায়সার প্রমুখ জামিনের আবেদন করেন।

এ দিকে পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সাভার মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখানো হয়েছে প্রধান অভিযুক্ত নাসির ও অমিকে। ঢাকা জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন্নাহারের আদালতে গতকাল মঙ্গলবার মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে আগামী ৮ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেন আদালত। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেনকে। তিনি জানান, আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন পাঠানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, আজ বুধবার এ রিমান্ড আবেদনের বিষয়ে শুনানি হবে।

পরীর সাথে কথা হয়নি তদন্তকারীর

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, তার সঙ্গে এ পর্যন্ত কথা হয়নি মামলার বাদী পরীমনির। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে তিনি সময়ের অপেক্ষায় আছেন বলে জানান।

পরিষ্কার করা হচ্ছে হাজতখানা

বিমানবন্দর থানায় করা মাদক মামলায় রিমান্ড শুনানি শেষে আসামিদের সাভার মডেল থানায় করা ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তদন্তকারী কর্মকর্তা। সেটি মাথায় রেখে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে থানাটির হাজতখানা।

অজ্ঞাতনামাদের খুঁজতে তদন্তে পুলিশ

সাভার মডেল থানায় পরীমনির দায়েরকৃত মামলার এজাহারে নাসির ও অমি ছাড়া অন্য চার আসামির কথা উল্লেখ করা হয়েছে ‘অজ্ঞাতনামা’ হিসেবে। তাদের কাউকে শনাক্ত করা গেছে কি না- এমন প্রশ্নে পুলিশ পরিদর্শক কামাল হোসেন বলেন, তদন্ত প্রক্রিয়া অনেকদূর গড়িয়েছে। প্রধান আসামিরা গ্রেপ্তার হয়েছে। এখন আমরা আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। আসামিদের রিমান্ডে পেলে অজ্ঞাতনামা আসামিদেরও শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে, জানান তিনি।

মানবপাচারে সিন্ডিকেটে অমি

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অমি নারী-শিশু পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা। রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনা এলাকার সিরাজ মিয়া রোডে রয়েছে তার বিশাল ট্রেনিং সেন্টার। স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারী-শিশুদের এনে সেখানে জড়ো করতেন অমি ও তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন। এভাবে মানবপাচারের মাধ্যমে কামিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ গাড়ি ছাড়াও উত্তরখানে রয়েছে অমির আলিশান রিসোর্ট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেউ কেউ তার উত্তরখানের রিসোর্টে যেতেন। দক্ষিণখানে দোবাইদায় রয়েছে দুটি ট্রেনিং সেন্টার ও রিসোর্ট। সেই রিসোর্টে তার বিদেশি সিন্ডিকেটের সদস্যদের মনোরঞ্জন করতেন। এছাড়া দুবাইয়ে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল রিসোর্ট। এলাকাবাসী অনেক অপকর্মের বিষয়ে জানলেও প্রতিবাদের সাহস পেতেন না। দুয়েকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিয়ে হয়রানি করতেন অমি। তার হাত থেকে রেহাই পাননি বাসার গৃহকর্মীও। এ নিয়ে পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় অমির। সবকিছু আড়াল করতে অমি ও তার বাবা তাদের সম্পদের একটি বড় অংশ টাঙ্গাইলে স্থানান্তর করেছেন, বলছেন স্থানীয়রা।

গত ৯ জুন রাতে পরীমনিকে ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন এ চিত্রনায়িকা। গত রবিবার রাতে প্রথমে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেন। পরে সাভার মডেল থানায় মামলা করেন পরীমনি। এর পর মামলার এজাহারে উল্লিখিত প্রধান অভিযুক্ত নাসির, অমি ছাড়াও তিন তরুণীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

নাসির উদ্দিন মাহমুদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, কুঞ্জ ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান, উত্তরা ক্লাব লিমিটেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (বিনোদন ও সংস্কৃতি), বলছে পুলিশ।

পরীমণির করা মামলায় বলা হয়, আসামি নাসির জোর করে বাদির মুখের মধ্যে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে তার সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এরপর আসামি নাসির পরীমনিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে ও জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। আসামি অমি পরিকল্পিতভাবে পরীমনিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান এবং অপর আসামিরা এ অপকর্মে সহযোগিতা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন